পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ দয়ালকৃষ্ণ দস্তিদার শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাশং ২য় ভাঃ ২য় খঃ ৪ৰ্থ অধ্যায়ে নবাব হরকৃষ্ণ বিবরণ প্রসঙ্গে দস্তিদার বংশের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তিত হইয়াছে; এই বংশে দয়াল কৃষ্ণের উদ্ভব। দয়াল কৃষ্ণের জীবন সরস্বতীর অৰ্চনায়—বিদ্যালোচনায় অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। সভ্রাতৃক দয়াল কৃষ্ণের বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল, তৎপতি ক্ৰক্ষেপও করিতেন না, কনিষ্ঠ গোপাল কৃষ্ণই তাহার রক্ষণাবেক্ষণে ছিলেন, দয়ালকৃষ্ণ পুথি পত্র লইয়াই দিনপাত করিতেন। কিন্তু এইরূপ নিরুদ্বেগে অধিক দিন কৰ্ত্তন করিতে পারেন নাই, ভ্ৰাতৃ বিরোধ উপস্থিত হওয়াতে তাহাকে কিছুকাল সাংসারিক জঞ্জালে বিব্রত থাকিতে হয়। কথিত আছে যে, এই ভ্ৰাতৃ বিরোধ উপলক্ষে মামলা মোকদ্দমার ব্যয় বাহুল্যে বিংশতি সহস্রাধিক মুদ্রা আয়ের ভূসম্পত্তি ঋণদায়ে তাহাদের হস্তচু্যত হইয়া পড়িয়াছিল। দয়ালকৃষ্ণ পিতার ন্যায় জ্যোতিৰ্ব্বিদ্যায় বিশেষ অভিজ্ঞ ছিলেন, তদ্ব্যতীত সাধারণ সাহিত্যের প্রতিও তাহার আত্যন্তিক অনুরাগ ছিল। শাকুনিক শাস্ত্ৰ—“কাকচরিত্র” বিদ্যা একসময়ে অতি আদরের ছিল, ইহা এখন অনালোচ্য হইয়া পড়িয়াছে। আলোচনার অভাবে এ বিদ্যার আর আদর নাই এবং ইহার সঙ্কেত সকল বিস্তৃত ও বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, সুতরাং এক্ষণে ইহাতে বিশ্বাস সংস্থাপিত করা কঠিন হইয়াছে। পক্ষীর স্বর এবং গতি ও অঙ্গভঙ্গি হইতে অনেক সময় প্রাকৃতিক অবস্থা বিপৰ্য্যয়ের জ্ঞান লাভ করা যাইতে পারে, “কাকচরিত্র” আলোচনায় অনেক সময় ভবিষ্যৎ শুভাশুভ নিণীত হইত, তাহার অনেক বিশ্বাস্য কাহিনী শুনা গিয়া থাকে। দয়ালকৃষ্ণ কাকচরিত্র ভাল রকম জানিতেন। একদা দস্তিদার গৃহে ব্ৰাহ্মণভোজন হইতেছিল, হঠাৎ দয়ালকৃষ্ণ বলিয়া উঠিলেন—“আজ সুন্দররাপে ব্রাহ্মণ ভোজন হইল না, আমরা আজ, ব্রাহ্মণভোজনে দধি ও ক্ষীর দিতে পারিব না।” “কেন পরিবেন না; ক্ষীর লইয়া তো গোয়ালা আসিতেছে?” পার্শ্ববৰ্ত্তী জনৈক পরিচারকের এ কথার উত্তরে বলিলেন—“হতভাগ্য গোয়ালার পদস্থলিত হওয়ায় এই মাত্র তাহার দধি ও ক্ষীরের কড়াই (পাত্র) পতিত হইয়া ভাঙ্গিয়া গেল; কাজেই ইহা দিতে পারিব না।” এইকথা বাৰ্ত্তার ক্ষণপরেই গোয়ালা রিক্তহস্তে আসিয়া পথের ঘটনা জানাইল । গোয়ালা সত্য বলিতেছে কি প্রতারণা করিতেছে, তাহা জানিতে (এবং দয়ালকৃষ্ণের উক্তির যথার্থ্য পরীক্ষার্থ) তখনই ঘটনাস্থলে লোক প্রেরিত হইল; সেই লোক দেখিয়া বিস্মিত হইল যে যথার্থই পথে দধিভাণ্ড ও ক্ষীরাধার ভগ্ন হইয়া দধি ও ক্ষীর পতিত হইয়াছে। দয়ালকৃষ্ণ কাকধ্বনি হইতেই এই বিষয় জ্ঞান হইয়াছিলেন। স্বগীয় জমিদার নবকৃষ্ণ দস্তিদার এই দয়ালকৃষ্ণের ভ্রাতুস্পপুত্র ছিলেন। নবকৃষ্ণের সুযোগ্য পুত্ৰগণ এক্ষণে বংশের গৌরব রক্ষা করিতেছেন। দীননাথ দত্ত হবিগঞ্জ সবডিভিশনের অন্তর্গত তরপ পরগণার সাতকাপন নামক পল্লীতে ১৭৬৬ শকের কাৰ্ত্তিক মাসে তত্রত রতিরাম দত্তের একটি পুত্র জাত হয়। নাম দীননাথ দত্ত। ইহার পূৰ্ব্বপুরুষ পূৰ্ব্বে অন্যত্র ছিলেন। দীননাথের অষ্টম পুরুষ পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত বৈদ্যনাথ দত্ত সাতকাপনের দুৰ্য্যধন করের কন্যা লীলাবতীকে বিবাহ করিয়া এস্থানে বসতি করেন, তদবধি দত্ত বংশীয়গণ এস্থান বাসী। বৈদ্যনাথের পুত্র রাধানাথ, তৎপুত্র গঙ্গাহরি, তাহার পুত্র প্রাণ বল্লভ, তৎপুত্র রঘুনাথ, তৎপুত্র রঞ্চিত রাম, ইনিই দীননাথের পিতামহ। পুরুষ বৈদ্যনাথকে প্রায় ২৫০ বৎসরের