পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ পরিপক্ক আমিষ এক রতিও নাই ॥৫১ এইরূপে তাহার দৈব শক্তির পরিচয় পাইয়া পীর সাহেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন, এবং উভয়ের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। তদবধি চন্দন ঠাকুর দাউদ নগরে প্রায়শঃ যাইতেন। চন্দনের সাংসারিক অবস্থা ভাল ছিল না বলিয়া পীর সাহেব "কর্শা" মৌজায় তাহাকে কতক ভূমি দিতে ইচ্ছা করেন; তিনি তাহা গ্রহণ করিতে অস্বীকৃত হন এবং বলেন—“সম্পত্তি ইষ্ট সাধনে অনিষ্ট করিয়া থাকে, ব্রাহ্মণের তাহাতে প্রয়োজন কি?” চন্দন পীর বাদশার বন্ধু বলিয়া পরিচিত হইলে, তাহার নাম মোসলমান সমাজেও পরিজ্ঞাত হইয়া পড়িল। কথিত আছে, একবার অনাবৃষ্টি হইয়া ছিল ও বহুলোক তাহার কাছে আসিয়া বারিপাতের উপায় করিয়া দিতে প্রার্থনা করিয়াছিল । তিনি সমাগত লোক দিগকে বলেন—“বিধাতার ইচ্ছা হইলে বৃষ্টিপাত হইবে, আমি কি করিব? তোমরা সকলে ভগবানকে ডাক, এখনই বৃষ্টিপাত হইতে পারে।” চন্দন ঠাকুরের এই কথা পরেই বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। যখন চন্দন ঠাকুরের মৃত্যু হয় পীর বাদশা তখন ক্ষৌরি করিতে বসিয়াছিলেন, তিনি নাপিতকে বলিয়া উঠেন—“বন্ধু অপেক্ষা করিতেছেন শীঘ্ৰ ক্ষৌরি শেষ কর ।” তৎক্ষণাৎ তিনি বন্ধু দর্শনে যাত্রা করেন। চন্দনের ভ্রাতা রাম চন্দ্রের পুত্রের নাম শ্যামানন্দ এবং বলাইর পুত্রের নাম গঙ্গাধর । ইহারা নবদ্বীপের বুড়শির তলায় সিদ্ধি লাভ করেন। খুল্লতাতের মৃত্যুর পর দুই ভাই দেশে আসিয়া তদীয় অভাব পূর্ণ করেন। ইহারা “রাগিনী সিদ্ধ ছিলেন; কথিত আছেন যে যখন তাহারা মল্লার রাগিনী আলাপ করিতেন তখন মেঘাড়ম্বর হইত। ইহাদের এই গুণের কথা শুনিয়া বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ান উমেদ রাজা ভ্রাতৃদ্বয়কে আহবান পূৰ্ব্বক দ্বিপ্রহর রৌদ্রের মধ্যে মেঘ আনিতে বলিয়াছিলেন এবং শুনা যায় যে তাহারাও উভয়ে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। এই জন্য তাহারা দেওয়ান হইতে প্রচুর পরিমিত পারিতোষিক ও ৩/২। ভূমির বাড়ী ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। শ্যামানন্দ বিরচিত দেবী বিষয়ক বহুতর সঙ্গীত আছে। এখনও কালী পূজাদিতে বলিদানের সময় যে “রণগীতি” হয় তাহাতে দ্বিজ শ্যামানন্দের ভণিতা শুনা যায় । চন্দ্রনাথ নন্দী ইনি বাণিয়াচঙ্গ নিবাসী । ইনি আসাম সেক্রেটারিয়েটে বিচক্ষণতার সহিত কাজকৰ্ম্ম করিয়া যে সুখ্যাতি অৰ্জ্জন করিয়াছিলেন, তনিমিত্তে আজিও "সিলেট ক্লার্ক” দেব নাম সাহেবদের নিকট সমাদৃত আছে। তাহারই নেতৃত্বে রায় সাহেব শ্ৰীযুক্ত প্রকাশ চন্দ্র দেব, শ্ৰীযুক্ত সৰ্ব্বনন্দ দাস (ই এ সি) বাবু শরচ্চন্দ্র ধর, রায় বাহাদুর সারদা চরণ দাস, রায় সাহেব রক্ষিনী কান্ত গুপ্ত, শ্রীযুক্ত দীন নাথ দাস ও কৈলাশ চন্দ্র দাস এবং শরচ্চন্দ্র ভট্টাচাৰ্য প্রভৃতি সুখ্যাতির সহিত কৰ্ম্ম করিয়া শ্রীহট্টের গৌরব বৃদ্ধি করিয়াছেন ও করিতেছেন। "নদী বাবু” পশ্চাৎ ই এ সি হন। কালেক্টরির কার্য্যে তাহার ন্যায় দক্ষলোক দৃষ্ট হয় না। ইনি অতি নিৰ্ম্মল চরিত্রের লোক ছিলেন, সেরেস্তা হইতে ঘুষখেরের দল তাড়াইয়া এক সুদৃষ্টান্ত প্রদর্শন করিয়া ছিলেন। তেস্বিতা, দেশ বাৎসল্য, স্বধৰ্ম্ম পরায়ণতা ইত্যাদি গুণে তিনি বিভূষিত ছিলেন। ৭১ বৎসর বয়সে ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে তাহার কাশী প্রাপ্তি ঘটে। চন্দ্রনাথ নন্দী মজুমদার ইটাখলার নদীবংশ ইহার জন্ম; (শ্রীঃ ইঃ ৩য় ভাঃ ৪র্থ খঃ ৫ অঃ বেজোড়ার নদী বংশ কথার ৫১_এইরূপ কথা অন্যত্রও শুনা গিয়াছে। অমাবশ্যায় চন্দ্রোদয়, মৃন্ময়ী কালীপ্রতিমাতে শানিত প্রদর্শন প্রভৃতি বিনয়ের ন্যায় এই ঘটনাও বহু সাধক চরিত্রের সহিত জড়িত রহিয়াছে।