পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ঘটিয়াছিল বটে, কিন্তু জগদীশ কি তদেশ বাসী ছিলেন? মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত রাজ শ্রীযুক্ত যাদবেশ্বর তর্করত্ন মহাশয় ১৩২১ বাং পৌষ মাসের ভারতবর্ষে (২য় বর্ষ ২য় খঃ) একাদশী তত্ত্ব প্রস্তাবে ৯১ পৃষ্ঠায় বলিয়াছেন—“আপনি বাঙ্গাল বলে কাকে অবজ্ঞা কচ্ছেন বাঙ্গাল নিয়েইত নবদ্বীপ। জগদীশের বাড়ী ছিল সিলেটে। গদাধরের বাড়ী ছিল রংপুরে। রঘুনাথ রঘুনন্দনের বাড়ী যে কোথায় ছিল, ঠিক করে বলতে না পাল্লেও আমার মনে হয়, তারাও বাঙ্গাল ছিলেন।” প্রেম বিলাস নামক বৈষ্ণব গ্রন্থে লিখিত আছে—“শ্রীহট্ট নিবাসী দুর্গাদাস মহামতি।” ইহার সনাতন ও পরাশর নামে দুই পুত্র হয়, সনাতন মিশ্র একজন পণ্ডিত ছিলেন, ইহার পুত্র যাদবমিশ্র ও একজন নৈয়ায়িক; যাদবের ৩য় পুত্ৰই জগদীশ। জগদীশ শিরোমণি কৃত দীধিতি প্রভৃতির টিপ্পনী, গঙ্গেশোপাধ্যায় জগদীশ। জগদীশ শিরোমণি কৃত দীধিতি প্রভৃতির টিপ্পনী, গঙ্গেশোপাধ্যায় কৃত অনুমান ময়ূখের ভাষ্য, দ্রব্য ভাষ্যের ও লীলাবতীর টীকা প্রভৃতি প্রণয়নে অমরত্ব লাভ করিয়াছেন। এতদ্ব্যতীত “শব্দশক্তি প্রকাশিকা” ও “তর্কামৃত” নামে দুইখানা মৌলিক গ্রন্থ তাঁহারই কৃত। প্রথম খানি মুদ্রিত হইয়া এম এ পরীক্ষার সংস্কৃত পাঠ্য নির্দিষ্ট হইয়াছিল। “নবদ্বীপ মহিমা” নামকগ্রন্থে ইহাদের কথা বিস্তারিত লিখিত হইয়াছে। জগদীশ পণ্ডিত এই জগদীশ পণ্ডিত শ্ৰীমহাপ্রভুর প্রায় পিতৃবয়স্ক ও পরম পণ্ডিত ছিলেন। নিমাইর বাড়ীর পার্থেই তাহার গৃহ ছিল। ইনি পরম সাধু ব্যক্তি ছিলেন। এক একাদশীতে শিমু নিমাই ইহার প্রস্তুত নৈবেদ্য ভক্ষণ জন্য ক্ৰন্দন করিতে থাকেন। জগদীশ নিমাইর ক্ৰন্দন শুনিয়া দেখিতে আসেন। নিমাইকে দেখিয়া তাহার বালগোপাল বলিয়া মনে হইল ও তৎক্ষণাৎ তিনি বিষ্ণুর জন্য প্রস্তুত নৈবেদ্য আনিয়া প্রদান করিলেন, নিমাই শান্ত হইলেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর চরিত্রে উপসংহারে ইহার কথা কিঞ্চিৎ উল্লেখ করিয়াছি। ইনি মহাপ্রভুর একজন পার্ষদ ভুক্ত ছিলেন এবং এদেশে হইতে নবদ্বীপে—মায়াপুরে গিয়া শ্রীহট্টবাসী অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সহিত একত্রে বাস করেন। “জগদীশ ইনি নবদ্বীপ হইতে ষশোড়া গ্রামে গমন করিয়া জগন্নাথের সেবা প্রতিষ্ঠা করেন ও তথায় অবস্থিতি করেন। জগন্নাথ বৈদ্য জগন্নাথ বৈদ্য কৃত "শ্রীচৈতন্যের পাঁচালী” নামে একখানা ক্ষুদ্র পুস্তিকা পাওয়া গিয়াছে; এই পাঁচালীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সেবা-ভোগ কি ভাবে দেওয়া কৰ্ত্তব্য, তাহাই লিপিবদ্ধ হইয়াছে। ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে যে জনৈক রাজা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সেবা ভোগ সম্বন্ধে এক স্বপ্নদর্শন করেন এবং জগন্নাথ বৈদ্য দ্বারা তাহা লিখাইয়া রাখেন, ইহাতেই পাঁচালীর উৎপত্তি হয়। গ্রন্থকার যে শ্রীহট্টবাসী ছিলেন এবং সম্ভবতঃ ঢাকাদক্ষিণের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সেবার বিবরণ ও রীতি বর্ণিত করাই যে তাহার উদ্দেশ্য, ইহা অনায়াসেই বুঝা যায়। ঢাকাদক্ষিণের “বেজের পাড়া" নামক স্থানে পূৰ্ব্বে বৈদ্য জাতীয় লোকের বাস ছিল। গ্রন্থকার লিখিয়াছেনঃ “বিদ্যাপুর হৈতে যে সাধুজন আইলু দেশ ভাষা মতে গ্রন্থ লেখিয়া আনিনু॥ সাধু জন দ্বারায় গ্রন্থ আনিল এথাতে । নিজ ভাষা মতে লিখি রাখে জগনাথে॥ জগন্নাথ নামে মূঢ়-গৌরদেশে স্থিতি। স্বপ্রহনে (?) সে চৈতন্যে পদে রহুক ভকতি॥