পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৩ সকল পুরুষকেই “জেঠা” এবং স্ত্রীলোক মাত্রকেই “জেঠী” সম্বোধন করিতেন, কিন্তু তখনও রাখালদের সহিত পূৰ্ব্ববৎ খেলা চলিত। একদিন খেলিতে খেলিতে রাত্রি হইল, রাখালেরা গরুর জন্য চিন্তা করিতে লাগিল, তখন কেশব সকলের গরু অনায়াসে আনিয়া উপস্থিত করিলেন। আর একদিন খেলায় সেইরূপ রাত্রি হইয়া গেলে, সেদিনও রাখালেরা চিন্তিত হইয়া পড়িল, তখন কাহার কোন গরু কোথায় আছে, রাখালদিগকে একে একে তাহা বলিয়া দিলে, তাহারা তখন অনায়াসে গরু লইয়া বাড়ী আসিল । রাখালেরা কেশবের এই কাৰ্য্যে বিস্মিত হইয়াছিল, তাহারা বাড়ী আসিয়া এই আশ্চৰ্য্য কথা সকলের কাছে প্রকাশ করিয়াছিল। এই সময় হইতেই কেশবের “সিদ্ধির" কথা প্রচারিত হয়; তখন হইতে নানাবিদ রোগী ও বিপদাপন্ন ব্যক্তির সমাগমে কেশবের বাড়ী পূর্ণ হইয়া যাইত। সমাগত ব্যক্তিবর্গও তাহার অনুগ্রহে বিবিধ ব্যাধি হইতে নিরাময় হইত; তাহার হস্ত স্পর্শে কঠিন পীড়াও প্রশমিত হইত বলিয়া কথিত আছে। একদা বুড়ীকোণা বাসী, বিনন্দরাম ধর নামক একব্যক্তি তাহার কাছে আসিলে তিনি বলিলেন—“জেঠা ! তোমার গাছে আম পাকিয়াছে, আমার জন্য আন নাই কেন?” তখন আমের দিন নহে, আমের মুকুলই তখন হয় নাই। কিন্তু বিনন্দরাম বাড়ীতে গিয়া কথিত আম্র বৃক্ষটি দেখিয়াই অবাক! তাহার পুকুরের কিনারে ছোট গাছটিতে যথার্থই পাকা আম ঝুলিতেছে! বলা বাহুল্য সেই পরিপক্ক আম্রগুলি কেশবকে উপহার দেওয়া হইল! এই সময়ে কুতবশাহ নামে খ্যাত জনৈক মোসলমান সিদ্ধ পুরুষ এইস্থানে আগমন করিয়াছিলেন, তিনি ঘটনাক্রমে একদিকে নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ করেন। কেশব ভাব বিশেষে নিবিষ্ট চিত্ত হইয়া তখন বাহ্য জ্ঞান বিরহিত প্রায় ছিলেন, তদবস্থায় তিনি মাটি হইতে উঠাইয়া উক্ত নিষ্ঠীবন গলাধঃকরণ করেন। এতদৃষ্টে কুতব সাহেব তাহাকে “অজ্ঞান" বলিয়া মিষ্ট ভৎসনা করেন। এই সময় হইতে কেশব “অজ্ঞান ঠাকুর" বলিয়া খ্যাত হন। তখন হইতে কুতব ও তিনি উভয়ে একত্রে থাকিতেন । একদা পঞ্চগ্রামের নিকট এই দুই মহাত্মা এক অন্যে কুস্তি করিয়া দাস বংশীয় জনৈক অভিপ্রায়ে ক্ষেত্রে উপস্থিত হইলে কুতব পলায়ন করিলেন, অজ্ঞান ধরা পড়িলেন। অজ্ঞানের পরিচয় প্রাপ্তে ভদ্রলোকটি শাস্তির পরিবৰ্ত্তে ১৩/০ হাল পরিমিত সেই ভূমিখণ্ড তাহাকে অর্পণ করিলেন। এই ভূমি পরে “অজ্ঞানের ছেগা তালুক” বলিয়া বন্দোবস্ত হয়। অজ্ঞান ঠাকুর আদমপুরের পাহাড়ে “বনমালী” নামে এক নৌকা প্রস্তুত করিয়া ঐ নৌকা প্রায় ৪ মাইল দীর্ঘ পথ দিয়া টানিয়া নামাইয়া আনাইয়াছিলেন, ঐ নৌকাটানা পথ “অজ্ঞানের কাড়া বা অজ্ঞানের জাঙ্গাল" নামে খ্যাত আছে। অজ্ঞানের নৌকা নামান উপলক্ষে একটি সারিগান রচিত হইয়াছিল, অদ্যাপি লোকে বলিয়া থাকেঃ– “সবে বল হরি হরি । অজ্ঞানে সোয়ারি নাও যাইত অন্তেহরি॥" অজ্ঞানের বাসস্থানে গ্রাম্য লোকে একটি মন্দির প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিল, উহা অদ্যাপি আছে এবং তাহাতে অজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণ ও শালগ্রাম শিলা বিরাজমান। অজ্ঞানের মন্দির হইতে প্রায় অৰ্দ্ধ মাইল দূরে কাওয়াদীঘী হাওরের নিকট “নুনডুবা” বলিয়া একটা স্থান আছে। প্রবাদ যে, কোন এক মহাজন অজ্ঞানকে লবণ না দেওয়াতে এই স্থানে তাহার লবণ পূর্ণ নৌকা ডুবিয়াছিল; তৎক্ষণাৎ সে প্রবুদ্ধ হইয়া অজ্ঞান ঠাকুরের শরণ লয় ও নৌকা উঠাইয়া ফেলে শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-চতুর্থ ভাগ)-৩