পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৭ মথুরানাথ আচার ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠ, সত্যপরায়ণ ও অমায়িকপুরুষ ছিলেন। তাহার ব্যবহারে বালবৃদ্ধ সকলই মোহিত ছিল। গ্রামস্থ লোকের তৎপ্রতি এত বিশ্বাস ছিল যে, অতি গোপনে তাহার কাছে নিজ অর্থবিত্ত সৰ্ব্বদা গচ্ছিত রাখিত। বিপদ আপদ উপস্থিত হইলে তাহা হইতেই সৰ্ব্বাগ্রে তাহারা সৎপরামর্শ পাইত। আত্মীয় কুটুম্বের কোন ক্রিয়াকলাপ হইলে মথুরানাথ না গেলে যেন তাহা অপূর্ণই রহিত। অভ্যাগত অতিথি কদাপি তাহার গৃহ হইতে পরাজমুখ হয় নাই। গ্রামে তিনি একটি সাপ্তাহিক ধৰ্ম্মসভা স্থাপন করিয়া তাহাতে ধৰ্ম্মালোচনা করিতেন, তাহাতে গ্রামবাসীর প্রভূত উপকার সাধিত হয়। এই সমস্ত কারণে মথুরানাথ লোকের স্মৃতিপথারূঢ় হইয়া রহিয়াছেন। বিগত ১৩০৪ বাংলার ফারুণ মাসে তিনি পরলোকগমন করেন। মহাদেব পঞ্চানন সংসারশক্তি-বিরহিত ভাবে কিরূপে সংসারে অবস্থিতি করা যাইতে পারে, বাণিয়াচঙ্গের গৌতমগোত্রীয় মথুরানাথ তাহা দেখাইয়া গিয়াছেন; এই সাধক মহাত্মার পুত্ৰই মহাদেব। মহাদেবের জন্মের পূৰ্ব্বে তাহার পিতামাতা যে রূপে দেব-দেব মহাদেবের কৃপা-নিদর্শন অনুভব করেন, তাহা “বংশবৃত্তান্ত" বর্ণন প্রসঙ্গে পূৰ্ব্বে বর্ণিত হইয়াছে। মহাদেব যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন শিশুদর্শনে গিয়া সকলেই দেখিতে পান যে, শিশুর গলদেশ বেষ্টন করিয়া একটা সপও জাত হইয়াছে; এই সপটি জাত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই একদিকে চলিয়া গিয়াছিল। কিন্তু কিছুদিন পরে একদিন কাৰ্য্যন্তর হইতে তাহার মাতা ফিরিয়া আসিয়া দেখিতে পান যে, সেই সপটি আসিয়া শিশুর গলদেশ বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। মাকে দেখিয়া সাপটি পলাইতে চাহিল ও তিনি তৎক্ষণাৎ কিছু দুগ্ধ আনিয়া দিলে তাহা পান করিয়া চলিয়া গেল । ইহার পর আর একদিন এইরূপ হইল, তৃতীয় দিনে মথুরানাথ স্বয়ং এই দৃশ্য দেখিয়া বিক্ষিত হন ও সাপটিকে ধরিয়া দুগ্ধ খাইতে দেন। ইহার পর আর ইহাকে দেখা যায় নাই। এই সকল কাণ্ড দর্শনে মথুরানাথ পুত্রের নাম মহাদেব রাখেন। মহাদেব যখন ক্ৰন্দন করিতেন তখন কালী কালী বলিলে ক্ৰন্দন ত্যাগ করিতেন। কিঞ্চিৎ বড় হইলে কালীমূৰ্ত্তি গঠন করিয়া খেলিতেন—ফুল ও দুৰ্ব্বাদ্বারা পূজা করিতেন। একদিন তাহার মাতা শিবপূজার নৈবেদ্যাদি সম্মুখে রাখিয়া ধ্যান করিতেছেন, এমন সময় পুত্র সম্মুখের নৈবেদ্যটি নিয়া আত্মসাৎ করিয়া ফেলিলেন। দেবোদিষ্ট নৈবেদ্য হরণ করায়, পুত্রের ভবিষ্যৎ অনিষ্টাশঙ্কায় মাতা ভীতা হইলেন; কিন্তু পুত্রকে তজ্জন্য তিনি তাড়না করিলেন না—তাড়না করিতে ইচ্ছাও হইল না । পঞ্চম বৎসরে মহাদেবের বিদ্যারত্ন হয়, তাহার পাঠে অভিনিবেশ ও প্রখর স্মৃতিশক্তি দর্শনে শিক্ষক ও ছাত্র সকলেরই মনে ধারণা হয় যে, মহাদেব অসাধারণ পণ্ডিত হইবেন। তাহাদের অনুমান অসত্য হয় নাই, অষ্টাদশ বৎসর বয়ক্রম পূর্ণ না হইতেই তিনি সমুদয় শাস্ত্রাঙ্গে সুশিক্ষিত হইয়া “পঞ্চানন” উপাধি লাভ করেন। উপাধি লাভের পরেই তিনি সাংখ্যদর্শনের একখানা ভাষ্য লিখেন এবং তদারা ভারতীয় দার্শনিক সমাজে পরিপূজ্য হন। তৎপরে তিনি কয়েকটি গৰ্ব্বিত পণ্ডিতকে বিচারে পরাজিত করেন। পরে তাহার দৈবশক্তির কথা লোকমুখে প্রচারিত হইয়া পড়ে, তৎশ্রবণে অতঃপর কোন পণ্ডিতই তৎসহ বিচারে সাহসী হইতেন না। মহাদেবের দৈবশক্তি তাহার জন্মজাত ছিল; কোনরূপ সাধন-লব্ধ ছিল না, তিনি যখন পঠদ্দশায় ছিলেন, তখন এবং তাহার পূৰ্ব্ব হইতেই ঘটনা বিশেষে ইহা প্রকাশিত হইয়া পড়িয়াছিল। তদ্বংশীয় শ্রীযুক্ত সারদানন্দ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় আমাদিগকে যে বিবরণ প্রদান শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-চতুর্থ ভাগ)-৭