পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯১ পূৰ্ব্বক স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্য “সারদাসন” নামে আশ্রয় প্রতিষ্ঠা করিয়া নীরবে জীবন অতিবাহিত করিতেছেন।৯৯ বিরজানাথ ন্যায়বাগীশ শ্রীহট্টের গুটাটিকর নিবাসী সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ বিরজানাথ গত পৌষমাসে (১৩২১ বাং) কামাখ্যাধামে দেহত্যাগ করিয়াছেন। তাহার বিষয়ে গত ৩রা ফাল্গুনের সুরমা পত্রিকায় শ্রীহট্টের গৌরব কবিবর শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় লিখিয়াছেন “ন্যায়বাগীশ মহাশয়ের বয়স যদিও ৭০ বৎসর হইয়াছিল, তথাপি তাহাকে দেখিলে সেরূপ বোধ হইত না, যোগানুষ্ঠানের ফলে তাহার শরীর অনেকটা দৃঢ় ছিল। তিনি বাহিরে বড় একটা যাইতেন না, বাড়ীতে থাকিয়াই তদ্‌গত চিত্তে সৰ্ব্বানন্দ ভৈরবের সেবা করিতেন।” “ন্যায়বাগীশ মহাশয়ের জীবনটা যেমন পবিত্র ছিল, তাহার পরিণামও তদনুরূপই হইয়াছে। তিনি শ্রীহট্টের মহালক্ষ্মী মহাপীঠের ভৈরব সৰ্ব্বানন্দের আবিষ্কৰ্ত্তা। সৰ্ব্বানন্দ শিবটিলা নামক স্থানে মৃত্তিকাস্তুপে আবৃত হইয়া দীর্ঘকাল প্রচ্ছন্ন ভাবে ছিলেন, ব্রাহ্মনন্দ পুরী ঐস্থানটি নির্দেশ করিয়া যান, কিন্তু ন্যায়বাগীশ মহাশয়ই পুনঃ পুনঃ স্বপ্নাদিষ্ট হইয়া সৰ্ব্বানন্দের আবিষ্কার করেন।” “তাহার জীবন এবং বিদ্যা নিয়তই আড়ম্বর শূন্য ছিল। তিনি ব্ৰহ্মানন্দপুর কৃত মোহচপট অনুবাদ করিয়াছিলেন, এই গ্রন্থ সঠিক সানুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে। (তদ্ব্যতীত তিনি সৰ্ব্বানন্দ প্রকাশ গ্রন্থ রচনা করিয়া সানুবাদ প্রকাশ করিয়াছেন ।) তাহার বহু ছাত্র উপাধিধারী অধ্যাপকধারী আছেন, বিষয়ীর মধ্যেও অনেক তাহার শিক্ষাধীনে প্রতিভাবান হইয়াছেন।” “ইদানীং তিনি সংসার সম্পর্ক একপ্রকার ত্যাগ করিয়া কেবল সৰ্ব্বানন্দের সেবাতেই কায়মন সমর্পণ করিয়াছিলেন । প্রধানতঃ তাহার চেষ্টাতেই বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ প্রতি বৎসর শিবচতুর্দশীতে সৰ্ব্বানন্দের বাড়ীতে একটি মেলা হইয়া আসিতেছে। তাহার যত্নে সৰ্ব্বানন্দের একটি মন্দির হইতেছিল, কিন্তু তাহা সম্পূর্ণ হইবার পূৰ্ব্বেই অনুষ্ঠাতা চলিয়া গেলেন।” “শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ তত্ত্ব সরস্বতী মহাশয়ের সঙ্গে তাহার বিশেষ ভালবাসা ছিল এবং তাহারই অনুরাগে তিনি শ্ৰীগৌরীতে শ্রীহট্ট ব্রাহ্মণ পরিষদের উপস্থিত হইয়াছিলেন। তথাকার কার্য্য শেষ হইলে পদ্মনাথ বাবুর সঙ্গেই তিনি কামাখ্যা দর্শনে যাইবেন, সেইদিন প্রাতঃকালে সৰ্ব্বাগ্রে উমানন্দ ভৈরবকে দর্শন করিতে যান। তাহার সঙ্গে যে ভদ্রলোকটি ছিলেন, তিনি গল্প করিয়াছেন, উমানন্দ দর্শনে যাইয়া “অনুজ্ঞানং দেহিমে দেব কামাখ্যা দর্শনং প্রতি" এই মন্ত্রটি পাঠ করিতে করিতে চক্ষের জলে প্লাবিত হইয়া ছিলেন। উমানন্দ হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়াই তিনি কামাখ্যা দর্শনে চলিলেন সঙ্গে পদ্মনাথ বাবু। নীলাচলে আরোহন করিতে করিতে "কাশ্যাঃ ফলাধিকা পুরী” এই শ্লোকাদ্ধ অনেকবার আবৃত্তি করিয়াছিলেন। নরকাসুর নিৰ্ম্মিত সেই সুদীর্ঘ পথ প্রায় অতিক্রম করিয়াছেন, ১০/১২ গজ মাত্র অবশিষ্ট আছে, এমন সময়ে তিনি মাথা ঘুরিতেছে বলিয়া বসিয়া পড়িলেন। সঙ্গিগণ দেখিলেন, ক্ষণ কাল মধ্যে তিনি নিৰ্ব্বাক নিম্পন্দ, তাহার নাড়ীর গতি ক্ষীণ।” “তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্রের নিকট আৰ্জ্জেন্ট টেলিগ্রামে সংবাদ প্রেরিত হইল। জনৈক সহচর সহ ভ্রাতুষ্পপুত্র যথাকালে উপস্থিত হইলেন, যথোচিত চিকিৎসাও চলিতে লাগিল, কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটিল না। পৌষী পূর্ণিমায় তিনি রোগাক্রান্ত হইয়াছিলেন, নয় দিবসকাল পক্ষাঘাত ৯৯. পণ্ডিতা শ্ৰীযুক্তা রমাবাই সরস্বতীর জীবনকাহিনী সহোদরপ্রতীম শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ দাস প্রণীত "নারীরত্নমালা" পুস্তকে বিস্তারিত বিবর্ণিত হইয়াছে, তদবলম্বনে এস্থলে ২/৪টি কথা লিখিত হইল ।