পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ বল্লভ মিশ্র শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দুই বিবাহ, তাহার ১মা পত্নী লক্ষ্মীদেবীর পিতা বল্লভ মিশ্র নবদ্বীপবাসী হইয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর পিতা, মাতামহ, মাতৃস্বসৃপতি প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী ছিলেন; তাহার শ্বশুর বল্লভাচার্যেরও পূৰ্ব্বনিবাস শ্রীহট্টেই ছিল। “স্বরূপ চরিত” নামক ময়মনসিংহের এক ঐতিহাসিক (কুলগ্রন্থ) পুঁথি পাঠে অবগত হওয়া যায় যে শ্রীহট্টবাসী মাণিক্য মিশ্র নামক জনৈক বৈদিক বিপ্রের বল্লভ নামে এক পুত্র হয়, এই বল্লভ অত্যন্ত সদাচারী, জিতেন্দ্রিয় ও বিষ্ণু-ভক্তি-পরায়ণ ছিলেন, নবদ্বীপে তিনি অল্পকালমাত্র অধ্যয়ন করিয়া তীক্ষ প্রতিভা বলে কৃতিত্ব প্রকাশকপূৰ্ব্বক অধ্যাপক হইতে “আচাৰ্য" উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। অধ্যয়ন কালে নবদ্বীপের অনেকের সহিত তিনি ভালবাসা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়াছিলেন, উপাধি লাভের পর দেশে আসিয়া তিনি অধিক দিন অবস্থিতি করিতে পারেন নাই, সপরিবারে নবদ্বীপে চলিয়া যাইতে সঙ্কল্প করেন এবং তদভিপ্রায়ে আগে একাকী নবদ্বীপে গিয়া একটি বাটিকা প্রস্তুত করেন। বৰ্ত্তমান ময়মনসিংহের ভিটাদিয়া একটি প্রাচীন গ্রাম, ভিটাদিয়াবাসী লক্ষ্মীনাথ লাহিড়ীর পিতা ও বল্লভের পিতা, একে অন্যের সহপাঠী ছিলেন; এই সূত্রে লক্ষ্মীনাথ ও বল্লভের মধ্যেও পরিচয় ছিল। শ্রীহট্টবাসী ব্যক্তিবর্গ গঙ্গামানে গমন কালে প্রায়শঃ লক্ষ্মীনাথের বাড়ীতেই আতিথ্য করিতেন, লক্ষ্মীনাথ ধনী লোক ছিলেন।৮৮ ইহার আর একটি কারণ এই ছিল যে লক্ষ্মীনাথের পিতার টোল পূৰ্ব্বাঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল, শ্রীহট্টের বহুছাত্র এই টোলে অধ্যয়ন করিত ॥৮৯ নবদ্বীপে গৃহাদি নিৰ্ম্মাণের পর বল্লভ সঙ্কল্পানুসারে স্বীয় পরিবারবর্গকে নবদ্বীপে লইয়া যাইবার জন্য দেশে আসেন, এবং পত্নী ও কন্যা প্রভৃতিকে লইয়া যান। যাওয়া কালে তিনি লক্ষ্মীনাথের গৃহেই আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। লক্ষ্মীনাথের পিতা বন্ধু-পুত্রকে সন্ত্রীক প্রাপ্ত হইয়া একমাস কাল পরম যত্নে আপন গৃহে রাখিয়াছিলেন। বল্লভাচার্যের সহিত বনমালী ও কাশীনাথ নামে নবদ্বীপ প্রবাসী আরও দুইজন শ্রীহট্টীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। বল্লভের দ্বিবষীয়া লক্ষ্মীপ্রিয়া নামী কন্যাটি প্রকৃতই লক্ষ্মীরূপিনী ছিলেন, কেননা এই একমাস কাল মধ্যে লক্ষ্মীনাথের গৃহ ধনধান্যে পরিপূরিত হইয়া উঠিয়াছিল।৯০ বল্লভাচার্য্য তথা হইতে স্ত্রীকন্যাদি সহ নবদ্বীপে গিয়া বাস করেন। বল্লভাচার্য্যের এই কন্যাকেই শ্ৰীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু বিবাহ করিয়াছিলেন। এই ঘটনার প্রায় বার বৎসর পরে শ্রীগৌরাঙ্গ পিতৃভূমি শ্রীহট্টে আগমন করেন। এই আগমন বৃত্তান্ত চৈতন্যভাগবতাদি গ্রন্থে আছে, কিন্তু তিনি যে শ্রীহট্ট পৰ্য্যন্ত গিয়াছিলেন, তাহা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয় নাই; যাহা হউক আগমন কালে পথিমধ্যে লক্ষ্মীনাথের সহিত দৈবক্রমে তাহার দেখা হয়, লক্ষ্মীনাথ পরম পণ্ডিত ও ভক্ত ছিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গের আকার প্রকার ও ভাব স্বভাব দর্শনে তাহার বোধ হয় যে এই পরম সুন্দর যুবক মনুষ্য নহেন,—ইনি নরবেশী নারায়ণ:৯১ কাজেই তিনি এই ৮৮. “কুলীন ধনবান লক্ষীনাথ বিপ্রমহাশয়। পণ্ডিত সদাচারী জিতেন্দ্রিয় হয়।” স্বরূপ চরিতগ্রন্থ। ৮৯. “শতশত শ্ৰীহট্টিয়া পিতার কাছে পড়ে। অন্নদান করি পিতা রাখয়ে সবারে।” ঐ ৯০. “দ্বিবর্ষীয়া এক কন্যা আছিল সঙ্গিনী । লক্ষীপ্রিয়া নাম তার লক্ষ্মী স্বরূপিনী৷ পরমাসুন্দরী কন্যা যার ঘরে রয়। ধনধান্যে পরিপূর্ণ তার ঘর হয়।—স্বরূপ চরিত ' ৯১. “লক্ষ্মীনাথ বলে প্ৰভু দেখি যে লক্ষণ । তাহাতেই বোধ হয় তুমি নারায়ণ।" —স্বরূপ চরিত।