পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকার পেছনের কথা শ্রীহট্টের ইতিহাস রচিত হয় প্রায় একানব্বই বৎসর পূর্বে। শতাব্দী প্রাচীন সেই গ্রন্থ তিনটি আলোর মুখ দেখে এক অভাবনীয় ইতিহাস সৃষ্টি করে বসে। কারণ গ্রন্থকার সেই গ্রন্থ রচনাকালে সাধারণত ঐতিহাসিকগণ যে রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করেন তিনি তার ধারেকাছেও যাননি। লেখক স্বগীয় অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি মহাশয় যে কতটুকু মমত্ববোধে পুস্তক তিনটি রচনা করেছিলেন তা ভাবলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। শুধুমাত্র একজন লেখকের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়— সম্ভব তার পক্ষে যার হৃদয়ে প্রগাঢ় দেশপ্রেম, স্বজাতির ও দেশবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং জন্মভূমিকে যিনি মাতৃ সমতুল্য বোধ করেন। এক্ষেত্রে শ্ৰী চৌধুরী প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিশ্বাস করার কারণ আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি মহাশয় নিজের দেশকে তার পরিবার, সন্তান, ভাই এমনকি প্রাণাধিক স্ত্রীর ভালোবাসার উপরে স্থান দান করেছিলেন। লেখার কাজে মনোনিবেশকালে তিনি স্ত্রী, শিশুকন্যা, এক ভাই ও পুত্রকে হারান । তারা বিভিন্ন কারণে রোগ-ভোগে ঐ সময়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন। কার্যকালে একেকটি আঘাত আসতে থাকে। তার লিখিত ভূমিকায় পাঠক ঘটনাগুলো দেখতে পাবেন— তাতে অশ্রু রোধ করা পাঠকের পক্ষেও সম্ভব নয় । এহেন আঘাতও শ্রী চৌধুরীকে কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়নি। কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা বিবেচনা করলে তাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা থাকে না। এ কাজ সম্ভব কেন হয়েছিল আজ একশত বৎসর পরে যদি প্রশ্ন তোলা যায় তার জবাব হবে শ্ৰী চৌধুরী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন প্রকৃতির ভাণ্ডারেতে শ্রীহট্টের মাঝে— কতো শোভা মনোলোভা— সৰ্ব্বত্র বিরাজে । বিদেশের বর্ণনায় মুগ্ধ তনুমন— মোহবশে দেশপানে চাইনে কখন । তিনি বলেছেন তখন সংকল্প করলাম শ্রীহট্টের অতীতকথা কিছু কিছু সংগ্ৰহ করিব।” সেই কিছু কিছু সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন তাও এক বিস্ময়ের বিষয়। বিভিন্ন এলাকার প্রধান- অপ্রধান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে তথ্যের জন্য তিনি প্রথমত প্রচারপত্র বিলি করেন । উচ্চ-নিম্ন-মধ্য বংশীয় পরিপার প্রধানদের কাছে তাদের বংশের গৌরব কীর্তিগাথা সুকর্ম-দুষ্কর্ম সকল বিষয় জানতে চান। কিন্তু এক্ষেত্রে তার সচেতনতা বজায় ছিল যেন কেউ নিজের বংশের নাম কামানোর জন্য অতিরঞ্জিত ভুল তথ্য দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত না করেন । এক্ষেত্রে তিনি অতি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করেন। প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্যকে তিনি ক্রস চেক করেন। তা সত্ত্বেও তিনি ভুল করতে পারেন এ বিষয়ে অভিষিক্ত করে। পরিতাপের বিষয়, আজ এমন মানুষের কীর্তির কথা, তার নাম আমাদের