পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ রোগে নিৰ্ব্বাক নিস্পন্দ থাকিয়া ২৫শে পৌষ কৈলাসধামে যাত্রা করেন। তিনি কামাখ্যা মাতাকে দর্শন করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়াছিলেন, জগন্মাতা তাহাকে তেমনই কৃপা করিয়াছেন। জগন্মাতা তাহার প্রিয় পুত্রকে একবারে ক্রোড়ে তুলিয়া লইবেন, আর তাহাকে সংসারের নরক কোলাহলে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না।" ব্ৰহ্মানন্দ পুরী ব্ৰহ্মানন্দ পুরীর জন্মস্থান শ্রীহট্ট নহে, কিন্তু শ্রীহট্টের সহিত তাহার যেরূপ অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ জাত হইয়াছিল; তাহাতে তাহাকে কোন প্রকারেই ভিন্নদেশী বলিয়া পরিগণিত ও তজ্জন্য তাহার কথা পরিত্যাগ করিতে ইচ্ছা হইবে না। ব্ৰহ্মানন্দপুর কৃত “মোহচপটমৃ” গ্রন্থ সঠিক ও সানুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ের লিখিত ঐ গ্রন্থের ভূমিকা হইতে তাহার জীবন কথা উদ্ধৃত হইল। “পরমহংস স্বামী শ্ৰীমদৃ ব্ৰহ্মানন্দ পুরীর জন্মস্থান উড়িষ্যাঅঞ্চল এবং এইরূপ প্রবাদ যে তিনি উড়িষ্যার রাজগুরু ছিলেন; যৌবনের প্রথমভাগেই স্ত্রী পুত্রাদি শমন-রাজ কর্তৃক অপহৃত হওয়াতে পাশ-মুক্ত বিহঙ্গমের ন্যায় তিনি বৈরাগ্যের উন্মুক্ত আকাশে উডডীয়মান হইয়াছিলেন। পূৰ্ব্বের জীবন সম্বন্ধে ইহার অধিক আর কিছুই জানা যায় নাই। সন্ন্যাসিগণ পূৰ্ব্বাশ্রম সম্বন্ধে কাহারও নিকট কিছু বলেন না; সুতরাং শ্রীহট্টে কি অন্যান্য যে সকল স্থানে মহাত্মা ব্ৰহ্মানন্দ অবস্থান করিয়া গিয়াছিলেন, তত্তৎস্থলের অনেকেই তদীয় অলৌকিক শক্তিতে মুগ্ধ হইয়া, শিষ্যবৎ ভক্তি-সহকারে সতত তাহার সমীপে অবস্থান করিলেও তাহার জনকের নাম, কোন গ্রামে বসতি ছিল, শিক্ষা দীক্ষা কোথায় কতদূর হইয়াছিল, ইত্যাদি জীবনীর আবশ্যক কথা কেহই জানিতে সমর্থ হন নাই। তাহার সঙ্গে কতকগুলি শাস্ত্রগ্রন্থ ছিল। ঐ সকল উড়িয়া অক্ষরে লিখিত দেখিয়া তিনি উড়িষ্যা দেশজ ছিলেন, ইহারই মাত্র স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছিল। “শ্রীহট্টে তাহাকে আনুমানিক ১২৬৭ সালে সৰ্ব্বপ্রথম দেখা গিয়াছিল। শ্রীহট্ট শহর হইতে অনতি দূরবত্তী গোটাটিকর নামক জনপদে তিনি বহুদিন অবস্থান করিয়াছিলেন। তথায় তাহার নাম ‘পূর্ণানন্দ ব্রহ্মচারী”। তান্ত্রিক বীরাচারী সাধকের রীতি অনুসারে তাহার সঙ্গে প্রাচীন বয়স্কা একজন ভৈরবীও ছিলেন। ব্ৰহ্মানন্দ-তদানিন্তন পূর্ণানন্দ-সৰ্ব্বদা কারণ-বারি সমাশ্রয়ে নিত্যানন্দে বিভোর থাকিতেন। যে স্থানটি সম্প্রতি শ্রীহট্টের মহাপীঠ বলিয়া বিঘোষিত হইয়াছে, তিনি সেই স্থানেই তখন সাধন ভজন করিতেন।” “তাহার পাণ্ডিত্য একরূপ অতলস্পশী ছিল। এতৎ সম্বন্ধে বহু কাহিনী আছে। এস্থলে একটিমাত্র উল্লেখ করা যাইতেছে। তৎকালে শ্রীহট্ট অঞ্চলে রাজগোবিন্দ সাৰ্ব্বভৌম মহাশয় একজন মহামহোপাধ্যায়—প্রতিম ব্যক্তি ছিলেন, তাহার ন্যায় সৰ্ব্বশাস্ত্ৰদশী পণ্ডিত পূৰ্ব্বাঞ্চলে অতি অল্পই জনিয়াছেন, একদা কোনও নিমন্ত্রণে এই সাৰ্ব্বভৌম মহাশয় গোটাটিকরস্থ জনৈক সন্ত্রান্ত ভদ্রলোকের বাড়ীতে আসিয়া এই মহাত্মাকে দেখিতে পান এবং মদ্যপ-ভৈরবী-সহচর গৈরিক ধারকে একজন পূতাচারী গৃহস্থ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সচরাচর যে ভাবে দেখিয়া থাকেন, তিনিও ইহার প্রতি সেইরূপ কতকটা ঔদাস্যভাব প্রদর্শন করিয়াছিলেন। ব্রহ্মচারী ইহাতে মনে মনে একটু ক্ষুব্ধ হইয়া সাৰ্ব্বভৌম মহাশয়ের সঙ্গে শাস্ত্রালাপে প্রবৃত্ত হন। রাম রাবণের যুদ্ধের ন্যায় বহুক্ষণ উভয়ের মধ্যে নানা শাস্ত্রের বিচার চলিতে লাগিল, ক্রমশঃ সাৰ্ব্বভৌম মহাশয় নিস্তেজস্ক হইয়া আসতেছেন দেখিয়া, কৰ্ম্মকৰ্ত্তা অপ্রলোক আসিয়া উভয়ের পদপ্রান্তে পড়িয়া এই দ্বৈরথ-তর্কযুদ্ধের অবসান করাইয়া দেন। x x এই স্থান হইতে তিনি কামাখ্যা মহাপীঠে চলিয়া