পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৫ পরমপত্তিত যুবককে সশিষ্য নিমন্ত্ৰণ করিয়া নিজ গৃহে লইয়া যান ৯২ তাহার গৃহে শ্ৰীগৌরাঙ্গ চারিদিন অবস্থিতি করেন।৯৩ পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণ কালে শ্রীগৌরাঙ্গ কোন কোন সুপাত্রকে হরিনাম গ্রহণের উপদেশ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই স্থানে ভক্ত লক্ষ্মীনাথকে পাইয়া তিনি সংকীৰ্ত্তন রসে দেশ ভাসাইয়া দিয়াছিলেন; ইহাই বোধ হয়, তাহার প্রথম কীৰ্ত্তন। একদিন কথা প্রসঙ্গে লক্ষ্মীনাথ মহাপ্রভুকে নবদ্বীপ-প্রবাসী শ্রীহট্ট দেশীয় ব্যক্তিবর্গের কথা জিজ্ঞাসা করেন, কথাপ্রসঙ্গে বল্লভাচার্য্য-সুতা লক্ষ্মীপ্রিয়ার কথাও উপস্থিত হয়। লক্ষ্মীরূপিনী সেই মেয়েটি কেমন আছে, শ্ৰীগৌরাঙ্গ তাহাকে চিনেন কি না এবং তাহার কোথায় বিবাহ হইয়াছে ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করেন। লক্ষ্মীনাথের প্রশ্নে শ্ৰীগৌরাঙ্গ ঈষদ্ধাস্য সহকারে বলেন যে ইহাদিগকে তিনি বিলক্ষণ রূপেই জানেন, লক্ষ্মীপ্রিয়া তাহারই পত্নী ৯৪ এই উক্তি শ্রবণে লক্ষ্মীনাথ অতিশয় প্রীতিলাভ করেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর বাক্যে জানা যায় যে তখন নবদ্বীপে শ্রীহট্টবাসীর পৃথক একটি সমাজ গঠিত হইয়াছিল এবং তাহাদের মধ্যেই আদান প্রদানাদি চলিত ॥৯৫ চারিদিন লক্ষ্মীনাথের গৃহে অবস্থিতি বলিয়া শ্ৰীমহাপ্রভু বাজিতপুরের পথে শ্রীহট্টের বুরুঙ্গা দেশে আসিয়াছিলেন; ইহা তাহার শ্রীহট্টে প্রথমাগমন। সন্ন্যাসের পর তিনি শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণ পর্য্যন্তও গিয়াছিলেন ৯৬ বাণীকিশোর (ঠাকুর বাণী) ঠাকুরবাণী এক প্রসিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ। বাণী হইতে তদ্বংশীয়গণ “গোস্বামী" উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। ঠাকুরবাণীর বংশবৃত্তান্ত পূৰ্ব্বে বর্ণিত হইয়াছে।৯৭ ঠাকুরবাণীর শিষ্য সম্প্রদায় শ্রীহট্ট জেলার বহুস্থানে অবস্থিতি করিতেছেন। ঠাকুরবাণীর জীবনের কয়েকটী আখ্যায়িকা মাত্র জ্ঞাত হওয়া যায়। বাণীর পিতার নাম হরিশ্চন্দ্র, নিবাস দিনারপুর। বাণীকিশোর যখন কিশোর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তাহার পিতৃবিয়োগ হয়; বাণী বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে তাহার মাতাই যোগাড়যন্ত্র করিয়া তাহাকে বিবাহ দেন। মাতা বিবাহ দিয়া বধূ ঘরে আনিলেন বটে, কিন্তু উদাসচিত্ত পুত্র কোন প্রকারেই কাজ কৰ্ম্ম দেখিতেন না। কিঞ্চিৎ জমাজমি ছিল, মাতাই তাহার "বিলিবন্ধন” করিতেন। একবার এই ভূমির রাজস্ব বাকি পড়িয়াছিল, কর আদায়ের জন্য প্যাদা উপস্থিত হইলে বাণীকিশোর ভয়ে পলায়ন করিয়াছিলেন। নিকটে এক ঝাড় জঙ্গল ছিল, তাড়াতাড়ি কোথাও যাইতে না পারিয়া সেই বনের আড়ালে মাথাটি গুজিয়া রাখিলেন, বাকি দেহখানা বনের বাইরেই রহিল। বনের আড়ালে মাথা থাকায় তিনি অবশ্য প্যাদাকে দেখিতে পাইলেন না, এবং মনে করিলেন যে, তাহার মত অন্যেও তাহাকে দেখিতে পাইতেছে না! বাণীর চিত্ত যে শিশুর ন্যায় একবারে সরল ছিল, ইহাতেই বুঝা যায়। এরূপ সরল-চিত্ত পবিত্ৰাত্মা দেবানুগ্রহ লাভে কেন অসমর্থ হইবেন? যাহারা কোন কিছু গোপন করিতে গিয়া হাস্যাস্পদরুপে ধরা পড়ে, ৯২._"প্রভুকে সঙ্গে করি লক্ষ্মীনাথ লাহিড়ী। লইয়া গেলেন তিনি আপনার বাড়ী৷”—ঐ ৯৩. “সেই লক্ষ্মীনাথ ভক্ত পণ্ডিত প্রধান। দিনচারি তার ঘরে প্রভুর বিশ্রাম।”—ঐ ৯৪. "প্ৰভুবলে লক্ষ্মীপ্রিয়াপত্নী, বল্লভমিশ্র শ্বশুর হয়।”—ঐ ৯৫. “বহু শ্ৰীহটিয়া বিপ্ৰ নবদ্বীপে কৈসে। সম্বন্ধবাদ চলে তথা দেশে নাহি আইসো॥--ই ৯৬. “এই উত্তরাংশের উপসংহারাধ্যায় শ্রীচৈতন্যচরিত" দ্রষ্টব্য। ৯৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ, ৩য় এবং ৪র্থ খণ্ডের যথাক্রমে ৫ম ও ৩য় অধ্যায় দ্রষ্টব্য।