পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ কোথাও কোন ভদ্রলোকের বাড়ী ছিল না”৭২ ময়মনসিংহর ও শ্রীহট্টের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ভাষা বিচারে তাহাকে শ্রীহট্টবাসী বলিয়া স্বীকার করিতে হয় । বোরগ্রাম শ্রীহট্টের সীমা হইতে অধিক দূরবর্তী না হইলেও বৰ্ত্তমানে ময়মনসিংহ জেলার অন্তবত্তী ৭৩ তাই কবিকে ময়মনসিংহবাসী বলিয়া বৰ্ত্তমান সাহিত্যিকগণ উল্লেখ করেন এবং ইহা স্বাভাবিকই বটে। “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থে এই কবিকে জোয়ান শাহী বাসী বলিয়া লিখা হইয়াছে। কিন্তু গ্রন্থকার সহোদর প্রতিম শ্রীযুক্ত দীনেশ বাবু “আৰ্য্যারওঁ”—১৩১৯ সাল জ্যৈষ্ঠ, ১২৩ পৃষ্ঠায় এই কবি সম্বন্ধে একটি কথা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন,—যথা "নারায়ণ তাহার পদ্মাপুরাণের একস্থানে লিখিয়াছেন, চাদ সদাগরের স্ত্রী সোনকা "বেহারী রাজার কন্যা" ছিলেন। দ্বিজ বংশী লিখিয়াছেন, মগধের নিকটবৰ্ত্তী কোন প্রদেশে হলবাহক জাতীয় বছাই নামক রাজা মনসাদেবীর পূজা প্রবৃত্তিত করেন। নারায়ণদেব স্বয়ং মগধে জন্ম গ্রহণ করিয়া রাঢ় হইয়া পূৰ্ব্ববঙ্গে করেন। নারায়ণ দেব স্বয়ং মগধে জন্ম গ্রহণ৭৪ করিয়া রাঢ় হইয়া পূৰ্ব্ববঙ্গে ময়মনসিংহ জিলার বুর গ্রামে বাস করেন। সুতরাং এই তিন প্রমাণ দ্বারা অনুমিত হয় যে, মনসামঙ্গলের উপাখ্যান আদৌ মগধ অঞ্চলের কথা ছিল।” এ মগধ কোথায়? দীনেশ বাবু বেহার অঞ্চলই অনুমান করেন। এই আহবান প্রকৃত নহে বলিয়া মনে করিবার কারণ থাকিতে পারে না কি? সহজেই মনে হয়, বেহারের একব্যক্তি এতদেশ মধ্যে রাখিয়া পূৰ্ব্ববঙ্গে আগমন পূৰ্ব্বক তদঞ্চলের ভাষায় পদ্মাপুরাণ লিপিবদ্ধ করিবার উদ্দেশ্য কি? দ্বিতীয়তঃ এ গ্রন্থ কবির প্রবীণ বয়সে রচিত নহে। বালক কবির বেহার হইতে দূরবতী পূৰ্ব্ববঙ্গে আগমন এবং অপরিচিত দেশে আহারের সংস্থানে বৃত না হইয়া গ্রন্থ প্রণয়ন কতদূর সঙ্গত, বিবেচ্য বটে। কবি চতুর্দশ বর্ষে দেবাদিষ্ট হইয়া এ গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হন।৭৫ কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সহায় সম্বল হীন অবস্থায় বেহার হইতে আগমন করা অসম্ভব না হইতে পারে, কিন্তু তাহা হইলেও দূরবত্তী একটা নূতন দেশে আসিয়া একজন ভিন্ন ভাষা-ভাষী ব্যক্তি, নূতন দেশের ভাষা-প্রাদেশিক শব্দাদি পৰ্য্যন্ত, অত্যন্ত্রকাল মধ্যে আয়ত্ত করিয়া গ্রন্থ রচনা করাটা অবিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়াই স্বাভাবিক কি না বিবেচ্য। “বেহারীর রাজকন্যার কথা" গ্রন্থকারের বেহারে থাকাকালে লিখাই স্বাভাবিক হয়। আর সেই রাজকন্যার কথা তদঞ্চালর কেহ জানেনা,—শ্ৰীহট্ট অঞ্চলেই ইহার এত প্রচার কেন? বস্তুতঃ প্রকৃত বিষয়টি তাহা নহে; নারায়ণ দেবের বাসভূমি মগধে অবস্থান কোথায়, তাহার সংবাদ সম্ভবতঃ অনবগত বলিয়া দীনেশ বাবু এই মগধকে বেহার বলিয়া অনুমান করিয়াছেন। নারায়ণের জন্মভূমি এই মগধ ৭২. ১৩১৩ বাং ২রা পৌষ তারিখের লিখিত পত্র। ৭৩. কবি যে সময়ে বোর গ্রাম বাসী হন, তখন ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় নাই, ময়মনসিংহ জেলা মাত্র ১২৫ বৎসর অতীত হইল, গঠিত হয় । তৎপূৰ্ব্বে ইহার উত্তরপূৰ্ব্বাংশ এবং পূৰ্ব্বংশ শ্রীহট্টেরই অধীন ছিল—কাজেই বোর গ্রামও সম্ভবতঃ শ্রীহট্টাধীন ছিল । ৭৪. “নারায়ণ দেবে হে জন্ম মগদ ।” - ইত্যাদি, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থের ২য় সংস্করণের ভূমিকা ধৃত নারায়ণী পদ্মাপুরাণের বাক্য। ৭৫. “চৌদ্দ বৎসরের কালে দেখিল স্বপন । মহাজন সহিত পথেতে দরশন। শিশু রুগত গোসাই হাতেত করি বাশী । আলিঙ্গন দিয়া বলে যায় মুখে হাসি গোবিন্দের আশা মোর সেই সে কারণ। প্ৰণাম করিনু মুঞি ভজিব চরণ। —নারায়ণী পদ্মাপুরাণ ।