পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ফলতঃ ইহা তাহার ধর্মের মূলমন্ত্র স্বরূপ হইল। জগন্মোহনের গৃহে ফিরিবার ইচ্ছা ছিলনা, মনে করিয়াছিলেন যে, রথে জগন্নাথ দর্শনান্তে রথচক্রে প্রাণদান করিবেন। কিন্তু তাহা হইল না; দেশে গিয়া দেশের লোককে জ্ঞান দান করিতে, গুরু মুরারিজী দৃঢ়ভাবে তাঁহাকে আদেশ দিলেন। গুরুর আদেশে জগন্মোহন দেশে আসিলেন কিন্তু না গিয়া মাছুলিয়ার বিজনবনে বিরলে বসিয়া ভজন করিতে লাগিলেন। শশধর উদিত হইলে তদীয় জ্যোতিরেখা চতুর্দিকে আপনা হইতেই বিকীর্ণ হইয়া পড়ে; জগন্মোহনের সংবাদ গোপনে রহিল না। অচিরেই নানা স্থানের সাধু সন্ন্যাসীর আগমন ঘটিতে লাগিল, সুধারাম নামে এক নাগাসন্ন্যাসী একশত সাধু সহ আশ্রমে আসিয়া দেখিলেন যে, কোন দেবমূৰ্ত্তি নাই । তিনি এই বিষয় প্রশ্ন করিলে গোসাই বলিলেন “বৈষ্ণব ভগবানের বিগ্রহ, স্বতন্ত্র বিগ্রহের প্রয়োজন কি?” ইত্যাদি। কোন পৰ্ব্ব উপস্থিত হইলে শিষ্যগণ “চতুর্দিকে আলিঙ্গ (লম্বাগৃহ) নিৰ্ম্মাইল, ও তাহার মধ্যে দোল মঞ্চ স্থাপন করিল; তৎপরে শিষ্যবৰ্গ তাহাকেই পূজা করিল। ইহাতে ব্রাহ্মণবর্গ অতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন, এমন কি তাহারা এ ধৰ্ম্মবিগর্হিত কার্য্যের প্রতিকার জন্য আমিলের কাছে নালিশ করিলেন। গোসাই আমিল সদনে উপস্থিত হইয়া বুঝাইলেন, আত্মাই ব্রহ্ম, শিষ্যদের তদ্রুপ পূজা দোষাবহ হয় নাই; ইত্যাদি। ফলতঃ জগন্মোহনের খ্যাতি চতুর্দিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল, দেশপতি সুলতানশীর মোসলমান ভূস্বামীও তাহার পক্ষপতি হইয়া পড়িলেন (৫৮ ইহাতে তদীয় মহিমা আরও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইল এবং ভক্তবর্গ জুটিতে আরম্ভ করিল। গোবিন্দের সঙ্গীত এই সময়ে তাহার আদি শিষ্য গোবিন্দ গোসাই তাহার নিকট আগমন করেন; গোবিন্দ রাটিশাল বাসী; ও সাহাবংশীয় ছিলেন।৫৯ গোবিন্দ ধ্যান-মগ্ন জগন্মোহনের নিকট উপস্থিত হইয়া দীক্ষিত হইতে চাহিলে, মাছুলিয়ার বিজন বনে জগন্মোহন গোবিন্দকে পরব্রহ্ম সম্বন্ধে উপদেশ দিয়া গুরুতত্ত্বের মাহাত্ম্য বিশদ ভাবে বর্ণন করেন। তুলসী পত্রের ও গোময়ের পবিত্রতা সম্বন্ধে জগন্মোহন বিশ্বাসী ছিলেন না, তিনি অদ্বৈত ব্ৰহ্মবাদী ছিলেন জগন্মোহন ভাগবতকার বলেন তিনি— “দেব বিধি মত যত পরিত্যাগ কৈল । কেবল অভেদ পরমার্থ প্রচারিল৷” ইত্যাদি গোবিন্দ গোসাঞি জগন্মোহনের মতানুযায়ী যে সকল সঙ্গীত রচনা করেন, জগন্মোহনী সম্প্রদায়ে তাহা “নিৰ্ব্বাণ সঙ্গীত” নামে উক্ত হয় ॥৬০ ইহার পর হরি সেম, রামনারায়ণ, মুরারিদত্ত প্রমুখ শত শত লোক আসিয়া তাহার নিকট উপদেশ গ্রহণে ঐ মতে প্রবিষ্ট হয়, হিম্মত খা ও বাহাদুর খা মনসুর খা নামক তিন জন মোসলমানও তাহার মত গ্রহণ করিয়াছিল; যথাঃ– ৫৮. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ২য় ভাঃ ৪ৰ্থ খঃ ৬ষ্ঠ অধ্যায় ইহার বিবরণ বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। ৫৯. জগন্মোহন ভাগবত মতে ইহার নাম গোবিন্দ বল্লভ নাগ, তাহার পিতার নাম গৌরী বল্লাভ নাগ । ৬০. উদাহরণ স্থলে তিনটি নিৰ্ব্বাণ সঙ্গীত নিম্নে উদ্ধৃত হইলঃ (১) “বজহে পরব্রহ্ম থাকিবা আনন্দে । কিশের কারণে ভাই লাগি রৈলা ধন্ধে৷ পূৰ্ব্বে না ছিল কেহ না থাকিবে পাছে। মিছা মায়া সংসারে ভ্রমেতে ভুলিয়াছে। আপনার প্রাণ পুনি নহে আপনার । পিতা মাতা সুত কান্তা কেমনে তোমার। দেখ শুকদেব নারদ প্রহাদ সনাতন । বিচার করয়ে আর মাত মুনিগণ৷ আরো, সৰ্ব্ববেদে সৰ্ব্বশাস্ত্রে করেছে নির্ণয়। গুরু বিনে তরাইতে কেহ না পার৷ ওহে বৈরাগোয় পরে ধৰ্ম্ম নাহি কদাচিত । বলেন গোবিন্দ দাস নুই ভবে বঞ্চিত।”