পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৩ “মনসুর খার নাম হৈল মনোহর দাস, হিম্মত খার হইল নাম হৃদানন্দ দাস৷ বানেশ্বর দাস নামাবাহাদুর খার হৈল। সৰ্ব্ব পরিত্যাগী ভিনে বৈরাগী করিল॥”—জগন্মোহন ভাগবত । বলা গিয়াছে জগন্মোহন যখন শ্ৰীক্ষেত্রে যখন শ্ৰীক্ষেত্রে গমন করেন, তখন তাহার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। সেই গর্ভে যথা কালে দুইটী যমজ পুত্র জাত হয়, ইহাদের নাম শ্যাম ও তাহারা কিছুই বলিতে পারিত না, তাহাদের মুখ মলিন হুইয়া যাইত; ইহাতে অজ্ঞাত পিতার প্রতি তাহাদের বড়ই অনুরাগ জাত হয়। বালক দুটি পরে যখন জানিতে পারিল যে, মাছুলিয়ার জঙ্গলে তাহাদের পিতা ফিরিয়া আসিয়াছেন, তখন তাহারা অতিশয় আনন্দিত হইল ও তাহার কাছে গমন করিল। নির্লিপ্ত জগন্মোহন তাহাদিগকে তথা হইতে বিদায় করিয়া দিলেন কিন্তু তাহারা কোনরূপেই পিতৃসঙ্গ পরিত্যাগ করিয়া আসিতে চাহিল না।৬১ গোবিন্দ গোসাঞি পিতা পুত্রের এই ব্যবহার দৃষ্টে পুত্রদের পক্ষপাতী হইয়া পড়িলেন ও তাহাদিগকে শিষ্য করিযা রাখিতে একান্ত অনুরোধ করিতে লাগিলেন। প্রিয় শিষ্যের একান্ত অনুরোধ গুরু একবারে অগ্রাহ্য করিতে পারিলেন না, অগত্যা মন্ত্র দেওয়ার ভার তাহাকেই দিলেন; তখন শ্যাম গোবিন্দ হইতে মন্ত্র পাইয়া শান্ত গোসাঞি নামে খ্যাত হইলেন। সুদাম গৃহী রহিলেন, তদ্বংশীয়গণ এখনও বাঘাসুরাবাসী। জগন্মোহন ১৪৮১ শকাব্দে৬২ দেহত্যাগ করেন। ইহার জীবন সম্বন্ধে বিবিধ আলৌকিক কথা বর্ণিত আছে। (২) “ভাবের বন্দো, ভাবের বন্দো পতিতের বন্ধু তুমি হে। প্ৰভু তোমার লাগিয়া প্রাণ দিতে চাই আমি হে॥ রূপ দেখ, ধাতু মূৰ্ত্তি পাষাণ না হও । সৰ্ব্ব ঘটে আছ তুমি কাকে নাহি ছও৷ ঢাকিয়া আছ হে প্রভুর সৰ্ব্ব কলেবর । স্বৰ্গ মৰ্ত্তা রাখিয়াছ উদর ভিতর॥ অংশ বিন্দু কলা নহ অক্ষরের পর । বলেন গোবিন্দ দাস সব ভাইর ভিতর॥ (৩) “গুরু দেবের চরণ শরণ লওযে ভাই ভব সিন্ধু তরিতে তরণী আর নাই৷ মহা অন্ধকার ধন্ধু গুরু না ভজিলে । অন্ধ মীন থাকে যেমন অন্ধকূপ জলে৷ পশু পক্ষী থাকে যেমন ডিম্বের ভিতর। মনুষ্য দুৰ্ল্লভ জন্ম বৃথা গেল মোর সাফল্য জীবন যার গুরু যেই ভজে । অগম্য গমিতে পারে অনাহত বুঝে৷ অভাব ভাবিতে পারে অমূল্য মিলায়। আনন্দ পূর্ণিত তনু ভাব সিদ্ধি হয়। আপনার নিজ গৃহে পায়স তেজিয়া । দুৰ্ম্মতি ফিরয়ে যেন ভিক্ষা বিচারিয়া। এতকে জানিয়া ভাই হও সাবধান । আপনে বুঝহ কিবা জ্ঞান অজ্ঞান৷ জ্ঞানহীন কৰ্ম্মত্যজ বিভল প্রমাদ। বলেন গোবিন্দ দাস গুরুর প্রসাদ ৬১. চন্দ্রদ্বীপ হইতে পিতৃসদনে ইহাদের গমন বৃত্তান্ত জগন্মোহন ভাগবতে বর্ণিত হইয়াছে। এই “চন্দ্রদ্বীপ" কোথায় ছিল, বলিয়াছি। ইহারা যে বরিশাল বা অদ্রুপ দূরবত্তী কোন স্থান হইতে পিতৃসদনে উপস্থিত হইয়াছিল, ভাগ্যতের বর্ণনাতেও তাহা পাওয়া যায় না। পুত্রদ্বয়ের মুখে পরিচয় প্রাপ্তে আত্মীয় স্বজনের জন্য জগন্মোহনের বিচলিত হইয়া ক্ৰন্দন করা ইত্যাদি উক্ত গ্রন্থের বর্ণিত প্রসঙ্গ নির্লিপ্ত জগন্মোনের পবিত্র চরিত্রোপযোগী হয় নাই । ৬২. "চৌদশত পঞ্চাশ শকে আবির্ভাব হৈল । বিংশতি বৎসর প্রভু বেবাক লীলা কৈলা৷ এক বিংশতিতে প্রভুর পরমার্থ গ্রহণ দ্বাত্রিংশ বংসরে প্রভু হৈল আদর্শন। চৌদশত একাশী শক তাতে হয়। এই ত কহিল প্রভুর লীলার বিষয়।” জগনোহন ভাগবত ।