পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৯ মহেন্দ্রনাথ দে মহেন্দ্রনাথ শ্রীহট্টের অন্তর্গত জগৎশী গ্রামবাসী কায়স্থকুলোদ্ভব স্বগীয় দেওয়ানজী দোলগোবিন্দের পুত্র। মহেন্দ্রনাথ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন প্রতিভাবান ছাত্র ছিলেন, গণিত শাস্ত্রে ইহার ন্যায় কৃতীছাত্র এ জেলায় বড় খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। মহেন্দ্রনাথ যোগ্যতার সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এম, এ, বি এস সি, উপাধি ধারণ করিয়া দেশে আসেন। তিনি নিজের স্বাৰ্থ বা অর্থচিন্তায় বিব্রত না হইয়া দেশে যাহাতে জ্ঞানের প্রসার প্রবৃদ্ধি হয়, তৎপক্ষে স্বীয়শক্তি নিয়োগ করেন। এজন্য তিনি উচ্চ বেতনের কোন রাজকাৰ্য গ্রহণ না করিয়া শিক্ষাদান কার্য্যে নিযুক্ত হন। দেশের লোকের সৎশিক্ষা ও জ্ঞান প্রবন্ধনের জন্য তদ্বৎ কয়েকটি উন্নত হৃদয় যুবকের উদ্যম ও উচ্চ আকাঙ্খা জনিয়াছিল। এই সুন্দর সঙ্কল্পের আভাস “প্রভাত" পত্রিকায় প্রকাশিত একখানি পত্র পাঠে১০৫ জানা যায়। সে পত্রের প্রথমে লিখিত ছিল—“যে শ্রীহট্টে শ্রীচৈতন্য, রঘুনাথ শিরোমণি, রাজযোগী দিব্যসিংহ, বৰ্ত্তমান যুগের চাণক্যস্বরুপ নৃসিংহ প্রভৃতি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, রাজনীতিতে, ধৰ্ম্মনীতিতে, ভাষাতত্ত্বে, জ্ঞানবত্তায় যে শ্রীহট্ট একদিন বাঙ্গালায় যুগান্তর উপস্থিত করিয়াছিল—আমরা সেই শ্রীহট্টে জন্মগ্রহণ করিয়া যদি আবার এই বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালদেশে জ্ঞানে ও প্রতিভায় আগুন জ্বালাইয়া না দিতে পারি, তবে আমাদের জঙ্গলে জন্ম গ্রহণ করাই ভাল হইত।” মহেন্দ্রনাথ প্রমুখ যুবকদের আকাঙ্খা এই কয়েক পংক্তি পাঠেই বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু মানুষের সাধু ইচ্ছা সৰ্ব্বত্র পূর্ণ হয় কৈ? মহেন্দ্রনাথ সংস্কৃত, বাঙ্গালা, ইংরেজী ও ফরাসী ভাষা জানিতেন। লাটিন ও গ্ৰীক ভাষায়ও তাহার কিছু কিছু জ্ঞান ছিল; তিনি মৃত্যুর পূৰ্ব্বক্ষণে তাহার “প্রিয় ল্যাটিন ও গ্রীক পুস্তকের নাম করিয়া দিন’ ‘দিন বলিয়া তীব্রস্বরে চীৎকার করিয়াছিলেন।” মহেন্দ্রনাথ বি, এস, সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া কিশোরগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন, কিন্তু অচিরেই কাৰ্য্যত্যাগ করিতে হয়। ময়মনসিংহে যখন প্রাদেশিক সমিতির অধিবেশন হয়, স্কুলের সম্পাদক তখন রাজনীতি সংসৃষ্ট উক্ত সমিতিতে শিক্ষক অথবা ছাত্রবর্গকে যোগ দিতে নিষেধ করেন । ইহাতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ব্যহত হইয়াছে বোধ করায় মহেন্দ্রনাথের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে এবং তাহাতেই তিনি কৰ্ম্মত্যাগ করেন। এই ঘটনাতে তিনি তথায় উপস্থিত লোক-নায়কগণের পরিচিত হইয়া পড়েন। ইহার পর এম, এ পরীক্ষায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হইয়া উত্তীর্ণ হন ও জাতীয় বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত বিদ্যালয়ের গণিত অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। স্বদেশ-সেবার যে ব্ৰত তিনি জীবনের লক্ষ করিয়াছিলেন, তদনুরোধে ইহার পরে মহেন্দ্রনাথ হবিগঞ্জ জাতীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। এই স্থানে অবস্থিতি কালে তাহার উদ্যোগে ১৩১৬ বাংলার বৈশাখ মাস হইতে "মৈত্রী” (মাসিক) এবং পরবর্তী বৈশাখ মাস হইতে "প্রজাশক্তি” (সাপ্তাহিক) প্রকাশিত হয়। মহেন্দ্রনাথের “অরুণাচল” আশ্রম আশ্রয় করার পূৰ্ব্ব পৰ্য্যন্ত এই উভয় পত্রিকাই যোগ্যতার সহিত পরিচালিত হইয়াছিল,—যদিও মহেন্দ্রনাথ সাক্ষাৎভাবে মৈত্রী ও প্রজাশক্তির সম্পাদক ছিলেন না। কিন্তু মহেন্দ্রনাথের পরবর্তী জীবন নানাকারণে আমরা আলোচনা-যোগ্য মনে করিতেছি না। বিশেষতঃ ইহার সহিত এমন কয়েকটি সমস্যা বিজড়িত, যাহার রহস্যোড্রেদ এক ভগবান ভিন্ন কাহারও সাধ্যায়ত্ত বলিয়া আমাদের ধারণা হয় না। তাহারই ইচ্ছায় বন্দুকের গুলি দ্বারা আহত অবস্থায় শ্রীহট্টের হাসপাতালে ১৯১২ সালের ১৬ই জুলাই তারিখে মহেন্দ্রনাথ অকালে প্রাণত্যাগ করিয়াছেন; হায় নিয়তি! ১০৫. করিমগঞ্জ হইতে প্রকাশিত "প্রভাত” পত্র---১৩১৮ বাং ১ম পক্ষ, “কতিপয় যুবকের উচ্চ আকাঙ্খা" প্রবন্ধ ।