পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ধৰ্ম্মলাপ করিয়া থাকে। দিবসে সংসারের কাজকৰ্ম্ম করিয়া রজনীতে একত্রে ধৰ্ম্মসাধন করাই এই মণ্ডলীর নিয়ম । ইহারা সত্য ও প্রেমের সাধক। বোধ হয় হিন্দুধৰ্ম্মাশ্রিত সহজ ভজনাদি উপধৰ্ম্মের অনুকরণে রমজান দেহ ত্যাগ করিয়াছেন। যাহারা দ্বারা একটি ধৰ্ম্মমণ্ডলী গঠিত হইতে পারিয়াছে, নিরক্ষর হইলেও তাহার গুণ ও কাৰ্য্য স্মরণীয় সন্দেহ নাই। রমাকান্ত রায় “শ্রীহট্টজিলার অন্তর্গত জলসুখা গ্রামে ১৮৭৩ খৃঃ রমাকান্ত রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতা কালীকিশোর রায় সেই অঞ্চলে একজন সুবিখ্যাত পুরুষ ছিলেন।” “জলসুখার জমিদারগণ দানশীলতা ও ধৰ্ম্মপ্রাণতার জন্য বিখ্যাত।” “রমাকান্ত রায়ের মাতামহগণের অনেকেই শ্রীহট্ট হইতে পদব্রজে পূরী নৌকাযোগে মথুরা বৃন্দাবনাদি তীর্থদর্শনে বহির্গত হইতেন।” “রম্যকান্তের বয়স যখন একবৎসর, তখন তাহার মাতাপুরী গমন করেন।” ঐ সময় শিশু রমাকান্ত অতিরুগ্ন হইয়া পড়েন এবং তাহার জীবনের আশা ছিল না। “বাল্যকালেই তাহার পিতৃমাতৃবিয়োগ হয়, সুতরাং পিতৃব্য সন্তানের মথুরচন্দ্র রায়ের হস্তেই লালনপালনের ভার ন্যস্ত হয়। তিনি আপন সন্তানের ন্যায়ই স্নেহ করিতেন। “জলসুখার কৃষ্ণগোবিন্দ মধ্যে ইংরেজী বিদ্যালয়ে রমাকান্ত শিক্ষা আরম্ভ করেন। এই স্কুল তাহারই মাতামহ সুপ্রসিদ্ধ সদাশয় জমীদার কৃষ্ণগোবিন্দ রায়ের স্থাপিত। রমাকান্ত এখান হইতে ১৮৯০ অব্দে মধ্যে ইংরেজী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বৃত্তিলাভ করেন ও শ্রীহট্ট গবর্ণমেন্ট স্কুলে পড়িতে যান। কিছুদিন পর শ্রীহট্ট হইতে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে গমন করেন। সেখান হইতে আবার ১৮৯৩ অব্দে শ্রীহট্টে ফিরিয়া আসেন এবং ১৮৯৪ অব্দে গবর্ণমেন্ট স্কুল হইতে এন্ট্রেস পাশ করেন। তৎপর কলিকাতা সিটি কলেজে দুই বৎসর অধ্যয়ন করেন।” “ছাত্রাবস্থায় সকলের সঙ্গেই তাহার সদ্ভাব ছিল। একদিন কাহারও সহিত ঝগড়া করিতে দেখা যায় নাই। কিন্তু রমাকান্তকে সকলেই বড় ভয় করিত। কারণ তাহার সৎসাহস বড়ই প্রবল ছিল।” “রমাকান্ত যখন মধ্য ইংরেজী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়েন, ক্রিকেট ক্রীড়ার সময় তখন ঘটনাবশতঃ একটি বালক সাংঘাতিকরূপে আহত হয় ও সেই আঘাতেই মারা যায় " "এমন গুরুতর অভিযোগ পড়িয়াও নির্ভীক চিত্তে বালক রমাকান্ত উকীলদের জটিল প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিয়া প্রশংসালাভ করেন। বলাবাহুল্য যে তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ টিকিতে পারে নাই।” “সাধারণ লোকের উপর তাহার প্রীতি যেমন অল্পবয়সে বিকশিত হইয়াছিল, এতে বিক্ষিত না হইয়া থাকা যায় না। একদিন পথে যাইতে রমাকান্ত দেখিতে পাইলেন যে একজন ভিক্ষুক ওলাউঠাগ্রস্ত হইয়া রাস্তার পাশে পড়িয়া আছে। রমাকান্ত তখনই দুচারিজন লোক সংগ্ৰহ করিয়া তাহাকে নিজের বাড়ীতে আনিলেন ও যথাসম্ভব ঔষধাদি ব্যবস্থা করাইলেন, তাহার সাহায্যে ভিক্ষুক আরোগ্য লাভ করে। আর একবার একটি বিদেশী নৌকার মাঝি পীড়িত হইয়া পড়ে। মাঝিটি বন্ধুবান্ধবহীন ও নীচ জাতীয় ছিল, তার শুশ্রষার লোক কেহ ছিল না। রমাকান্ত সে সংবাদে আর স্থির থাকিতে পারিলেন না, অমনি নিজে গিয়া তার আর শুশ্ৰষা আরম্ভ করিলেন।” তাহারাই পরে শুশ্রুষায় প্রবৃত্ত হইল।” এইরূপ ক্ষুদ্র বিষয়ে তাহার মহত্বের পরিচয় পাওয়া যাইত, বাহুল্য ভয়ে যে সমস্ত উল্লেখিত হইল না। রমাকান্ত রায় বাঙ্গালীর শিক্ষার্থ জাপান যাত্রার প্রদর্শক, জাপানে খনিতত্ত্বে বুৎপন্ন হইয়া তথাকার একটি খনির তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। জাপানে কিছুদিন কাজ করিয়া তিনি