পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ এইবার সে ব্যবসায়ে যথেষ্ট লভ্য করিয়াছিল। অজ্ঞান ঠাকুর যেস্থানে রাখালদের সহিত খেলা করিতেন, তথাকার একটি উচ্চ স্থানকে লোকে “অজ্ঞানের ঢিপি" বলিয়া থাকে। অজ্ঞান ঠাকুর শেষ বয়সে ভেখধারণ করিয়া বৈরাগী হইয়াছিলেন। তিনি সমাজের চক্ষে হীনপদস্থ হইলেও তদীয় আধ্যাত্মিক উন্নতিতে দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ সৰ্ব্বদাই তাহাকে শ্রদ্ধার নেত্রে দর্শন করিতেন। উপযুক্তের সম্মান দিতে হিন্দু কখনও কুষ্ঠিত হয় না, শ্রদ্ধা জাতিকুল অপেক্ষা করে না। শমশের নগরের চৌধুরীও কানুনগোবর্গ অজ্ঞান ঠাকুরের সেবা পরিচালনার জন্য ১১৬৪ সালে তাহাকে কতক ব্ৰহ্মত্রভূমি দান করিয়াছিলেন।৩২ অজ্ঞান ঠাকুর সৰ্ব্বজীবন সমদশী ছিলেন, যে কোন জাতীয় সাধু ব্যক্তিকেই তিনি শ্রদ্ধা করিতেন। তিনি সৰ্ব্বদাই হরি সঙ্কীৰ্ত্তন করিতেন। শেষাবস্থায় তাহার কাছে এতবেশী সংখ্যক লোক ঔষধাদির জন্য আসিতে আরম্ভ করে যে, তিনি একটু মাত্র সময় একাকী থাকিবার অবকাশ পাইতেন না। এইরূপে জনসমাগমে ক্রমাগত উপদ্রুত হইতে থাকিলে, একদা প্রভাতে যখন বহুলোক সমবেত হইল, তখনও তিনি মন্দির হইতে বাহির হইলেন না; তখন নিরাশ চিত্তে সমাগত ব্যক্তিবর্গ চলিয়া গেল। পরদিনও তিনি মন্দির হইতে বহির্গত বললেন না; এইরূপে সাত দিন গেল, মন্দিরের দ্বার সাত দিনই রুদ্ধ রহিল; অষ্টম দিবসে সকলে পরামর্শ করিয়া দ্বার ভগ্ন করিয়া ফেলিল ও দেখিতে পাইল যে গৃহ শূন্য রহিয়াছে এবং একদিকে একটা গভীর গৰ্ত্ত হইয়া গিয়াছে; এই গত দৃষ্টে সকলেই সাধুর সংগোপন অনুমান করিয়া লইল । কেশব লাল গোস্বামী কেশব লাল জনতরির স্বর্ণ কৌশিক গোত্রীয় ব্রাহ্মণকুলে জন্ম গ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম রতিনাথ। রতিনাথ সংসার স্পৃহা রহিত ছিলেন এবং দেবাচ্চনায় সদা রত রহিতেন।৩৩ বাল্যকাল হইতেই কেশব লালের চরিত্রে যে চিত্র প্রকটিত হয়, কেশব যে একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, জন্মান্তরীন যোগসিদ্ধি যে বাল্যাবধি তাহাতে বিকশিত হইয়াছিল, তদীয় বাল্য চরিত্র দৃষ্টে সকলেই তাহা বুঝিয়াছিল এবং তজ্জন্য বাল্যাবধিই তিনি আদৃত ও ভক্তিপাত্র রূপে পরিগণিত হইয়াছিলেন । যখন কেশব লাল ৪/৫ বৎসরের বালক, তখন জনৈক প্রতিবেশী একছড়া কাচা কলা তদীয় পিতৃপূজিত শ্রীধর দেবতাকে ভেট দিয়াছিল। এই কদলী দেখিয়া শিশু কেশব কদলীর লোভে কাদিতে থাকেন। নিকটে ২/৩ টি স্ত্রীলোক ছিল, দেবতার জন্য অগ্রভাগ রাখিয়া একটি কদলী শিশুকে দিতে তাহারা বলিলে কেশব-জননী পুত্রের হাতে কটি কদলী দেন। কথিত আছে যে স্ত্রীলোকেরা দেখিয়া বিক্ষিত হইয়াছিল যে, কেশবের হাতে থাকিতে থাকিতে কাচা কলা পাকিয়া উঠিয়াছিল। এ কথা গ্রামে প্রচারিত হইলেই শিশুকে পূৰ্ব্ব সিদ্ধ মহাত্মা জ্ঞানে সকলে ৩২. উক্ত দান পত্রের প্রতিলিপি এইঃ– “ইয়াদিকিদ শ্রীঅজ্ঞান দাস বৈষ্ণব সাকিন পরগণে সমসের নগর সদাসয়েষ্ণু লিখিতং শ্রীচেীরধুরআন ও কানুনগৈ আন পং মজকুর পত্র মিদং কাৰ্য্যঞ্চ আগে—আমরা পরগণা মজকুরে কেশবরাম পণ্ডিত তালুক কিং বিবাইবাদ ও মং...আষ্ট কাহন দুই পন লেখা যায় এ হার উৎপন্ন জমার কামাল মবলগ ২১ ੱੇ এই মবলগ মজকুর আমরার পরগণ কিস্তি হনে হাকিম পাইলাম তুমাকেও মিনা করিয়া দিলাম তুমি হাকিমের সনদ হাসীল করিয়া :::::::::::: করিয়া দিলাম। সন ১১৬৪ তারিখ ২০ । ৩৩. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ ৪ৰ্থ খঃ ৩য় অধ্যায় দেখ।