পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ একবার পঞ্চখণ্ডের স্বগীয় বাসুদেবের রথটানাকালে দৈববশতঃ টানের বেগে রথের কিছুটা গড়াইয়া, যে দীঘীর তীরে রথটানা হইতেছিল, উহার উপরে চলিয়া যায়। কি উপায়ে রথকে ঠিক রাখিয়া যথাস্থানে আনা যাইবে, যখন সকলেই এই পরামর্শে ব্যস্ত ছিল, তখন রঘুরাম কাহাকেও কিছু না বলিয়া জলে নামিয়া, ঠেলিয়া একাই রথ উঠাইয়া দেওয়াতে দর্শকমাত্রই বিস্মিত হইয়া রহিল। একদা সন্নিকটবৰ্ত্তী গোলাপরায়ের বাজারের অংশ লইয়া দুই বিরুদ্ধ দলে হাঙ্গামা উপস্থিত উৎপাটিত করিয়া লইলে বিপক্ষগণ তাহার পরাক্রমের পরিচয় পাইয়া পলাইয়া প্রাণ বাচাইয়াছিল। রঘুরামের যে জমিজমা ছিল, তাহার রাজস্ব না দেওয়াতে তাহাকে শ্রীহট্টে নেওয়া হয়, কিন্তু রঘু রাজস্ব পরিশোধ করিতে অপারগ হইলে, তখনকার একতর ভীষণ দণ্ড, তক্তার নিকট চাপ দিলেও তাহার কোন কষ্টই হয় নাই। তাহার বলের পরিচয় পাইয়া কর্তৃপক্ষ বিদেশাগত গঠন ও দৃঢ়তা দৃষ্টে শহর ত্যাগ করিয়া চলিয়া যায়। কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হইয়া রঘুর অধিকৃত ভূমির রাজস্ব রেহাই দেন। রঘুনাথের ভ্রাতার নাম ছিল রামনারায়ণ, ইহার ৭ম পুরুষে রায়চাদের উদ্ভব, রায়চাদের সময়ে রঘুরামের অজ্জিত সম্পত্তি কিছুই ছিল না, রায়চাদের শ্রম ও সততামূলে অবস্থার সুপরিবর্তন ঘটে, ইহার প্রপৌত্র হইতে রঘুরামের কথা প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। রতনমণি সাহাজী রতনমণি সাহাজী শ্রীহট্টশহরবাসী সাহুবংশীয় একজন ব্যবসায়ী; ইহার চরিত্র অতি মাৰ্জ্জিত ছিল । সাধারণতঃ লোকের বিশ্বাস “বাণিজ্য যে করে তার সত্য কথা নাই।” ইদানিং অনেকক্র তাহা দৃষ্ট হইলেও পূৰ্ব্বে ব্যবসায়িবর্গের ব্যবহার প্রায়শঃ ইহার বিপরীত ছিল। এজন্য “মহাজন” ও “সাধু" ইত্যাদি সততাসূচক নাম প্রাপ্ত হন। রতনমণি যদিও বড় বেশীদিনের ব্যক্তি নহেন, তথাপি তাহার চরিত্ৰ পূৰ্ব্বকার বণিশ্বর্গের ন্যায় নির্দোষ ও সততাময় ছিল। রতনমণি পরম সাধু ছিলেন, কৃষ্ণনাম শ্রবণমাত্র তাহার চক্ষু ছল ছল করিত, কৃষ্ণের মহিমাসুচক কোন সঙ্গীত শুনিলে চক্ষে জল আসিত। শ্রীভগবানের প্রতি কিরূপ আশক্তিতে এ ভাব জন্মে, সংসারের কীট আমরা তাহার কি বুঝিব? যে কৃষ্ণ নাম লয়, রতনমণির গৃহে তাহার অবারিত দ্বার ছিল। ঢাকাদক্ষিণের শ্ৰীমহাপ্রভূবিগ্রহ দর্শনে তাহার অত্যন্ত অনুরাগ ছিল, প্রতিবৎসর বারুণী, ঝুলন ও রথে তিনি নিয়মিতরূপে যাইতেন। তদ্ব্যতীত যখনই কোন একটা উৎকৃষ্ট ফল পাইতেন, অমনি তাহা লইয়া শ্ৰীমহাপ্রভুকে দিতে আসিতেন। তখন পরিপুষ্ট পীতবর্ণ কদলী, কখন বা সরস সুপক্ক আম্র, কোল দিন একটা বৃহৎ কায়ফল (পেপে) লইয়া ঢাকাদক্ষিণে যাইতে প্রায়ই তাহাকে দেখা যাইত । একবার রথের পূৰ্ব্বে তিনি বৃন্দাবনে গিয়াছিলেন। সেবারে রথের দিন, ঢাকা দক্ষিণে তাহার যাওয়া হইল না, মনে বড়ই অশান্তি উপস্থিত হইল। রথ হইতে ঠাকুর না নামান পৰ্য্যন্ত তিনি অভুক্ত থাকিতেন ; এবার সে নিয়মে অভুক্ত অবস্থায় ঠাকুর তুলার নির্দিষ্ট সময়ে তিনি তুলসী তলায় গিয়া বসিয়া রহিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে তাহার ভাবের ঘোর ভাঙ্গিয়া গেল, ত্রস্তভাবে “আহা কি হইল” বাক্য উচ্চারণ করিয়াই “রক্ষা হইল” বলিয়া স্থির হইলেন। নিকটে শ্ৰীমহাপ্রভুর সম্বন্ধে একটা অনুচিত চিন্তার উদ্রেক হইয়াছিল।"