পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১০৯ বয়সে জননীর সহিত নবদ্বীপে আসিয়াছিলেন। একথা প্রবাদরূপে জানা আছে।" মহামহোপাধ্যায় শ্ৰীযুক্ত কামাখ্যানাথ তর্কবাগীশ মহাশয় বলেন, রঘুনাথ পূৰ্ব্বদেশীয় রাঢ়ী শ্রেণীর লোক বলিয়া তাহার ধারণা। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত রাখালদাস ন্যায়রত্ন না কি একদা শ্রীহট্টের কোনও মেধাবী ছাত্রকে রঘুনাথ শিরোমণির দেশের উপযুক্ত ছাত্র বলিয়া প্রশংসা করিয়াছিলেন।” “দেখা গেল যে, পশ্চিম বঙ্গের মনীষিগণ রঘুনাথ পূৰ্ব্ববঙ্গের লোক বলিয়া জানেন; এবং পূৰ্ব্ববঙ্গের পণ্ডিতগণ তাহাকে শ্রীহট্টের অধিবাসী বলিয়া নির্দেশ করিতেছেন। ইহাই স্বাভাবিক; পশ্চিমবঙ্গের নিকট সকল জেলার ব্রাহ্মণই এক—কিন্তু পূৰ্ব্ববঙ্গবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন অংশের খবর রাখিবারই কথা।" আলোচনা— রঘুনাথ শিরোমণির জন্মস্থান বিষয়ে নিঃসন্দেহ হইলেও তৎসম্বন্ধে দুইটি অবান্তর বিষয়ে শ্রীহট্টবাসী কেহ কেহ সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন—তন্মধ্যে আমাদের শ্রদ্ধাস্পদ কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন। সন্ধিগ্ধবিষয়ে উদাসীন থাকিলে ঐতিহাসিকের প্রকৃত কৰ্ত্তব্য করা হয় না, তাই তদ্বিষয়ে এস্থলে উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করিতেছি—যদিও পূৰ্ব্বকথিত প্রতিবাদে এই বিষয়ে অনেক আলোচনা করা হইয়াছে। সন্দেহের বিষয় দুইটি— (১) রঘুনাথ শিরোমণি কাত্যায়ন গোত্রীয় ছিলেন কি না; (২) তিনি কাত্যায়ন গোত্র হইলেও রঘুপতির ভ্রাতা ছিলেন কি না। প্রথম সন্দেহের কারণ এই যে “কাত্যায়ন খনিজ মণেঃ” ইত্যাদিক যে শ্লোকটির অস্তিত্ত্ব ও মৌলিকতা বিষয়ে অনুসন্ধান করিয়া উল্লেখিত বিশিষ্ট ব্যক্তি হতাশ হইয়াছেন। তিনি জানিয়াছেন যে সংস্কৃত কলেজের ন্যায় ও দর্শন শাস্ত্রের প্রবীন অধ্যাপকগণও ঐ শ্লোকটি অবগত নহেন বলিয়া তাহাকে লিখিয়াছেন। দ্বিতীয় সন্দেহের কারণ এই যে শ্রীযুক্ত পণ্ডিত রামকমল শাস্ত্রী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের বংশবিবরণের অন্তর্ভুক্ত করিবার জন্য তদীয় বংশলতিকা যাহা প্রদান করিয়াছেন, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে তিনি স্বয়ং রঘুপতি হইতে নবমপুরুষ মাত্র। শতাব্দীতে তিন পুরুষ কল্পনা করিলেও রঘুপতি মাত্র ৩০০ বৎসরের লোক হইয়া দাড়ান, তাহার অনুজ রঘুনাথ কিরূপে চারিশত বৎসরের শ্রীমদৃ মহাপ্রভুর সমপাঠী হইতে পারেন? প্রথম বিষয়টি অভিনব, কিন্তু দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়া বহু লেখাপড়া হইয়াছে। যাহাহউক এস্থলে উভয় সম্বন্ধে মীমাংসার কথা বলিতে হইল। শ্রীযুক্ত রামকমল শাস্ত্রী মহাশয় হইতেই “কাত্যায়ন খনিজমণেঃ" ইত্যাদিক শ্লোক পাইয়াছিলাম। তাহাকে উপরিউক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা বিজ্ঞাপিত করা হইয়াছিল। তাহার প্রত্যুত্তরে তিনি যাহা লিখিয়াছেন, তাহার মৰ্ম্ম এই ঃ– (১) যে পুস্তকে তিনি ঐ শ্লোকটি পাইয়াছেন, সেই পুস্তকের নাম "ক্ষণভঙ্গুর-বাদ-গদাধরী টীকা" । ইহার স্বত্ত্বাধিকারী পণ্ডিত জয়নারায়ণ তর্করত্ন-যিনি নবদ্বীপের স্বগীয় ভুবন মোহন বিদ্যারত্ন মহামহোপাধ্যায়ের বাড়ীতে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। ঐ গ্রন্থের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রথমেই ঐ শ্লোকটী রহিয়াছে। অতএব অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিগণ শ্লোকের প্রামাণ্য অবধারণ করিতে পারেন। এস্থলে বক্তব্য যে রঘুনাথ কাত্যায়ন গোত্রীয় হইলে শ্রীহট্টের না হইয়া যান না। কেননা কাত্যায়ন গোত্র শ্রীহট্ট ভিন্ন দেখা যায় না। অন্যত্র দুএক ঘর যদি থাকেন, তাহাদের পূৰ্ব্বপুরুষ শ্রীহট্ট হইতেই গিয়াছেন; একথা বলিয়া থাকেন। (শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে এই বিষয় বিস্তারিত আলোচিত হইয়াছে।)