পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৫ শিক্ষাদানে যোগ প্রদান করেন। রাধানাথ বাবু ও সনাতন বাবু এক কপদকও বেতন লইতেন না। রাধানাথ বাবুর স্কন্ধে স্কুল ব্যতীত পরিদর্শকের ভারও ন্যস্ত হইয়াছিল বলিয়াছি, এ দুইটি কাৰ্য্য সুদক্ষতার সহিত সম্পাদন করিতে যে কতদূর পরিশ্রমের প্রয়োজন, তাহা সহজেই বোধগম্য হয়। কিছুদিন পরে সনাতন বাবুর সহিত তাহার মতদ্বৈত উপস্থিত হয়। সনাতন বাবু ৪র্থ শ্রেণী পৰ্য্যন্ত বাইবেল পাঠের প্রবৰ্ত্তন করিতে চেষ্টা করিলে, রাধানাথ তাহার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এই হইতে উভয়ের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হয় এবং প্রশ্ন উঠে যে উভয়ের মধ্যে স্কুলের আধিপত্য কে গ্রহণ করবেন? কিন্তু তিনি ভাবেন নাই যে যিনি সমস্ত ছাত্রের হৃদয় অধিকার করিয়া বসিয়াছেন, তাহাকে স্কুল হইতে তাড়ান সহজ নহে। ঘটনাস্রোত গড়াইয়া চলিল, একদিন যখন রাধানাথ স্কুলে আসিতেছিলেন, তখন সোম মহাশয় তাহাকে স্কুল আসিবার পূৰ্ব্বেই বলিলেন, “আমাদের একজনকে আজ স্কুলের সংশ্ৰব ত্যাগ করিয়া, বিদ্যালয় পরিচালনার পথ নিষ্কন্টক করা কৰ্ত্তব্য ।” অমনি রাধানাথ বাহিরে তাকিয়াই ছাত্রবর্গকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন “এস ছাত্রগণ! আমার বিদ্যালয় আমিই পরিচালন করিব।” ছাত্রগণ নিমেষ মধ্যে রাধানাথের পার্শ্বে “কাতারে কাতারে” আসিয়া দাড়াইল রাধানাথের হৃদয় তখন আনন্দে উৎফুল্প হইয়া উঠিল; তিনি স্কুলের অপ্রতিদ্বন্দী পরিচালক হইলেন। ছাত্রদের প্রতি তাহার এরূপ স্নেহ ও সহানুভুতি ছিল যে বন্ধুহীন কোন প্রবাসী ছাত্র পীড়িত হইয়া পড়িলে তিনি স্বয়ং ঔষধ ও পথ্য লইয়া তাহার পরিচর্য্যায় নিযুক্ত হইতেন। স্কুলের ন্যায় পরিদর্শক পত্র লইয়াও তাহাকে বিব্রত হইতে হইয়াছিল। যে সকল ভদ্রলোক যৌথভাবে পরিদর্শকের ব্যয় বহন করিতেছিলেন, একে একে তাহারা পৃষ্ঠভঙ্গ দেন, তখন প্রেসটি স্বগীয় দীননাথ মোক্তার মহাশয় ক্রয় করেন ও রাধানাথ চৌধুরীর অত্যগ্রহে পরিদর্শক বন্ধ না করিয়া প্রচারভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ইহাতে অর্থক্ষতি হইতেছে দেখিয়া কিছুদিন মধ্যেই তিনি পরিদর্শক বন্ধ করিতে উদ্যোগ করেন। তখন রাধানাথ স্বয়ং ইহার মুদ্রণব্যয়ভারও গ্রহণ করেন। কেবল দেশের হিত কল্পেই জানিয়া শুনিয়া এইরূপ অর্থক্ষতি সহ্য করিতে তিনি অগ্রসর হন। রাধানাথের আর্থিক আয় যে বড় বেশী ছিল তাহা নহে; কিন্তু তাহার উদ্দেশ্য সৎ ছিল এবং প্রবল সৎসাহস ছিল । i অল্প দিনেই রাধানাথ বুঝিতে পারিলেন যে নিজের প্রেস না হইলে এইরূপে পরিদর্শকের প্রাণ বাচাইয়া রাখিতে পরিবেন না, তখন তিনি একটি প্রেস করিতে সঙ্কল্প করিলেন, কিন্তু অর্থ কই? তখন তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি পরহস্তে দিয়াও পরম প্রিয় প্রতিজ্ঞাটি পুরাইতে অভিপ্রায় করিলেন। সৎকার্যে তাহার একান্ত উৎসাহ ও আন্তরিকতা দৃষ্টে মোহিত হইয়া তদীয় ভ্রাতৃবর্গ এই সদনুষ্ঠানে তাহাকে সহায়তা করিলেন। তখন জমি বিক্রয় ব্যতীতই একটি প্রেস আনয়ন করা হইল এবং পরিদর্শক নিজের প্রেস হইতে বাহির হইতে লাগিল । রাধানাথ চৌধুরীর সময়ে শ্রীহট্ট শহরে ক্ষুদ্র বৃহৎ হিতকর অনুষ্ঠান যাহা কিছু হইয়াছিল, তাহাতেই তাহার সংশ্রয় ছিল। শহরে কাহারও গৃহে অগ্নি লাগিলে সৰ্ব্বাগ্রেই তাহাকে তথায় দেখা যাইত; কেহ মোকদ্দমা করিতে আসিয়া নিরাশ্রয়ে পীড়িত হইয়া পড়িলে, রাধানাথকে তাহার শুশ্রুষায় ও পরিচর্য্যায় নিয়োজিত রহিয়াছেন দৃষ্ট হইত। একদা এক রাজপুরুষ পতিপার্শ্বস্থ এক রুগ্ন ভিখারীর বিনাদোষে কশাঘাত করিতে থাকেন, রাধানাথ বিদ্যুৎ বেগে মধ্যে পড়িয়া সে আঘাত নিজপৃষ্ঠে লইলেন। দেখিয়া লোক অবাক হইয়া চলিয়া গেলেন। একদা কলিকাতা হইতে ষ্টিমারে প্রত্যাগমন কালে একটা প্রথম শ্রেণীর আরোহী ৩য়