পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বতীয় অধ্যায় : রঙ্গদ বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৩ রাঘবের মৃত্যুর পর তাহার তনয়দ্বয়চ মধ্যে মনোমালিন্য ঘটিয়াছিল; তাহাতে কনিষ্ঠ মহেশ্বর বিশারদষ্ট রেঙ্গায় গমন করেন, তদ্বংশীয়গণ তথায় আছেন। রাঘবের জ্যেষ্ঠপুত্র দুর্গাদাস চূড়ামণি। চূড়ামনির একমাত্র পুত্র হরিহর তর্কপঞ্চানন একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। একদা তাহাকে বিষধর সর্প দংশন করে, মরণ আসন্ন মনে করিয়া তিনি ইষ্টনাম জপ করিতে থাকেন ও চিত্তের একাগ্রতায়-নামগ্রহণবেশে তিনি অপূৰ্ব্ব দশা লাভ করেন। কথিত আছে যে সপ-বিষ তাহার শোণিতে বিষক্রিয়া সম্পাদন করিতে না পারাতে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন নাই। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থেও এরূপ এক দৃষ্টান্ত আছে। শ্ৰীগৌরানুচর গরুড় পণ্ডিত এইরূপ হরিনাম করিয়াই আসন্ন মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পাইয়াছিলেন।১০ যাহার প্রভাবে মানব মর হইয়াও অমরত্ব লাভে সমর্থ, যে মহিমাময় হরিনাম সাধককে নামীর সান্নিধ্যদানে সক্ষম, কালভয়বারণ সেই হরিনামের ফল কেবল মৃত্যুবরণেই পৰ্য্যবসিত হইতে পারে না; এ সকল নামের আনুষঙ্গিক ফল, মুখ্য ফল নহে। এ সকল ঘটনা মনের একাগ্রতা বা তজ্জনিত শারীরিক কোন ক্রিয়া বিশেষের ফল বলিয়া মনে করাই যদি সঙ্গত বোধ হয়—আপত্তি নাই, এবং ইহাতে সাধারণের নাম মাহায্যে বিশ্বাসাধিক্যেরই সম্ভাবনা। হরিহরের একমাত্র পুত্রের নাম রঘুনাথ ন্যায়ালঙ্কার, ইনি স্বীয় কবিতুগুণে বিখ্যাত হইয়াছিলেন,১১ কিন্তু তদীয় কোন কাব্যগ্রন্থের সংবাদ আমরা জ্ঞাত হইতে পারি নাই। গঙ্গারাম শিরোমণি ইহারই পুত্র। ব্রাহ্মণ ভক্তিযোগে সিদ্ধ ছিলেন । অতর্কিত ভাবে এইরূপে বিপদে পড়িয়া তিনি ভাবিত হইলেন । ইহার শেষফল কি? হত্যা অথবা জাতি পাত! ব্রাহ্মণ ইহা বুঝিলেন, বুঝিয়া চিন্তাৰিত চিত্তে চিন্তামণির শরণ হইলেনঃ “মৌনী হইয়া মানসে স্মরয়ে ভগবান, কলঙ্ক সমুদ্র হৈতে কর পরিত্রাণu"-শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী । দিবা অবসান হইল, সেই সিদ্ধমহাপুরুষের কাতর ক্ৰন্দনে “কলঙ্কভঞ্জন" কর্ণপাত করিলেন; অঘটন-ঘটন পটীয়সী শক্তির আবির্ভাব ঘটিল, সন্ধ্যার অন্ধকারে দিভূমণ্ডল আবরিত হইতে না হইতে উষা বিকাশের ন্যায় পূৰ্ব্বকাশে এক খণ্ড শুভ্ৰ জ্যোতিঃ উদ্ভাসিত হইল,-ঠিক যেন চন্দ্রোদয়! সভাসদ্বর্গ স্তম্ভিত ও চমকিত হইল, নবাব বিচলিত হইলেন ও পণ্ডিত সকলে উপস্থিত হইয়া ক্ষমা প্রার্থনায় তাহাকে তুষ্ট করিলেন। তিনি পণ্ডিতের সম্মানের জন্য বহুধন ও ভূসম্পত্তি দিতে চাহিলেন। রাঘব তত্তাবৎ গ্রহণ না করিয়া বুরুঙ্গা ও তৎপার্শ্ববৰ্ত্ত কয়েক খানা গ্রাম মাত্র গ্রহণ করিলেন। অমাবস্যায় চন্দ্রোদয়-এই অদ্ভুত ও অসদ্ভব বৃত্তান্ত যে এস্থলে সন্নিবেশিত করিলাম, ইহার কারণ যে, এই বৃত্তান্তটি উল্লেখে এ জিলায় বহুতর বংশীয় গণই স্বীয় কোন এক পূৰ্ব্বপুরুষের গৌরব খ্যাপন করিয়াছেন। যদি সত্যই এরূপ একটা অসম্ভব ঘটনা ঘটিয়াই থাকে, তবে বহুস্থানে বহু বংশেই এমনটা ঘটিয়াছিল, তাহা বলা যায় না। ইহাতে এইমাত্র বুঝা যায় যে একটা প্রসিদ্ধ ঘটনা লইয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে লোকে টানাটানি করে। এই কথার উদাহৰণ জন্যে এই এক ঘটনাই স্থানান্তরে উল্লেখ মাত্র করিয়া পাঠকের স্মৃতিপথারূঢ় করিব। এই ঘটনা নিম্বাদিত্যের আখ্যানটিই প্রথমে স্মরণ করিয়া দেয় । বংশ তালিকা-ক পরিশিষ্টে দ্রষ্টব্য। পরবর্তী ৪র্থ অধ্যায়ে ইহার অধোবংশ্য কথা বর্ণিত হইবে। তদ্ব্যতীত জানা যায় যে বুরুঙ্গা হইতে মধুকর বংশ্য বসন্তরায় নামক এক ব্যক্তি লংলার পূৰ্ব্ব পাহাড়ে গিয়া আধিপত্য করেন, তাহাৰ নামে “বসন্ত ছড়া” ”বসন্তের পথ” প্রভৃতি তথায় রহিয়াছে। কিন্তু বুরুঙ্গার বংশ তালিকায় বসন্ত রায়ের নাম পাওয়া যায় না । ১০. "গরুড় পণ্ডিত লয়েন শ্রীনাথ মঙ্গল । নাম বলে বিষ যারে না করিল বহু!"-শ্রীচৈতন্যচরিতাকৃত। .