পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৯ প্রতি বিরক্ত না হইয়া সন্তুষ্ট হইলেন। সেবার আর তাহার “প্রবাসে” যাওয়া হইল না, বিবেকের তীব্র তাড়নার গৃহে ফিরে চলিলেন। গোরাচাদ সহজ ধৰ্ম্ম প্রচারক শ্যাম কিশোর ঘোষের8২ কন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, গৃহে গিয়া পত্নীর কাছে অকপটে চিত্তে সেই শিষ্য পত্নীর ভর্ৎসনার কথা বর্ণন করিলেন এবং এই অপমানে গৃহ ত্যাগের বাসনা করিলেন। গোরাচাদের পত্নী পরম বুদ্ধিমতী ছিলেন, নানা উপায়ে তিনি পতিকে স্থির করিয়া আপন পিতার নিকটে তাহাকে পাঠাইলেন। গোরাচাদ শ্বশুড়ের নিকটে অনেকদিন অবস্থান করিলেন। সহজ ধৰ্ম্মের প্রতি তাহার অনাস্থা ছিল, সেই স্থানে থাকিয়া তিনি বুঝিলেন যে, তাহার ন্যায় ইন্দ্রিয়াশক্ত পুরুষ সহজ ধৰ্ম্মের নিন্দাবাদ করা উচিত নয়, এবং এই ধৰ্ম্মের সাধনায় উদম পরিহার করিয়া মন অনেকটা সাম্যাবস্থা প্রাপ্ত হয়। গোরাচাদ কাজেই সহজ ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিলেন । সে যাহা হউক গুরুগণের কিরূপ সতর্ক থাকিয়া চলা উচিত, অসতর্ক গুরু গোরাচাদের চরিত্র চিন্তা করিলে তাহা বুঝিয়া লওয়া যায়। গোবিন্দ চরণ দাস গোবিন্দ চরণ দাস শ্রীহট্টীর সাহু বংশ সম্ভুত গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দের মার্চ মাসে শহরের রায় নগর মহল্লায় তাহার জন্ম হয় । গোবিন্দ চরণ তিন বৎসর বয়সে পিতৃহীন হন; তাহার মাতা পুত্রকে সংস্কৃত পড়াইবার বন্দোবস্ত করেন। বালক অধ্যবসায় সহকারে অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হইয়া ব্যাকরণাদিতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতঃ ব্যাকরণের তর্কে কখন কখন ব্রাহ্মণদিগকেও ঠেকাইতে কুষ্ঠিত হইত না । ইহাতে কোন কোন ব্রাহ্মণ তাহার মাকে বলেন যে গোবিন্দ চরণের সংস্কৃত অধ্যয়ন বন্ধ না করিলে তর্কে পরাভূত কোন ব্রাহ্মণের অভিশাপে অনিষ্ট হওয়া অসম্ভব নহে; পুত্রের ভবিষ্যৎ বিপদাশঙ্কায় মা ছেলের টোলে যাওয়া বন্ধ করিয়া দেন। তখন গোবিন্দ চরণের বয়স তের বৎসর মাত্র। এই সময় দৈবক্রমে একজন মিশনারীর সহিত তাহার দেখা হইল। তিনি তাহাকে ইংরেজী পড়িতে পরামর্শ দেন । তৎকালে ইংরেজী শিক্ষায় প্রেরণ করা একরূপ সমাজ বিদ্রোহিতা বলিয়া বিবেচিত হইত; ইংরেজী শিক্ষিতেরাও প্রায়তঃ খ্ৰীষ্টিয়ান হইয়া যাইত। তদবস্থায় অনেকেই এ প্রস্তাবে অসম্মত হইলেও গোবিন্দ চরণের অত্যগ্রহে শেষে তাহার মাতা পুত্রকে ইংরেজী পড়িতে অনুমতি দিলেন। ইংরেজী শিক্ষায় তাহার অনুরাগ শতগুণে বৰ্দ্ধিত হইল, সাহেব শিক্ষক তাহার পরিশ্রম ও প্রতিভা দর্শনে পরম প্রীত হইলেন। গোবিন্দ চরণ ছয় বৎসর কাল ইংরেজী অধ্যয়ন করিয়া অতি সুখ্যাতির সহিত জুনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বৃত্তি ও দুইটি মডেল প্রাপ্ত হন। গোবিন্দ চরণ তখন চাকুরী গ্রহণে অনুরুদ্ধ হন, কিন্তু তিনি অধ্যয়ন ত্যাগে স্বীকৃত না হইয়া ঢাকায় গিয়া ইংরেজী পড়িতে চাহিলেন। তৎকালে রেল বা ষ্টিমারে দূরদেশে যাইবার সুবিধা ছিল না, নৌকাপথে যাইতেও ডাকাতের বিশেষ ভয় ছিল। তদবস্থায় মা কোন প্রকারেই পুত্রকে একা পাঠাইতে না পারিয়া তাহার সহিত ঢাকায় চলিলেন। তথায় দুই বৎসর অধ্যয়নের পর গোবিন্দ চরণ সিনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া গৃহে আসিলেন। এতদূর পড়িয়াও গোবিন্দ চরণ যে খৃষ্টান হন নাই, তদৃষ্টান্তে শহরবাসীর মন হইতে ইংরেজী শিক্ষার প্রতি বিদ্বেষ বহু পরিমাণ দূর হয়। দেশে আসিবার পর গোবিন্দ চরণ কিছুদিন ময়মনসিংহের জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন, ৪২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ ৩য় খণ্ড ৮ম অঃ দেখ । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-চতুর্থ ভাগ)-৪ :