পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ শিবের আবেশ হইয়াছিল। আর একদিন কতকটি যাত্রী ইটার বদনহাটার কালী বাড়ীতে “মানস” আদায় করিতে আসিয়াছিল, তাহারা যে স্থানে ছিল দৈবতঃ দুর্গাপ্রসাদ তথায় গমন করিলে, কীৰ্ত্তন আরম্ভ হয়। তখন তাহার গৌরদেহে কাল আভা প্রকটিত হইয়া কালিকার আবেশ হয় । যাত্রিগণ মা মা বলিয়া স্তুতি করিতে আরম্ভ করে, ও সেই স্থানেই “মানসিক" প্রদান করিয়া, কদম হাটায় না গিয়াই ফিরিয়া যায়। একদিন কীৰ্ত্তনের সময় জগন্নাথ মূৰ্ত্তির ন্যায় হাত পা যেন সঙ্কোচিত হইয়া উঠিয়া ছিল! এই সময়ে মনোমোহিনীর একটি পুত্র তাহার স্পর্শে আসন্ন মৃত্যু হইতে বাচিয়া উঠেন! ১৮৯১ খৃষ্টাব্দের অৰ্দ্ধোদয় যোগোপলক্ষে দুর্গাপ্রসাদ তীর্থ যাত্রা করে নবদ্বীপ, গয়া, প্রয়াগ, বৃন্দাবন, হরিদ্বার, অযোধ্যা প্রভৃতি দর্শন করিয়া তিনি দেশে আসেন, সেই সময় অনেক সাধুর সহিত তিনি সম্মিলিত হইয়া ছিলেন। ইহার কিছুকাল পরে মনোমোহিনীর মৃত্যু হয়, শিক্ষাগুরুর পরলোক গমনে তাহার মুখে কোনরূপ শোকচিহ্ন বা বিকারভাব লক্ষিত হয় নাই; তিনি নিয়মিত সময়ে অন্ন প্রস্তুত করিয়া মনোমোহিনী যে স্থানে বসিয়া খাইতেন তথায় রাখিলেন। পরলোকগতা মনোমোহিনীর আর খাওয়া হইল না, দিনে পর দিন চলিয়া গেল, দুর্গাপ্রসাদ উপবাসী রহিলেন; কত লোক সাধ্য সাধনা করিল, শুনিলেন না; কিছুতেই তাহার সঙ্কল্প ভাঙ্গিল না; এই রূপে ১৯ দিন উপবাসী রহিলেন। পরে বিংশতি দিনে হঠাৎ আনন্দে বলিয়া উঠিলেন—“সেবা হবে” সেবা হবে সংবাদে সমুপস্থিত ভক্তবর্গ সুখী হইল। সে দিন বেলা অতীত হইয়াছিল, আর অন্ন পাক হইল না ফল মূল মনোমোহিনীকে নিবেদন করিয়া সাধু খাইলেন ও পরদিন অদ্রপ সেই অন্নহার করিলেন। ১৯ দিনের প্রাণপণ সাধনায় ভগবানের কৃপায় তিনিই মনোমোহিনীকে তৈজস মূৰ্ত্তিতে পাঠাইয়া নিজ ভক্তের প্রাণ বাচাইয়া ছিলেন, এতদ্ব্যতীত ইহার আর কি অর্থ হইতে পারে? দুর্গাপ্রসাদ ১৯টা দিন জলবিন্দুও গ্রহণ না করিয়া দেহধারণ করিয়া ছিলেন। সাধারণ লোকের পক্ষে তাহা অসম্ভব; সাধকের পরিপক্ক দেহ বলিয়া, তিনি অনশনে অভ্যস্ত বলিয়া ১৯ দিনের উপষোণে তাহার কিছুই হয় নাই। এই ঘটনার পর সাধু আরও কয়েক বৎসর ছিলেন, তখন তাহার মহিমা চতুর্দিকে পরিব্যপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, তাহার গৃহ “সাধুর আখড়া" বলিয়া খ্যাত হইয়াছে এবং ভক্ত সংখ্যাও বিবৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিয়াছে। তখন তাহার গৃহে অবিরত কীৰ্ত্তন লাগিয়া রহিত। এইরূপ কয়েক বৎসর অতীত হইলে তাহার প্রাণ বায়ু বহির্গত হইয়া যায়।৬৪ দুল্লত ঠাকুর কুশিয়ারা নদী ও অমৃতকুণ্ডের মধ্যস্থলে আদমপুরে ঠাকুর দুৰ্লভের বাড়ী ছিল। ইহার বিবরণ সুকবি শ্ৰীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় আমাদিগকে জানাইয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন—“ঠাকুর দুৰ্ম্মভের বিষয় সম্পত্তি ছিল না, তিনি ভিক্ষাও করিতেন না, কিন্তু বাড়ীতে সদাব্রত ছিল। তিনি নিজে উৎকট রোগে পীড়িত ছিলেন, তাহার কোন প্রতিবিধান করিতেন না, কিন্তু মুখের কথায় শত সহস্র রোগকে আরোগ্যদান করিতেন। ঠাকুর বাণীর সঙ্গে তাহার বন্ধুতা ছিল, দুই বন্ধুতে বালকের ন্যায় ব্যবহার করিতেন, একটি দিনও পরস্পরের অন্ততঃ একবার দেখা না হইলে চলিত না। দুইজনের বাড়ীর মধ্যে যে ব্যবধান আছে, তাহা ৭/৮ মাইলে কম হইবে না। একদিনের একটা গল্প এই । ঠাকুরবাণী সন্ধ্যার পর দুৰ্ব্বভের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন। উভয়ে অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্তা হাসিখুশি চলিল, তাহার পরে ঠাকুরবাণী উঠিয়া বাড়ী ডঃ আমাদের কৃত সাধুচরিত্র” গ্রন্থে ইহার বিস্তৃত জীবন-কাহিনী বিবর্ণিত হইয়াছেন।