পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ মনস্কামনা পূর্ণ করিলেন। এরূপও প্রবাদ আছে যে, মণিপুরে দীর্ঘকাল যাবৎ অনাবৃষ্টি ছিল, ব্ৰহ্মানন্দ জলে নামিয়া তপস্যা করিয়া বৃষ্টিপাত করাইয়াছিলেন। শুনিয়াছি পূৰ্ব্বে মণিপুরে বিম্ববৃক্ষ ছিল না; ব্রহ্মানন্দপুরী একটি বেলের চারা নিয়া তথায় রোপণ করিয়াছিলেন। যাহা হউক, ব্ৰহ্মানন্দ যখন ফিরিয়া আইসেন, তখন মহাবাজ কীৰ্ত্তিচন্দ্র একটি নিম্বকাষ্ঠ—নির্মিত কালীমূৰ্ত্তি সহ অলঙ্কার সমেত উপহার প্রদান করেন এবং বার্ষিক একটা বৃত্তিরও ব্যবস্থা করিয়া দেন।” “আনুমাণিক দশ বৎসর কাল বাণিয়াচঙ্গে অবস্থান করিয়া ব্ৰহ্মানন্দপুরী, ১২৮১ সালে সমাধি লাভ করেন। এই বৎসর নারায়ণী যোগে করতোয়া স্নান করিতে গিয়াছিলেন। অন্তিম মুহূৰ্ত্তে তিনি কাত্যায়নী মাতার সাক্ষাৎ উপবিষ্ট হইয়া স্তবস্তুতি করিলেন ও তৎপর যোগমগ্ন হইয়া নশ্বর দেহ হইতে মুক্ত আত্মার সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করিলেন। তাহার দেহ কি রূপ সমাহিত হইবে, তদ্বিষয়ে তিনি পূৰ্ব্বেই উপদেশ দিয়াছিলেন, তদনুসারেই কাৰ্য হইয়াছিল।১০১ “ভবাণী দেব্যা" ইনি বামৈর চৌধুরীয়া বংশীয়া ছিলেন । হবিগঞ্জের বামৈর ব্রাহ্মণ চৌধুরী বংশ অতি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ। ইনি বালবিধবা ছিলেন ও কাশীধামে গিয়া যোগসিদ্ধ হন। প্রায় ৫০/৬০ বৎসর হইল সাধনোচিগতি প্রাপ্ত হইয়াছেন। ঐ সময়ে বারাণসীতে গিয়া লোকে যেমন মহাত্মা ত্রৈলিঙ্গ স্বামীকে দেখিত, তেমনি এই 'যোগিনী”কেও দেখিয়া বিস্মিত হইত, কেননা ইনিও আহারাদি পরিত্যাগ করিয়া সমাধিস্থ থাকিতেন। বেগমপুরবাসী ভৈরবচন্দ্র রায় এক অতি কৰ্ম্মঠ ব্যক্তি ছিলেন । অতি সামান্য অবস্থা হইতে তিনি স্বীয় সামর্থে অবস্থার আশ্চাৰ্য্য পরিবর্তন করিয়া ছিলেন। উদ্যোগী পুরুষের নৈরাশ্যের কারণ মাত্র থাকিতে পারে না । ভৈরব রায় তাহার প্রমাণ প্রদর্শন করিয়াছেন। প্রতাপগড় পরগণার গবর্ণমেণ্টের খাস মহালের তহশীলদার রূপে তিনি দীর্ঘ কাল কাৰ্য্য করেন এবং তাহাতেই দক্ষতাগুণে তিনি যেমন কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসভাজন হন, তেমনি স্বীয় অবস্থারও পরিবর্তনে সক্ষম হন। দীর্ঘকাল কাৰ্য্য করার পর বাদ্ধক্যে পেনসন গ্রহণ করিয়া বাড়ীতে গমন করেন। দেশেতেও তাহার প্রভাব প্রতিপত্তির পরিচয় একটি কার্য্যের দ্বারা সকলে পাইয়াছিল। অরঙ্গপুরের ৮নং তালুকটীর প্রজাগণ বড়ই দুৰ্দ্দান্ত ছিল, কেহই ঐ তালুক দখলে রাখিতে পারিত না; এজন্য “দেওলা তালুক" বলিয়া ইহার কুখ্যাতি ছিল। ভৈরবচন্দ্র রায় জানিয়া শুনিয়া ঐ তালুক ক্রয় করেন এবং বিনা অত্যাচারে আশ্চর্য কৌশলে উহা এমন শাসন করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন যে উহার “দেওলা” নাম চিরতরে ঘুচিয়া গিয়াছে ॥১০২ ভোলানাথ শিরোমণি বামৈ পরগণার সিংহগ্রামে ভোলানাথ শিরোমণির বাস ছিল, তিনি প্রায়ই কলিকাতায় থাকিতেন। এক সময় শাস্ত্র-বিচারে তিনি কলিকাতার বহুতর পণ্ডিতকে পরাজিত করিয়াছিলেন। কালীঘাটে মায়ের বাড়ীতেই তিনি থাকিতেন এবং তথায় তৎসংসৃষ্ট অনেক অদ্ভুত ঘটনা অনেক ব্যক্তিই ১০১. সম্প্রতি সমাধি স্থলে একটি প্রস্তর নিৰ্ম্মিত স্মৃতিফলক স্থাপিত হইয়াছে। ১০২. শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী বি এ হইতে প্রাপ্ত ।