পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ সহিত দেখা হইল, রাজাও হৃষ্টচিত্তে তাহাকে গ্রহণ করিলেন। রাজা বলিলেন— “মন্ত্রি, তোমার অনুপস্থিতে আমার কার্য্য অচল হইয়া পড়ে, অধিক কি, 'তুয়া বিনা রাজ্যপাট শুন্য করি মানি" " কুবের কিদৃশ দক্ষ মন্ত্রী ছিলেন, ইহাতেই বুঝা যায়। রাজাকে মন্ত্রী যে উত্তর দিলেন, তাহা “দরিদ্র ব্রাহ্মণে দয়া কর নিরবধি । গঙ্গাতীর পুণ্য ভূমি অতি রম্য স্থান। তাহা হইতে আসিবারে মন নাহি ধায় । তবে যে আইনু চলি তোমার আজ্ঞায়॥ ঈশ্বর কৃপায় পুন হইল গর্ভাধান। অদৃষ্টের ফল যেই হয় মূৰ্ত্তিমান।”—অদ্বৈত প্রকাশ । রাজা মন্ত্রী-পত্নীর গর্ভের কথা শুনিয়া সুখী হইলেন। বলিলেন—“এবার পুণ্যস্থানে গর্ভ হইয়াছে সন্তান বাচিতে পারে, আপনে বিজ্ঞ চিন্তা পরিহার করিবেন।” অনন্তর রাজাজ্ঞায় গণক গর্ভফল গণনায় বলিলেন, এ গর্ভে এক দেবরূপী পুত্র সন্তান জাত হইবে, তাহার সন্দেহ নাই। গণকের এ বাক্য সফল হইয়াছিল, সেই গর্ভের পুত্রই কমলাক্ষ (অদ্বৈতাচাৰ্য্য), ইহার কথা ৪র্থ ভাগের প্রথমেই উক্ত হইয়াছে। কুবেরাচার্য তাহার পর দ্বাদশ বৎসর কাল লাউড় রাজ্যের কর্ণধার স্বরূপ ছিলেন, তৎপর মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করিয়া শান্তিপুরে গমন করেন, তথায় তাহার পরলোক গমন ঘটে। এই কেশব বা অজ্ঞান ঠাকুর প্রায় দ্বিশত বর্ষ অতীত হইল, ইটা পরগণার বুড়িকোণা গ্রামের উত্তরাংশে নমঃশূদ্রের ব্রাহ্মণকুলে কেশবের জন্ম হয়, কেশব বাল্যবধিই সন্ধ্যাপূজা-পরায়ণ। শৈশবে রাখালদের সহিত খেলায় উন্মত্ত থাকা বশতঃ বৈষয়িক ব্যাপারে মোটেই কেশবের মন ছিল না। যখন তাহার বয়স ১৮/১৯ বৎসর, তখন পর্য্যন্ত লোকে তাহাকে নিৰ্ব্বোধ বলিয়া গণ্য করিত। সময় সময় কেশবকে যজমানদের বাড়ীতে যাইতে হইত, কিন্তু তাহাতে ফল এই হইত যে, তথা হইতে ব্যাপারে প্রাপ্ত চাল কলাদি লইয়া আসিতে পথেই রাখালগণ কর্তৃক প্রায়ই তৎসমস্ত লুষ্ঠিত হইয়া তাহাদের উদরসাৎ হইত, বাড়ী আসিলে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে তজ্জন্য কেশবকে গালি এবং কখন কখন বা উত্তম মধ্যমও খাইতে হইত। একদিন রাখালগণ কর্তৃক চাউল কলা লুষ্ঠিত হইলে, ভয়ে বাড়ীতে না গিয়া কেশব নিকটবৰ্ত্তী জঙ্গলে চলিয়া যান। সেই জঙ্গলে ব্যাঘ্ৰও মহিষের অভাব ছিল না। কেশব সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত বাড়ীতে না আসাতে আত্মীয়গণ অনুসন্ধানে বাহির হইয়া তাহার বন প্রবেশের সংবাদ শুনিতে পাইলেন, কিন্তু কোথায়ও তাহাকে পাওয়া গেল না। পরদিনও যখন তিনি আসিলেন না, তখন কোনও বন্যজ কর্তৃক নিহত হইয়াছেন বলিয়াই সকলে স্থির করিল। তিনদিন পরে কেশব হঠাৎ বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হারানিধি লাভে আত্মীয়দের আহাদের অবধি রহিল না, কিন্তু তিনদিন তিনি কোথায় ছিলেন, পুনঃ পুনঃ প্রশ্ন করিলেও তাহা বলিলেন না; এই সময় হইতে তিনি দেবতার গৃহ বাস করিতে লাগিলেন ও অল্পভাষী হইলেন। তখন হইতে ইচ্ছা হইলে স্বয়ং পাক করিয়া কিছু খাইতেন, অন্যের পাক করা দ্রব্য খাইতেন না।