পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ বড়শী স্পর্শিতে যাইতেছেন কেন?”১২৩ রঘুনাথ শুনিয়াও শুনিলেন না, তাহার অন্তরে বাসনার অনল জ্বলিতেছে; সামান্য দুটি কথায় তাহা নিৰ্ব্বাপিত হইবার নহে। তিনি রমণীকে অনুনয় করিতে লাগিলেন এবং তদীয় স্থৈৰ্য্য ও পবিত্রতা প্রভৃতি দর্শনে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে লাগিলেন। প্রভাতে রঘুনাথের বিদায় কালে গৃহস্বামী আগন্তুকের সঙ্গে এক বোঝা পুথি দেখিয়া জিজ্ঞাসিলেন যে, তিনি এত পুথি লইয়া কোথায় যাইতেছেন। এ প্রশ্নে রঘুনাথের বড়ই সুবিধা হইল, তিনি উত্তর করিলেন যে, তিনি বিদ্যার্থী, থাকিবার স্থান অন্বেষণ করিতেছেন, গৃহস্বামী স্থান দিলে এখানে থাকিয়াই এসব আলোচনা করিবেন। সরল গৃহস্থ স্বীকৃত হইলেন, ও রঘুনাথ তথায় অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। কিছুদিন পরে বর্মানিবাসী শ্যামকিশোর ঘোষ সেই গৃহস্থের বাড়ীতে আসিলেন। শ্যামকিশোর সহজধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন,১২৪ তিনি রঘুনাথের ভাবভঙ্গিতে বুঝিতে পারলেন যে, গৃহস্থ তনয়াতে তিনি আকৃষ্ট। শ্যামকিশোর তখন নিৰ্জ্জনে রঘুনাথকে বলিলেন “ঠাকুর, যে বিষ প্রাণনাশক, সদ্বৈদ্যের ব্যবস্থায় তাহা অমৃত সদৃশ হিতপ্রদ হইয়া থাকে, তুমি যে বাসনানলে পুড়িতেছ, সুপথে চালিত হইলে তাহাও শান্তিপ্রদ হইতে পারে; যদি আত্মহিত কামনা কর, তবে সদ্বৈদ্যের আশ্রয় গ্রহণ কর, দুলালীতে বৈদ্যরাজ তিলকচন্দ্রের ১২৫ কাছে গেলে সুব্যবস্থা পাইবে।” রঘুনাথ বীরাচারী ছিলেন, শ্যামকিশোর ঘোষের নিকট সহজধর্মের কিছু কিছু তথ্য অবগত হইয়া, তাহার ভালই বোধ হইল; উভয় মতে অনেকটা সাদৃশ্যও দেখিতে পাইলেন, কাজেই তিনি কালবিলম্ব না করিয়া দুলালীতে চলিলেন। শ্যামকিশোর ঘোষ তখন সেই গৃহস্থকে নানারূপ প্ৰবোধ বাক্য বলিয়া কন্যাসহ দুলালীতে পাঠাইলেন। গৃহস্থ শ্যামকিশোরকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেন। দুলালীতে তিলকরাম গুপ্তের সহিত রঘুনাথের দেখা ও কথাবাৰ্ত্ত হইল, রঘুনাথ তাহার নিকট সহজধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইলেন, সেই বিধবাই তাহার সাধনের সহায়স্বরূপ নির্দেশিত হইলেন।১২৬ ইতিপূৰ্ব্বে তিলকরাম শিরোমণি দুলালীর নারায়ণনামক জনৈক ব্রাহ্মণকে শিষ্য করিয়াছিলেন, এক্ষণে মহাবংশজাত রঘুনাথকে শিষ্য করায় ব্রাহ্মণসমাজে একটা আন্দোলন উপস্থিত হইল। ব্রাহ্মণবর্গ ইটার প্রসিদ্ধ পণ্ডিত “সাৰ্ব্বভৌমকে” মুখপাত্র রূপে লইয়া বিচার করিতে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তিলকরামের সহিত তাহাদের বিচার হইল না, রঘুনাথের কূটকৌশলে দ্বারদেশ হইতেই তাহাদিগকে একরূপ পরাজয় পাইয়া চলিয়া যাইতে হয়।১২৭ অতঃপর রঘুনাথ ঢেউপাশাতে প্রত্যাগমন করেন; আর তিনি গৃহে না গিয়া সেই শূদ্ৰ তনয়াকে লইয়া সহজভজনে প্রবৃত্ত হইলেন। দেখিতে দেখিতে তাহার দল বৰ্দ্ধিত হইতে লাগিল। ১২৩. “বড়শী গ্রাস করে মৎস্য আধার দেখিয়া পাছে প্রাণ যায় তার কাদিয়া কাদিয়া॥ সেইরূপ পাপ বশী প্রকৃতি সকল। জ্ঞানী হইয়ে তুমি কেন হইলে পাগল।” —রঘুনাথ লীলামৃত । ১২৪. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৮ম অধ্যায়ে ইহার কথা দেখ। ১২৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাগ ১ম খণ্ড ৫ম ইহার কথা দেখ। ১২৬. সহজধর্মের মৰ্ম্ম শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাগ ৮ম অধ্যায়ের সংক্ষেপে বলা গিয়াছে। স্ত্রীলোকের সাহায্য-সাপেক্ষে বলিয়া এ ধৰ্ম্ম-সাধনে ফল লাভ করা সাধারণের পক্ষে এক রূপ অসাধ্য। সুতরাং ইহাতে নানারূপ ভ্রষ্টাচার ও পাপাচারের নিদর্শন সৰ্ব্বদাই সীমিত হইয়া থাকে । ১২৭. “দ্বাররূপী প্রভুর কাছে পণ্ডিতের গণ। তর্কেতে হারিয়া সবে করিলা গমন৷” রঃ লীঃ।