পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ শ্রেণীর এক দরিদ্র আরোহীকে তামাক সেবনোপলক্ষে প্রহার করিতে উদ্যত হইলে, রাধানাথ বাধা দিয়া তাহাকে নিবৃত্ত করেন। ভাড়া দিতে পারলেই এখনই দরিদ্র ব্যক্তি প্রথম শ্রেণীতে স্থান পাইতে পারে ইহা স্মরণ করাইয়া দিলেন। আর একবার একব্যক্তি এক নিৰ্ব্বোধ আরোহীকে তাহার জাতি তুলিয়া গালি দেয়, রাধানাথ ইহার প্রতিবাদ করিয়া সেই উদ্ধত ব্যক্তিকে নিরস্ত করেন। তাহাকে সংবাদপত্র সম্পাদক জানিয়া সে ব্যক্তি পরে রাধানাথকে ভদ্রতার সহিত একটা “চুরট" দিতে অগ্রসর হইলে, রাধানাথ তাহা প্রত্যাখান করিয়া বলেন—“যিনি একটি দুর্বল ব্যক্তিকে জাতি তুলিয়া গালি দিতে পারেন, তাহার প্রদত্ত কিছু গ্রহণ করিতে আমি ইচ্ছা করি না।" এই কথার পর সে ব্যক্তিকে লজ্জিত হইয়া আপন ক্রটি স্বীকার করিতে হয়। রাধানাথ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হইয়া শ্রীহট্ট হইতে প্রথমে গমন করেন। প্রত্যাগমনপূৰ্ব্বক কংগ্রেস সম্বন্ধে এক বক্তৃতা দেন। জাতীয় স্কুলের প্রথমে পণ্ডিত শ্রীযুক্ত ব্ৰজধন বিদ্যানিধির সহিত এতদ্বিষয় মতান্তর হওয়ায়, বিদ্যানিধি সেই সভাতেই প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। বিদ্যানিধি ভাবিয়াছিলেন যে, যেরূপ তীব্র প্রতিবাদ তিনি করিয়াছেন, তাহাতে রাধানাথ নিশ্চিত বিরক্ত হইয়া থাকিবেন; এমতাবস্থায় জাতীয় স্কুলে তাহার আর কাজ করা শোভনীয় হইবে না। এই ভাবিয়া তিনি ছাত্রবৃন্দ হইতে বিদায় লইয়া, একখানা ত্যাগ-পত্র সহ রাধানাথের বাসায় উপস্থিত হইলেন। কিন্তু দেখিলেন যে স্বাধীনভাবে রাধানাথের তৎপ্রতি বিন্দুমাত্র বিরক্ত হন নাই এবং তিনি তাহার স্পষ্টবাদিতার প্রশংসাই করিলেন। নিজের যেমন স্বাধীন প্রকৃতি, অন্যকেও তদ্রুপ স্বাধীনভাবে অকুষ্ঠিতভাবে চলিতে দিবেন না কেন? পণ্ডিত আর ত্যাগপত্র দিলেন না, রাধানাথের উদারতায় মুগ্ধ হইয়া চলিয়া আসিলেন । ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে তিনি স্কুলগৃহ পাকা করিতে সাধারণের সাহায্যপ্রার্থী হন, অচিরেই ১৭০০ টাকা স্বাক্ষরিত হয়, চাঁদা সংগ্রহীত হইলে গবৰ্ণমেন্ট ১০০০ টাকা দিতে স্বীকৃত হন। তদনুসারে শ্রীহট্টের ডিপুটি কমিশনার সাহেব কর্তৃক ১৮৮৬ খৃঃ গৃহের ভিত্তি স্থাপিত হয়। চাদা আদায় ও গৃহ নির্মাণের কাজ অতি ধীর গতিতে চলিয়াছিল, কিন্তু ১৮৯২ খৃঃ তাহার কৰ্ম্মময় জীবন পরিসমাপ্ত হইয়া যাওয়াতে, তদীয় সকল আশাই রহিয়া যায়।১৩১ রাধারাম নবাব রাধারাম দরিদ্রের সন্তান ছিলেন; নিজের চেষ্টায় ঈশ্বরেচ্ছানুসারে প্রতাপগড়ের জমিদাররূপে গণ্য হন এবং বন্য কুকিদের সহায়তায় প্রবল পরাক্রান্ত হইয়া উঠেন ও নবাব উপাধি ধারণ করেন। পরে গবর্ণমেন্ট সৈন্যহস্তে পরাভূত হইয়া পলায়ন করেন। ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে ২য় ভাঃ ২য় খঃ ১১শ অধ্যায়ে উক্ত হইয়াছে বলিয়া এস্থানে বর্ণিত হইল না। রামকুমার নন্দী মজুমদার বেজোড়ার নদীবংশে শ্রীহট্টের অশ্রান্ত কবি রামকুমারের উদ্ভব হয়। তাহার পিতার নাম রামকান্ত নদী মজুমদার, রামকুমার ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দরিদ্রের সন্তান, কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু তাহার শিক্ষানুরাগ ও প্রতিভা সামান্য ছিল না, তাহাতেই নিজের চেষ্টায় তিনি বাঙ্গালা, পারস্য ও কিছু কিছু ইংরেজী ও অল্প সংস্কৃত শিক্ষা ১৩১. শ্ৰীযুত উমেশ চন্দ্র প্রণীত “রাধানাথ চরিত" (শ্রীহট্ট গৌরব চরিতাবলী নং ১) গ্রন্থের সাহায্যে লিখিত। রাধা নাথের প্রতিকৃতি “শ্রীহট্ট গৌরব চিত্রাবলী"র অন্যতম চিত্ররূপ সযত্নে রক্ষিত হইতেছে।