পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১০১ দৃষ্টে মাধব পলাইয়া বৃন্দাবনে গেলেন ও পরমানন্দ পুরীর নিকট সন্ন্যাসমন্ত্রে দীক্ষিত হইলেন। মাধব অতঃপর শ্রীরূপ ও সনাতন গোস্বামী হইতে বৈষ্ণবীয় ভজন বিষয়ে উপদেশ গ্রহণ করিয়াছিলেন ॥১০৮ নবদ্বীপে যাহারা শ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর প্রতিষ্ঠিত শ্ৰীগৌর বিগ্রহের সেবাধিকারী, তাহারা তদীয় অনুজ যাদব মিশ্রের বংশ । যাদবের পুত্রই প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক জগদীশ তর্কালঙ্কার। বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌমের ছাত্র শ্ৰীগৌরাঙ্গের সতীর্থ ভবানন্দের নিকট ইনি ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। ইনি ধীদিতি গ্রন্থের অন্যতম টীকাকার। তদ্ব্যতীত বহুসংখ্যক ন্যায় গ্রন্থের টীকা রচনা উপলক্ষে এতাদৃশ সূক্ষ্ম বিচার শক্তির পরিচয় দিয়াছেন যে, তাহার নামে নব্যমতকে কেহ কেহ “জগদীশী" বলিয়া আখ্যাত করেন।১০৯ জগদীশকে শ্রীহট্টের লোক বলা যাইতে পারে না, মাত্র তদীয় পূৰ্ব্বপুরুষ শ্রীহট্টবাসী ছিলেন। মাধবদাসের জন্ম শ্রীহট্টে না হইলেও তাহার পিতা, জ্যেষ্ঠতাত পিতামহ প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী ছিলেন বলিয়া—শ্ৰীহট্টবাসীর সন্তান বলিয়া—তাহার কথা এস্থলে উল্লেখিত হইল। মুনিব উদ্দীন মুনিব উদ্দীন একজন মোসলমান সাধুপুরুষ; ইহার নামান্তর দৈখোরা মোনশী। “যাহারা সংসারত্যাগী মহাপুরুষ, তাহারা প্রায়শঃ নিজ নাম জন্মস্থান ইত্যাদি গোপন করিয়াই থাকেন। ফলতঃ যাহারা নিজকে আউলিয়া বা পাগল বলিয়া রটাইয়া আত্মগোপন করিয়া থাকেন, তাহারা নিজের জন্মগত পরিচয় দিবেন দূরে থাকুক, তাহারা কোন ধৰ্ম্মাবলম্বী, বাহ্য আচার আচরণে অনেকে তাহাও প্রকাশ করেন না। এই নিমিত্ত অনেক ইউরোপীয় পর্য্যটক ফকিরের বেশ ধরিয়া মক্কা মদিনা প্রভৃতি স্থানে গমন করিতে পারিয়াছেন।” “এই সাধুপুরুষের জন্মস্থান নাকি নোয়াখালি অঞ্চলে ছিল। কিন্তু তিনি আপনার জীবনের প্রথমাবস্থায়ই জন্মভূমি পরিত্যাগপূৰ্ব্বক আমাদের এই শ্রীহট্ট অঞ্চলে আসিয়া আমরণ এখানেই অবস্থিতি করিয়াছিলেন। শুনা যায় আজিও বাহাদুরপুরে তাহার সমাধি স্থান আছে। শ্রীহট্টে অনেক মোসলমান সাধু মহাত্মা আসিয়া বাস করেন, তাহার একটু কারণও আছে। সুপ্রসিদ্ধ পীর শাহজলাল মজঃরদ এই স্থানে আসিয়া জীবনের শেষাৰ্দ্ধকাল যাপন করেন এবং এই স্থানে আজিও তাহার সমাধি মন্দির বর্তমান থাকিয়া সমগ্র মোসলমান-জগতে একতম দর্শনীয় পিঠস্থানরূপে পরিণত হইয়াছে।” “এই মোসলমান সাধকটির উপনাম “দৈখোরা" হইবার কারণ এই যে ইনি দধিভক্ষণে বিশেষ আশক্ত ছিলেন। প্রকৃত নাম না জানায় সাধারণে তাহাকে “দৈখোরা মোনশী" বলিয়া সম্বোধন করিত এবং সাধু নিজকে দৈখোরা পাগল বলিয়া অভিহিত করিতেন।” ১০৮. “পরমানন্দ পূরী স্থানে সন্ন্যাস গ্রহণ কৈল। রূপ সনাতনে স্থানে ভজন শিখিল।” —প্রেমবিলাস গ্রন্থ। ১০৯. মাসিক বিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকায় (৪১০ গৌরাদের) ৪০৩ পৃষ্ঠায় "যাদব ও মাধব” প্রবন্ধে ৪১১ অব্দের পত্রিকায় “মাধব ও কৃষ্ণমঙ্গল” প্রবন্ধে এবং ৪১২ অব্দের উক্ত পত্রিকায় “প্রেম বিলাসের প্রামাণ্যতা” “মাধব" ও "বঙ্গ ভাষা ও সাহিত্যগ্রন্থে মাধব সংবাদ" ইত্যাদি প্রবন্ধে আমরা কৃষ্ণমঙ্গল রচয়িতা এই মাধব সম্বন্ধে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিয়াছি। এ প্রবন্ধ তাহারই সংক্ষিপ্ত সার। আর এক পরাশর সূত—তাহারও নাম—মাধবাচাৰ্য্য, তিনি চৰ্ত্তীকাব্য প্রভৃতি প্রণেতা; উক্ত প্রবন্ধাদিতে উহার কথাও পাওয়া যাইবে, তিনি এই কৃষ্ণমঙ্গল রচয়িতা হইতে ভিন্ন ব্যক্তি। তিনি শক্তি উপাসক, সঙ্গীত ব্যবসায়ী ও গৃহাশ্রমী ছিলেন। ইনি বৈষ্ণব ও সন্ন্যাসী।