পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ মাণিক্যচন্দ্র রায় সেনাপতি কৌড়িয়া পরগণার চন্দর গ্রামে “সেনাপতি" বংশ নামে যে এক প্রাচীন বংশ আছে; শীর্ষলিখিত ব্যক্তি হইতেই এ বংশ উক্ত নামে বিশেষ ভাবে কথিত হইয়া আসিতেছে। মাণিক্যচন্দ্রের পিতামহ নরেন্দ্রকিশোর রায় এই স্থানে প্রথম আগমন করেন। তাহার ২য় পুত্র গজেন্দ্রকিশোর জয়ন্তীয়ারাজের সেনাপতিপদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; কিন্তু তিনি দীর্ঘজীবী ছিলেন না। তাহার পুত্র মাণিকচন্দ্র শৌৰ্য বীৰ্য্যে পিতার তুল্য ছিলেন বলিয়া জয়ন্তীয়ারাজ বড় গোসাঞির অনুগ্রহে তিনি পিতৃপদে নিয়োজিত হন। তিনি দীর্ঘকাল এই পদ অলস্কৃত করিয়াছিলেন; তাহা হইতেই সেনাপতি বংশের সমৃদ্ধি ও গৌরব সম্যক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। ইহার পুত্রাদি হয় নাই। তদীয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজেন্দ্রকিশোর রায়ের বংশধরগণই বংশের নাম ও গৌরব রক্ষা করিতেছেন। রাজেন্দ্ররায়ের ৭ম পুরুষ স্থানীয় শ্রীযুক্ত ক্ষিতীশ চন্দ্র রায় সেনাপতি মহাশয়প্রেরিত বিবরণ হইতে ইহা গৃহীত হইয়াছে। মাধব দাস নবদ্বীপবাসী দুর্গাদাসের পূৰ্ব্বনিবাস শ্রীহট্ট ছিল। কোন কারণে তিনি শ্রীহট্ট পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক নবদ্বীপে সন্ত্ৰীক গিয়া বাস করেন। সনাতন ও পরাশর নামে তাহার দুইপুত্র ছিলেন, তন্মধ্যে পরাশরকে সকলে কালিদাস বলিয়া ডাকিত, ইহার একটা কারণও ছিল, তিনি পৈতৃক বৈষবধৰ্ম্ম পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক কালীভক্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। ফলতঃ তিনি কালিদাস নামেই সৰ্ব্বত্র পরিচিত ও খ্যাত হইয়াছিলেন। মাধব কালিদাসেরই একমাত্র পুত্ৰ ॥১০৬ সনাতনের এক কন্যা ও একটি পুত্র হয়, কন্যাটিই জ্যেষ্ঠা, ইহার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া । বিষ্ণুপ্রিয়া পরম লাবণ্যসম্পন্না, পবিত্রচিত্তা ও ভক্তিস্বরূপিনী ছিলেন। ধৈৰ্য্যে বসুমতী তুল্যা এই বালিকাকে সনাতন শ্ৰীগৌরাঙ্গের করে সমর্পণ করিয়াছিলেন; শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী শ্ৰীমহাপ্রভুর দ্বিতীয়া পত্নী ইহার অনুজ ভ্রাতার নাম যাদব মিশ্র। মাধব শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্যের নিকট কিয়ৎকাল শাস্ত্ৰাধ্যয়নপূৰ্ব্বক প্রসিদ্ধ "কৃষ্ণমঙ্গল” গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থ নীলাচলে শ্ৰীমহাপ্রভুর নিকট প্রেরিত হইয়াছিল। শ্ৰীমহাপ্ৰভু গ্রন্থ পাঠে তুষ্ট হইয়া ছিলেন।১০৭ ইহার পরে তিনি অদ্বৈত প্রভুর নিকট দীক্ষিত হন। একদা বাসগৃহে ভক্তগণ পরিবৃত শ্ৰীগৌরাঙ্গকে বালক মাধব দর্শন করিয়া ভক্তির অধিকারী হইয়াছিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ নীলাচল হইতে ঝারিখণ্ড পথে শ্রীবৃন্দাবনে গমন করিয়াছিলেন; তথা হইতে তাহার নীলাচল—প্ৰত্যাগমনের সংবাদ শুনিয়া মাধব তৎসমীপে গমন করিতে উৎসুক হন। মাধব শিশুকালেই পিতৃহীন হইয়া পড়িয়াছিলেন, তাহার জননী বালবিধবা বিধুমুখীদেবী পুত্রের মনের ভাব বুঝিয়া ভীত হইলেন ও পুত্রের বিবাহের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। ব্যাপার ১০৬, “শ্রীহট্ট নিবাসী দুর্গাদাস মহামতি । ১০৭."শ্রীঅদ্বৈত স্থানে শাস্ত্রঅধ্যয়ন। সন্ত্রীক নদীয়া আসি করিলা বসতি॥ মাধব আচাৰ্য্য বলি বিখ্যাত ভুবন৷ তাহার দুই পুত্র অতি গুণধাম । শ্ৰীমদ্ভাগবতের শ্ৰীদশমস্কন্দ। জ্যেষ্ঠ সনাতন কনিষ্ঠ পরাশর নাম॥ গীতে বর্ণিলা তাহা করি নানা ছন্দ । পরাশর বিপ্র বড় কালী ভক্ত হয়। রাখিলা গ্রন্থের নাম শ্ৰীকৃষ্ণ মঙ্গল। কালিদাস নাম তারে সকলে ডাকয়॥ শ্ৰীক্ষেত্রে চৈতন্যপদে সমর্পণ কৈলা । কালীদাস নাম তিহর প্রসিদ্ধি পাইল । শ্রীঅদ্বৈতপ্রভু দ্বারে দীক্ষা দেওয়াইলা৷” তার পুত্র মাধবদাস সুপণ্ডিত হইল। —প্রেমবিলাস গ্রন্থ। —প্রেমবিলাস গ্রন্থ।