পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৫ ীয় মগধ হইতে অভিন্ন বোধ করিলেই সকল প্রশ্নের মীমাংসা হয়। শ্রীহট্টের বিলুপ্তি মগধ রাজ্যের কথা7৬ শ্রীহট্টের ইতিবু পূৰ্ব্বাংশে বলা গিয়াছে। নারায়ণ দেবের জন্মস্থান এই মগধেরই অন্তর্গত নগর গ্রাম । শ্রীহট্ট জিলার সব্বত্র বিশেষতঃ পশ্চিমাদ্ধে নারায়ণ দেবের পদ্মাপুরাণ পাওয়া যায়। এই পদ্মাপুরাণের ভনিতায় কবিবল্লভের ও দ্বীজ বংশীদাসের নামও পাওয়া যায়। কবিবল্লভ যে শ্রীহট্টবাসী ছিলেন তাহা জানা গিয়াছে, আমাদের বোধ হয় দ্বিজ বংশীও শ্রীহট্টবাসী ছিলেন, তাদৃশ অনুমান করিবার কারণও আছে। নারায়ণ দেবের লিখার মধ্যে পাকে প্রকারে যেমন “শ্রীহট্ট নামের উল্লেখ স্থানে স্থানে আছে, ইহাদের লিখিত অংশেও তদ্রুপ পাকে প্রকারে শ্রীহট্টের (গৌড় জয়ন্তীয়া) জয় কৈলাস (জয়কলঙ্ক) প্রভৃতি স্থানের এবং রত্না প্রভৃতি নদীর নামের উল্লেখ দৃষ্ট হয়।৭৭ শ্রীযুক্ত দীনেশ বাবু কেতকা দাস ও গেমানদের গ্রন্থে বৰ্দ্ধমান অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নাম সন্নিবেশ দৃষ্টে “কবিদ্বয়কে বৰ্দ্ধমান বাসী বলিয়া” যেমন বোধ করিয়াছেন, সেইরূপ ইহাদের গ্রন্থে শ্রীহট্টের নামাদি লিখিত থাকায়, ইহাদিগকে শ্রীহট্টবাসী বলিয়াই বোঝা যায় ॥৭৮ নারায়ণ দেবের ভণিতায় সুকবি বল্লভের উল্লেখ থাকায় কেহ কেহ বলেন যে নারায়ণ ৭৬. “ত্রিপুরা কৌকিকাচৈব জয়ন্তী মণি চন্দ্রিকা । কাছাড়ী মাগধী দেবী অস্যামী সপ্তপৰ্ব্বতা:৷” কামাক্তা তনোক্ত এই শ্লোকের উল্লেখিত সপ্তপৰ্ব্বতের মধ্যে একটি পৰ্ব্বতের নাম মাগধী । শ্রীহট্টের জনৈক প্রাচীন কবি-বিরচিত “বাবম্বর” নামক একখানা পাঁচালী গ্রন্থে“শ্রীহট্ট-নগরে বাস মগধ নৃপতি । চিরকাল করি তার রাজ্যেতে বসতি।" ইত্যাদি বিবরণ পাঠ্যে উক্ত মগধ শ্রীহট্ট বলিয়া স্পষ্ট নির্দেশিত হইয়াছে, ইহার রাজধানীর নাম নগর ছিল, ইহাও বুঝা যায়। "নগর" জলসুখা প্রভৃতি অঞ্চল লইয়াই ছিল, সন্দেহ নাই। ষ্টুয়ার্ড সাহেবের বাঙালাব ইতিহাসেও লিখিত আছে যে জলসুখার সন্নিকটবৰ্ত্তি আজমীরগঞ্জ এক সময় এক ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজধানী ছিল। শ্রীহট্টের এই মগধের উল্লেখ পৃথিবীর ইতিহাস ৪র্থ ভাগ ১০৩ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য। ৭৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ৩য় খঃ ৩য় অধ্যায়, দ্রষ্টব্য। “উবা নালে কাপড় পিন্ধে কেশ মুক্ত করি। মাথা হৈতে পদ্মাবতী বিষ লয় ঝাড়ি৷” “লাম লাম ওরে বিষ ত্রিবেণীর দ্বারে। তেজিয়া শ্রীহট্ট ঘর নাম বন্ধ নালে।" “সুকবি নারায়ণ দেবের সরস পাঁচালী। পয়ার প্রবন্ধে কহি এক লাচাড়ী৷” (২) “ত্রিপুরা, জৈন্তা, জয়কলঙ্ক, ভ্ৰমিয়াছি নালারঙ্গ, গৌড়মণ্ডল আদি করি।” “দ্বীজ বংশীদাসে ভণে, চাদের কৌক মনে, শেষে কৈল কন্যার বিচার।" ৭৮. সম্প্রতি শ্ৰীযুক্ত রামনাথ চক্রবর্তী ও দ্বারিক্য নাথ চক্রবর্তী মহাশয়দ্বয়ের সম্পাদিত বংশী দাসের পদ্মাপুরাণ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে বংশী দাস ময়মনসিংহ নিবাসী ছিলেন বলা হইয়াছে। আরও শুনা যায় যে কবির নামীয় তালুক তথায় আছে। যদি বংশীদাসের জন্ম শ্রীহট্টে হয়, তবে নারায়ণ দেব ও কবিবল্লভের ন্যায় তিনিও স্থানত্যাগী হইয়াছিলেন বলিতে হইবে; জয়ানদের চৈতন্য মঙ্গল পাঠে জানা যায় যে প্রায় সাৰ্দ্ধ চারিশত বৎসর পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ও মানে ভয় হইয়া অনেক লোক ভিন্ন স্থানে চলিয়া গিয়াছিল। এই স্থান ত্যাগ করিয়া যাওয়ার পরেও অনেক দিন চলিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়। বস্ততঃ বংশী দাসের বর্ণনায় শ্রীহট্টের যে সকল নদীর নাম পাওয়া যায়,—যথা কালিয়ানী কোলনী), রত্না ইত্যাদি এবং “কালাঞ্জুরা" প্রভৃতি গ্রাম জলসুখার সন্নিকটবর্তী হওয়ায়, তাহাকে ঐ স্থানের সন্নিকট বাসী বলিয়াই মনে হয়। তৎলিখিত হল বাহক জাতীরও তদঞ্চলেই বাস অধিক ।