পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ “সহস্ৰ সহস্ৰ লোক না জানি কোথার । জগন্নাথ দেখি আইল প্ৰভু দেখিবার। কেহ বা ত্রিপুরা কেহ চাটি গ্রাম বাসী । শ্রীহট্টীয়া লোক কেহ, কেহ বঙ্গদেশী৷” প্রদ্যুম্ন মিশ্র এই যাত্ৰিদল সহ নীলাচলে উপস্থিত হন। সচরাচর শ্ৰীমহাপ্রভুকে ভক্তবর্গ সাক্ষাৎ ভাবে কোন প্রশ্ন করিতেন না; এই সরল বিদেশী ব্যক্তি সেই নিয়ম রাখিয়া চলেন নাই। ভক্তবর্গ সম্ভবতঃ সন্ত্রম বশতঃ জিজ্ঞাসা করিতে সঙ্কোচিত হইতেন; ইনি কতকটা আত্মীয় গৌরবেও হইতে পারে, নীলাচলে গিয়া শ্ৰীমহাপ্রভুর কাছে কৃষ্ণলীলা রহস্য শ্রবণ করিতে চাহেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর স্বয়ং তাঁহাকে কিছু না বলিয়া, নীলাচলের অন্যতম প্রধান পুরুষ রায়রামানন্দের নিকট প্রেরণ করেন। বিদ্যানগরের রাজ রামানন্দ রায়কে নীলাচলের কে না জানিত; রামানন্দ নীলাচলের অধিপতি প্রতাপরুদ্র গজপতির প্রতিনিধি রূপে বিদ্যানগরের শাসনকৰ্ত্তা ছিলেন; পক্ষান্তরে তিনি একজন প্রধান ভক্ত ও রসতত্ত্ববেত্তা ছিলেন; কিন্তু প্ৰদ্যুম্ন মিশ্র নতুন লোক ছিলেন বলিয়া তাহার আচার ব্যবহার সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর বাক্যে তিনি রমানন্দের গৃহে গিয়া, তাহার কোন কোন ব্যবহারের কথা শুনিয়া তৎপ্রতি তাহার শ্রদ্ধার হ্রস্বতা জন্মে এবং তিনি কৃষ্ণলীলা রহস্য-কথা না শুনিয়াই ফিরিয়া আসেন; তখন শ্ৰীমহাপ্ৰভু রামানন্দের আচার ব্যবহার ও মহিমার কথা তাহার কাছে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া তদীয় ভ্রান্তি দূর করেন ও পূনৰ্ব্বার তাহাকে তৎসদনে প্রেরণ করেন। এবার প্রদ্যুম্নমিশ্র রমানন্দ রায়ের মুখে কৃষ্ণকথা শুনিয়া পরমসুখী হইয়া আসিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শ্ৰীমহাপ্ৰভু শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণে পিতামহী দর্শনের জন্য আগমন করিয়াছিলেন। এই ঘটনা উপলক্ষে প্রদ্যুম্নশ্রী “শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী” নামে একখানা গ্রন্থ ংস্কৃতে রচনা করেন। এই গ্রন্থ শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর আদেশ গ্রহণ পূৰ্ব্বক তিনি প্রণয়ন করিয়াছিলেন। তিনি উপেন্দ্রমিশ্র বংশোদ্ভব, গ্রন্থ সমাপ্তিতে শ্লাঘার সহিত একথাও লিখিয়াছেন। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে প্ৰদ্যুম্নমিশ্রের কৃষ্ণকথা-শ্রবণ বিবরণ বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ আছে, চরিতামৃতের অন্ত্যখণ্ডে আর একজন প্ৰদ্যুম্ন মিশ্রের নাম পাওয়া যায়, তিনি এই সন্ন্যাসী প্ৰদ্যুম্ন হইতে ভিন্নব্যক্তি, তিনি গৃহস্থ ও নীলাচল বাসী ছিলেন। নীলাচলের রায়রামানন্দ তাহার সুপরিচিত ছিলেন। প্রসন্ন কুমার ভট্টাচাৰ্য্য বুরুঙ্গার গৌতম গৌত্রীয় প্রসন্ন কুমার ভট্টাচার্য্যের কথা তত্ৰত্য শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের প্রেরিত বিবরণ হইতে গৃহীত। তাহাতে লিখিত হইয়াছে যে, প্রসন্ন কুমার কলিকাতার রাজেন্দ্র নারায়ণ কবিরত্বের নিকট আয়ুৰ্ব্বেদ শিক্ষা করিয়া দেশে আগমন করেন। দেশে আসিয়াই তিনি একটি কঠিন কার্য্যে হস্তক্ষেপ করেন। তদঞ্চলে তখন তস্করের এত দৌরাত্ম্য ছিল যে, তজ্জন্য তত্ৰত্য অধিবাসীকে সৰ্ব্বদা অস্থির থাকিতে হইত; সিন্দুকের টাকা, ভাণ্ডারের ধন, গোশালার গরু, ঘাটের নৌকা, পুকুরের মাছ, কিছুই নিরাপদ ছিল না। প্রতি রাত্রেই চুরি হইত, প্রতিবাড়ীতে প্রতি রাত্রে চোরের গতিবিধি ছিল । এরূপ বিপদ হইতে গ্রামবাসিগণকে রক্ষা করিতে যাহারা সাহস করিয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়, তাহারা ধন্যবাদভাজন এবং তাহাদের ঈদৃশ কাৰ্য অনুকরণীয়।