পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩১ যে দিন তিনি দেহত্যাগ করেন, তাহার পূৰ্ব্বদিন শোণিত বমন করিতে করিতে অজ্ঞান ও রুদ্ধবাক হইয়া দিবারাত্রি যাপন করেন, কিন্তু পরদিন অরুণোদয়ে তাহার দেহে কোনরূপ রোগ চিহ্নই লক্ষিত হয় নাই। ঐ দিন এক ব্যক্তি মধু লইয়া উপস্থিত হইলে, তিনি সেই মধুপানে আনন্দার্ণবে ভাসিলেন ও উপস্থিত ব্যক্তিদের সহিত কথা বলিতে বলিতে (অশীতি বৎসর বয়সে) সজ্ঞানে সাযুজ্য লাভ করিলেন । ইহার জীবনের অনেক অদ্ভুত ঘটনা কথক মুখে শুনিতে পাওয়া যায়; সে কথাগুলি সংগৃহীত হইলে এক উপাদেয় পুস্তক হইতে পারে। ۴یے কুবেরাচাৰ্য্য f লাউড়বাসী নরসিংহের পুত্র কুবের তীক্ষ্মবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তাহার পিতা শান্তিপুরে এক বাড়ী করিয়াছিলেন এবং মধ্যে মধ্যে তথায় বাস করিয়া কুবের শান্তিপুরেই শিক্ষালাভ করিয়া তর্কপঞ্চানন উপাধি প্রাপ্ত হন, পরে ময়ুর ভট্টের অন্বয়জাতা লাভাদেবীকে তিনি শান্তিপুরে বিবাহ করেন। বিবাহের পর তাহার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর কুবেরাচাৰ্য গয়াধামে গমন পূৰ্ব্বক পিতৃকৃত্য সমাপ্ত করতঃ শান্তিপুর হইতে লাউড়ে (শ্রীহট্টে) আগমন করেন। তৎকালে লাউড় রাজ্য রাজা দিব্যসিংহের শাসনাধীন ছিল। দিব্যসিংহ কুবেরাচার্যের অগাধ জ্ঞান-গৌরবে বিমুগ্ধ হইয়া তাহাকে স্বীয় মন্ত্রিত্বে নিয়োজিত করেন ॥২৯ রাজমন্ত্রী কুবেরের সুমন্ত্রণা প্রভাবে লাউড় রাজ্য অচিরেই সমৃদ্ধি সম্পন্ন হইয়া উঠে। মন্ত্রী কুবেরের দক্ষতায় রাজা সুখী, জন-হিতৈষণায় প্রজাবৰ্গ প্রফুল্ল অমায়িকতার প্রতিবেশীবর্গ বাধ্য ছিল। কিন্তু কুসুমেও কীট থাকে, কুবেরের মনেও সুখ ছিল না; তাহার কারণ লাউড়ে আসিয়া ক্রমান্বয়ে তাহার ছয়টি পুত্র জাত হইয়া অচিরকাল মধ্যে গতায়ু হয়। তাহার পরে একটি কন্যা জাত হয়, কন্যাটিও ভ্রাতৃগণের পথানুসরণ করে। কুবেরাচার্য্যের এই পুত্ৰগণের নাম যথা—লক্ষ্মীকান্ত, শ্রীকান্ত, হরিহরানন্দ, কুশল, সদাশিব ও কীৰ্ত্তিচন্দ্র।৩০ এত গুলি পুত্রকন্যার মৃত্যু ঘটিলে পিতামাতার মনে কিরূপ ভাবোদয় হয়, তাহা না বলিলেও চলে। কুবেরের আর দেশে থাকিতে ইচ্ছা হইল না, তিনি পত্নীর সহিত শান্তিপুরে চলিয়া গেলেন এবং কিছুকাল উভয়ে তথায় সেই স্থানে অবস্থিতি কালে লাভাদেবীর গর্ভ লক্ষণ প্রকাশ পায়, এই গর্ভজাত সন্তানটি বাচিবে কি না সন্দেহ হওয়া অস্বাভাবিক নহে, কুবের দৈব লাভাশায় নারায়ণের পূজা ও দরিদ্র সেবায় অনেক ব্যয় করিতে লাগিলেন। এই সময়ে কুবের, রাজা দিব্যসিংহের এক পত্র পাইলেন ও দেশে আসিলেন।৩১ কুবের স্বদেশে আগমন করিয়া প্রতিবাসিবর্গের সহিত প্রথমে সাক্ষাৎ করিলেন, তাহারা সকলেই পরম আনন্দিত হইলেন—“সেই গ্রামের লোক তার সম্মান করিলা ।" তার পর রাজার ২৯, "অথো কুবেরঃ সুবিচক্ষণশ্চ ৩১. বিবাহান্তে ক্রমে তার বহু পুত্র হৈল । প্রভুত শাস্ত্রে সুমতিঃ প্রশান্তঃ পুত্ৰগণ মৈলে তবে বিবেক হইল৷ শ্রীলাউড়ং শান্তিপুরাদ্য যোহি তবে গঙ্গাতীরে রম্যে শান্তিপুরে আইলা৷ তদেশে পালেন মুহুঃ সমাদৃত। লাভাসহ কিছুদিন তাহা গোঙাইলা সতর্কপঞ্চানন আৰ্য্য চুড়ো একদিন শ্রীকুবের তর্ক পঞ্চানন। নিত্যাদি শান্ত্রৈবাহভিরভিজ্ঞঃ আকারে জানিলা লাভার গর্ভের লক্ষণ । অদ্রাজ্য পালেন সুশাস্ত্র দর্শিনা হেন কালে রাজপত্রী কুবের পাইলা । দত্তং স্বমন্ত্রিত্ববাপ যত্নং।”—বাল্য লীলা সূত্রম বণিতা সহিতে নিজ দেশে চলিলা । ৩০. বাল্য লীলা সূত্র। —অদ্বৈত প্রকাশ