পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ বুদ্ধির তীক্ষতা ও বিদ্যাবত্তা দর্শনে বিমোহিত হইয়া তাহাকে তার স্বীয় মন্ত্ৰীপদ প্রদান করিতে ইচ্ছুক হন। নরসিংহ রাজাকে কন্যাদায়ের কথা জানাইয়া বলিলেন যে মধ্যগ্রাম নিবাসী মধুসূদন মৈত্রকে কন্যাদানে তিনি সঙ্কল্পবদ্ধ হইয়াছেন, তাহা না করিয়া তিনি কাৰ্য্যান্তরে বৃত হইবেন না। রাজা তদীয় সঙ্কল্প শ্রবণে আশ্বাস দিয়া বলিলেন যে বিবাহের ব্যয় তিনিই বহন করিবেন।৬৭ ইহার পর নরসিংহ ধন রত্ন ও কন্যাদি সহ এক নৌকারোহণ করিলেন এবং মধুমৈত্রের গ্রামে গিয়া নদীর মধ্যে বাস করিতে লাগিলেন। পরদিন মধু প্ৰাতঃসন্ধ্যা করিতে গিয়া সেই নৌকা দেখিতে পাইলেন ও কোথা হইতে নৌকা আসিয়াছে এবং নৌকাতেই বা কে আছেন, জিজ্ঞাসিলেন। তখন নরসিংহ অগ্রসর হইয়া মধুমৈত্রকে বলিলেন, ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণই গতি, আপনার ঘাটে আসিয়াছি, কন্যাদায় হইতে রক্ষা করুণ, নতুবা স্ত্রী ও কন্যা এবং শ্রীচক্রাদি সহ ডুবিয়া মরিব ॥৬৮ নরসিংহ তৎপর তাহাকে স্বীয় নৌকায় উঠাইলেন ও রূপবতী তনয়াদ্বয় সহ বহু অর্থ তাহার সম্মুখে উপস্থিত করিলেন। মধুমৈত্র তখন যুবক নহেন যে রমণীর রূপে উন্মত্ত হইবেন কিন্তু তিনি স্ত্রীবধের ভাগী হইবেন, ব্ৰহ্মবধের পাতক তাহার ঘাড়ে হয়তঃ পতিত হইবে ইহা ভাবিয়াই ভীত হইলেন ও বহু পরিমিত ধন সহ কন্যাদ্বয় গ্রহণ করিলেন। বিবাহ হইয়া গেল। কিন্তু ইহাতে এক বিভ্রাট ঘটিল, মধুর পুত্ৰগণ ইহাতে প্রতিবাদী হইয়া পিতাকে ত্যাগ করিল, মধু সমাজ-বৰ্জ্জিত হইলেন। মধুর ভগিনীপতি ধৈএী বাগচী কুলীনপ্রধান ছিলেন। ধৈএীর এক নিমন্ত্রণে একদা মধু যোগ না দেওয়াতে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ঘটিয়াছিল। আজ এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় পড়িয়া মধু ভগিনীপতির শরণ না লইয়া থাকিতে পারিলেন না। মধুর বশ্যতা স্বীকার বিফলে গেল না। যখন মধুর বাৎসরিক পিতৃশ্ৰাদ্ধ উপস্থিত হইল, তখন ধৈএী বাগচী সেই শ্রাদ্ধে উপস্থিত হইয়া ভোজন করিলেন। তদ্ব্যতীত তিনি মধুর পুত্রগণকে ডাকিয়া অনেক উপদেশ দিলেন ও পিতার বাধ্য হইয়া চলিতে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু তাহারা তদীয় বাক্য গ্রহণ করিল না। তখন ধৈঞী ক্রোধে কম্পিত হইতে লাগিলেন এবং পিতা অবাধ্য সেই গৰ্ব্বিত পুত্রগণকে সমাজে হীন করিয়া দিলেন। মধুর পুত্ৰগণ তদবধি "কাপ" নামে খ্যাত হইলেন । এইরূপে কন্যার বিবাহাদি সম্পন্ন করিয়া নরসিংহ সমাজে সম্মানিত হইলেন এবং মন্ত্রিত্বপদ গ্রহণে দিনাজপুরে গমন করিলেন। তাহার মন্ত্রণাবলে দিনাজপুরের রাজার রাজ্য শ্ৰী বিবৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিয়াছিল। ঐ সময়ে বঙ্গদেশে যোগ্যতর শাসনকৰ্ত্তা কেহ ছিল না, সেই সুযোগে রাজা গণেশের মনে উচ্চাভিলাষ উপজাত হয়, মন্ত্রীর সহিত সেই বিষয়ে পরামর্শ ক্রমে তিনি ৬৭. “রাজার সঙ্গে হইল কথোপকথন । নৃসিংহের মনোভাব রাজা করিল গ্রহণ। রাজা বলে মন্ত্রিত্ব পদ গ্রহণ কর তুমি । বিবাহের যত ব্যয় সব দিব আমি।” - তখন—“নরসিংহ মন্ত্রিত্ব পদ স্বীকার করিল। বিবাহের যত ব্যয় সব রাজা দিলা৷” —প্রেম বিলাস। ৬৮. “ধনরত্ন পাইয়া নরসিংহ মহামতি । স্ত্রীপুত্র কন্যাদ্বয় লইয়া সংহতি॥ নৌকায় চড়িয়া মাঝ গাঙ্গে চলি গেল।” “নরসিংহ বলে যদি কন্যা নাহি লও। সবংশে মরিব তুমি ব্ৰহ্মঘাতি হও॥—ঐ