পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড কৃষক উত্তর দিল— “রামদাস ।" প্রভু বলিলেন– “ভাই রামদাস! বেলা দ্বিপ্রহর প্রায়, প্রখর রৌদ্র, এখন হালের গরু দুটি ছাড়িয়া দাও।” কৃষক কহিল— “আপনার কথা রাখিতে পারিলাম না। আজ আমকে ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতেই হইবে। রৌদ্রে ক্ষেত্র শুষ্ক হইয়া অকৰ্ম্মণ্য হইতেছে।" মহাপ্ৰভু তখন সখেদে বলিয়া উঠিলেন— “হরি! হরি! একি সৰ্ব্বনাশ! ক্ষেত্র নষ্ট হৈবে বলি কর ধৰ্ম্মনাশ!! শ্ৰীমহাপ্রভু আর কিছু বলিলেন না, বলিতে পারলেন না, তাহার অরবিন্দ ক্ষেত্র বাষ্প পূরিত হইল, দেখিতে দেখিতে বাষ্প ধারাকারে পরিণত হইয়া প্রধাবিত হইল। অজ্ঞ কৃষক এরূপ অদ্ভুত চিত্র জন্মাবধি দেখে নাই, সে এদৃশ্যে আশ্চৰ্য্যান্বিত ও বুদ্ধিহারা হইয়া গেল। এ নামের গুণ না ভাগবতী শক্তির অখণ্ড প্রভাব?— শ্ৰীমহাপ্রভুর মুখোচ্চারিত হরিধ্বনি শুনিয়া হালের গরু দুটি উদ্ধপুচ্ছে ধ্বনি করিতে লাগিল! যেন অব্যক্ত স্বরে হরি বলিয়া উঠিল!২ এই অত্যাশ্চৰ্য্য ব্যাপার বিলোকনে রামা চাষা ভীত হইয়া থরহরি কাপিতে লাগিল ও দৌড়িয়া গিয়া শ্রীচৈতন্যের পদপ্রান্তে পতিত হইল । রামার কি সৌভাগ্য, রামা সে রাতুল চরণে স্থান পাইল । শ্ৰীমহাপ্রভু রামাকে হরিনাম উপদেশ দিয়া উদ্ধার করিলেন। রামাকে বলিলেন– “রামা! এই তরু-মূলে তুমি বেদিক প্রস্তুত করিয়া নিত্য হরি-আরাধনা করিও, হরিনাম গ্রহণ করিও । অশ্বথ তলা পবিত্র স্থান ।” রামা তাহাই করিল; ও সে সেই স্পর্শমণির স্পর্শে সোনা হইয়া গেলে । তাহার বিনয় ভক্তিতে কত লোক আকৃষ্ট হইয়া তথায় আসিত এবং তাহারাও তদীয় প্রভাবে- তাহার অনুষঙ্গে— পবিত্র জীবন লাভ করিত। এই ঘটনায় বুরুঙ্গায় শ্ৰীমহাপ্রভুর একটি নূতন নাম হইল,— রামদয়াল "৩ কুটম্ব সম্মিলন এই ঘটনার পর শ্রীচৈতন্যদেব সহ গৌরীকান্তের মিলন হয়। গৌরীকান্ত মধুকর মিশের প্রপৌত্ৰ— শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভ্রাতৃ সম্পৰ্কীয়; তিনি পুষ্পচয়নে বহির্গত হইয়া পুষ্প সংগ্ৰহ ২. “মধ্যাহ্ন তন্মুখাচ্ছাত্বা গাবশ্বব্ৰুহঁরিধনিম।"- শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেদয়াবলী। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, গোবিন্দদাসের কড়চা প্রভৃতি সুপ্রচারিত ও প্রামাণ্য গ্রন্থাদিতে ভাব বিশেষে পশুপক্ষী ইতর প্রাণীব আকৃষ্ট হওয়ার ভূরি উদাহরণ থাকিলেও (আলোচনার অভাবে) অধুনা তাহা অলৌকিক বলিয়৷ গণ্য । যা হউক, যে কাহিনী সুপ্রচারিত, অলৌকিক হইলেও তাহা পরিত্যাগ না করিয়া উল্লেখ করিয়া যাওয়াই আমাদের পক্ষে সঙ্গত; বিশ্বাস করা না করা অভিরুচি সাপেক্ষ্য । এস্থলে প্রকাশ করা কৰ্ত্তব্য যে, সন্ন্যাসের পরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পূৰ্ব্বদেশাগমন সংবাদ “উদায়বলী” ব্যতীত অপর গ্রন্থে পাওয়া যায় নাই। কিন্তু ঠিক এই সময় কেবল শ্রীহট্টে নহে, ঠিক এমনই ভাবে শ্ৰীমহাগ্ৰস্থ যশোড়ায় গিয়া ভক্ত প্রবর জগদীশ পণ্ডিত সহ সাক্ষাৎ করিয়া ছিলেন, সে সংবাদও “জগদীশ চরিত্র বিজয়” নামক প্রাচীন বৈষ্ণব গ্রন্থ ব্যতীত অন্যান্য গ্রন্থে নাই। এদ্ধ্যতীত এই সময়েই কামরূপেও না কি শ্ৰীমহাপ্ৰভু পদার্পণ করিয়াছিলেন । হাজো নামক এক স্থানে এখনও “চৈতন্য গোফা” (গুহা) প্রদর্শিত হইয়া থাকে । অতএব এই সময় তিনি একাধিক স্থানে গমন করিয়াছিলেন । ৩. “তদবধি সেই স্থানে রামদয়াল খ্যাতি । সেইরূপ জনরব আছিয়ে সম্প্রতি॥"- শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী ।