পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫১ কৃষ্ণ হরি বিশারদ কাশীধামস্থ সমগ্র বাঙ্গালি সমাজের নেতা ছিলেন; এবং তৎপুত্র গঙ্গাহরি বিদ্যারত্নও তাদৃশ হইয়াছিলেন। ইহাদেরই সমকালীন গৌরহরি চক্রবর্তী সমগ্র বঙ্গীয় ও হিন্দুস্তানী উকিল বর্গের মধ্যে একজন প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কাশীধামে প্রকাও বাড়ী এবং প্রভূত্ব সম্পত্তি উপাৰ্জ্জন করিয়া গিয়াছেন। তাহার ন্যায় প্রতিভাবান ব্যক্তি স্বগীয় কাশীধামে খুব কমই ছিল; তিনি আজীবন সমগ্র কাশীবাসীর সম্মানভাজন হইয়া আজ প্রায় দ্বাদশ বর্ষ হইল, পরলোক গমন করিয়াছেন । গৌরী চরণ দাস ইংরেজ আমলের প্রথম সময়ে শ্রীহট্টের অন্তর্গত লাতু গ্রামে একটি মোসেফ আদালত ছিল; লাতুর সাহু বংশীয় লালা মহেশ রাম সেই আদালতে উকালতি করিতেন। লালার মৃত্যুর পর তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র গৌরী চরণ পিতৃপদ প্রাপ্ত হন। তখন উকালতির সনদপত্র ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হওয়া যাইত। গৌরীচরণ পারস্য ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, অচিরেই তিনি স্বীয় ব্যবসায়ে লব্ধ প্রতিষ্ঠ হইয়া উঠেন; পারস্য ভাষায় তাহার এরূপ জ্ঞান ছিল যে, দূর দূরান্তের পারস্য ভাষাবিৎ পণ্ডিতগণ তাহার সহিত আলাপ করিয়া তৃপ্তি অনুতপ্ত করিতেন। লাতুর সন্নিকটবৰ্ত্তী ভোগা-গ্রামবাসী মৌলবী আব্দুল গফুর চৌধুরীর বাড়ীতে তুরস্কবাসী জনৈক মৌলানা যদৃচ্ছা ক্রমে আগমন করেন, মৌলানা অতি বিদ্যান ও ভদ্র বংশীয় ছিলেন। ইহাকে সম্বৰ্দ্ধনার জন্য চৌধুরী, মুন্সেফার এলাকায় তাবৎ পারস্য ভাষাবিৎ পণ্ডিতকে নিমন্ত্রণ করেন। নির্দিষ্ট দিনে তাহার বাড়ীতে একটি সভা সম্মিলিত হয়, সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে গৌরীচরণ উপস্থিত না হওয়া পৰ্য্যন্ত কেহই সেই বিদেশী মৌলানার সহিত আলাপ করিতে সাহসী হন নাই। সভার সকলেই তুষ্ণীভুত হইয়া রহিয়াছেন, এমন সময় গৌরী চরণ উপস্থিত ন, দেশীয় মৌলবী বর্গের মুখ প্রফুল্ল হইল এবং মোনশীকে মৌলানা সহ আলাপের জন্য ইঙ্গিত করিতে লাগিল। মোনশী তৎক্ষণাৎ একটি পারস্য কবিতা রচনা করিয়া আবৃত্তি করিলেন। কবিতার মৰ্ম্ম এই— “এই বিদ্বৎ সভায়, যে সুপুরুষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ পূৰ্ব্বক শোভমান হইতেছেন, তিনি কে কোথা হইতে কি হেতু এস্থলে উপনীত হইয়াছেন।" এই প্রশ্নোপলক্ষে আগন্তুক মৌলানা আপন বিবরণ বিবৃত করেন। তিনি মোনশী মহাশয়ের সহিত আলাপে মোনশীর জ্ঞানের পরিচয় পাইয়া ও শিষ্টাচারে এরূপ মোহিত হন যে, সেই সভায় স্পষ্ট বাক্যে বলেন যে, তাদৃশ উপস্থিত কবি সুবক্তা ও পণ্ডিত তাহার দৃষ্টিপথে বড় পতিত হন নাই; তিনি ইহাও বলেন যে ইহার সহিত পরিচিত হওয়ায় তাহার এদেশে আগমনের সার্থকতা হইয়াছে। গৌরীচরণ যেমন সুপুরুষ ছিলেন, তাহার দেহায়তন ও তদ্রুপ সৌষ্টব সম্পন্ন ছিল, তাহার শারীরিক সামর্থ্যের ন্যায় আহারও ছিল । সরু দানার তণ্ডুল তিনি ভালবাসিতেন না, লম্বা দানা লাল চাল তাহার মুখ-রোচক ছিল, প্রতিবেলা তণ্ডুলের অন্ন ভোজন করিতেন। একদা শ্রীহট্টের সুপ্রসিদ্ধ “বাবু” মুরারি চাদ রায়৪৪ তাহাকে ঝুলন উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করিলে তিনি যখন আহার করিতেছিলেন, সৌজন্য প্রদর্শনার্থ “বাবু" তাহাকে বলেন—“মোনশী মহাশয় আওয়াজন সামান্য, পরিশ্রম মাত্রই সার হইল।” মোনশীর আহারের পরিমাণ না জানাতে পরিবেশক অন্যান্যোর ন্যায় তাহাকেও পরিবেশন করিতেছিল, তাই তিনি ৪৪. বাবু মুরারী চাদের কথা পরে কীৰ্ত্তিত হইবে।