পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৩ যাহারা চোর বা দুষ্ট দমনে সচেষ্ট হন, তাহাদের যথেষ্ট অর্থবল বা জনবল থাকা আবশ্যক, কিন্তু প্রসন্ন কুমার ধনী বা বড় সহায় সম্বল সম্পন্ন ছিলেন না কিন্তু মানসিক বল তাহার যথেষ্ট ছিল, তাই একাই তিনি এই বিপজ্জনক কার্য্যে সাহসের সহিত অগ্রসর হইলেন । কার্য্যটি সাধারণের হিতজনক হইলেও তিনি কাহারও সহানুভূতি সম্যক প্রাপ্ত হইলেন না। চোরদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেহই তাহার সহিত যোগ দিতে চাহিল না, আত্মীয় স্বজন বরং ভয় দেখাইয়া তাহাকে নিরুৎসাহ ও নিরস্ত করিতে ক্রটি করিলেন না; ইহাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা বলিয়াও কেহ কেহ মত প্রকাশ করিলেন । প্রসন্নকুমার সকলই শুনিলেন কিন্তু গ্রামবাসিগণের/রাত্রিকালের অশান্তি ও আতঙ্কের কথা মনে করিয়া, তিনি স্থির রহিতে পারিলেন না, তিনি তস্কর-দলনে বদ্ধ পরিকর হইলেন। তাহার অতুল উৎসাহ দর্শনে আরও কয়েকটি লোক যোগ দিল এবং ক্রমেই দলবৃদ্ধি হইতে লাগিল। তখন চোরদের একটি তালিকা প্রস্তুত হইল ও প্রমাণ সংগৃহীত হইল। তাহার পর তিনি এই সংবাদ গবর্ণমেন্টের গোচর করিলেন, স্বয়ং ম্যাজিষ্ট্রেট তথায় গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রসন্নকুমারের উদ্যোগে এক প্রকাণ্ড সভায় সন্নিকটবৰ্ত্তী পরগণাগুলি হইতে প্রায় সহস্র ব্যক্তি সমবেত হইল। কিন্তু সকলই নিস্তব্ধ, চোরদের বিরুদ্ধে প্রথমে কেহই সাক্ষ্য দিতে সাহস করিল না; সকলকে নিরুত্তর দেখিয়া প্রসন্ন কুমার অগ্রসর হইলেন, সভামধ্যে দাড়াইয়া সাহেবকে সৰ্ব্বাগ্রে বদমাশদিগকে দেখাইয়া দিলেন ও তাহাদের দুষ্কীৰ্ত্তি, পল্লীর দুরবস্থা অধিবাসিবর্গের ত্রাসের কথা নিপুণতার সহিত বুঝাইয়া দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু প্রমাণের উল্লেখও করিলেন। তাহার এই সৎসাহসের পরিচয় পাইয়া সভাস্থ ব্যক্তিবর্গের সাহস ও উৎসাহ উদ্দীপ্ত হইল এবং সকলেই তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিল, তখন ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ মতে পুলিশ তৎক্ষণাৎ চোরদিগকে বন্ধন করিয়া ফেলিল; বলা বাহুল্য যে চোরদের উপযুক্ত শাস্তি হইল; এই একটি নিঃসহায় যুবকের চেষ্টায় দেশে দীর্ঘকালের জন্য শান্তি বিরাজিত হইল। সকল দেশেই স্থানে স্থানে চোরের উপদ্রব আছে, কিন্তু দুষ্ট দমনে প্রসন্ন কুমারের ন্যায় সৎসাহস প্রদর্শন অল্প লোকেই করিয়া থাকে, প্রসন্নকুমারের উদাহরণ এসব স্থলে সৰ্ব্বদা অনুকরণীয়। প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী বিগত অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূৰ্ব্বে শ্রীহট্ট জেলায় যাহারা ব্যয়বহুল শাস্ত্র বিহিত বৃহৎ ব্যাপার সম্পাদনপূৰ্ব্বক পুণ্যের সহিত দেশ বিদেশে সুখ্যাতি অৰ্জ্জন করিয়াছেন, তন্মধ্যে দুইজন প্রধান। এক তরফ জয়পুরের অভয়াচরণ ন্যায়রত্ন যাহার পিতৃশ্ৰাদ্ধ ও নৌকাপূজার কথা আজিও লোকমুখে প্রচারিত হইতেছে; দ্বিতীয় বাণিয়াচঙ্গের প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী। দরিদ্রাবস্থায় জন্মগ্রহণ করিয়া লোকে চেষ্টা ও চরিত্রবলে লক্ষপতি হইতে পারে, ইনি তাহার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । জলসুখার জমিদারদের মোহরের করিয়া অবস্থার উন্নতি বিধানে প্রভূত ধনের অধিকারী মহাভারত পাঠ উপলক্ষে বহু ব্যয় করিয়া ছিলেন এবং কাশীধামে তুলাপুরুষ দান করিয়া সেই স্থানেও স্মরণীয় হইয়াছেন। সৎকার্য্যে প্রচুর অর্থব্যয় করিয়াও মৃত্যুকালে তিনি পুত্রদ্বয়কে প্রভূত বিত্ত প্রদান কবিয়া গিয়াছেন। তাহারাও পিতৃপদবী অনুসরণ করিতেছেন এবং অল্পকাল হইল, ংকার্যের পুরস্কার স্বরূপ পণ্ডিতমণ্ডলী হইতে “মহারত্ব" উপাধি লাভ করিয়া ধন্য