পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ এইভাবে মন সে বিকল৷ তুমি সে জীবের জীব, তুমি ব্ৰহ্মা তুমি শিব, তুমি প্ৰভু ধরণী আকাশ! হইতাম তোমার দাস, তুমি কর নিরাশ, যত দেখি সকলই বিনাশ৷ যে কর সে কর তুমি, তোমার কি বলিব আমি, মনে মাত্র এই রাখি আশা। রামকৃষ্ণ দাসে কয় না দিও তুমি পরিচয়, বঞ্চিতের গুরুই ভরসা।" ২ । “সাধুরে ভাই; পূৰ্ণব্ৰহ্ম গুরু কেমন ভাবে পাই? ছাড়িয়া সকল মায়া, প্রভুর পদে লও ছায়া, অন্তকালে আর লক্ষ্য নাই । অবিনাশে কর মন, বুদ্ধি কর স্থিতি । হেলায় তরিবা ভব পাইবা মুকতি॥ হীন রামদাসে বলে সেবায় বড় হীন । কৃপাকরি রাখ পদে না ভাবিও ভিন। শান্ত গোসাঞির ছয়জন প্রধান শিষ্য মধ্যে রামকৃষ্ণ ও গোপীনাথ সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। গোপীনাথ জলসুখার সাহা সম্প্রদায়ী দেবীদাসের বংশসমূত ছিলেন, জলসুখার আখড়া ইহার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্ত গোসাঞির অপর শিষ্য কৃষ্ণ গোসাঞি মনতলার আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা। ঐ স্থানে একটি মহোৎসবে উপস্থিত বহুতর “সম্প্রদায়ী-বৈষ্ণব” বর্গ সমক্ষে তিনি স্বীয় দৈবক্ষমতা প্রকাশ করিলে, তথায় তাহার মহিমা খ্যাপিত হয়, ত্রিপুরাধিপতি তদৃত্তান্ত অবগত হইয়া তাহাকে অনেক ভূমি দান করেন এবং তাহাতেই তত্ৰত্য শাখা আখড়ার উৎপত্তি হয় । শান্ত গোসাঞির যদুনাথ, রাজবল্লভ ও রাজারাম নামক অপর শিষ্যত্রয় মাছুলিয়াতে তৎসন্নিধানে অবস্থিতি করায়, স্থানান্তরে গিয়া প্রসিদ্ধি লাভ করিবার অবসর প্রাপ্ত হন নাই। রামকৃষ্ণ যখন ২৮ বৎসরের যুবক, তখন গুরুদেবের আদেশে তীর্থভ্রমণে বহির্গত হন। এই বয়সেই তিনি দেশের লোকের অচ্চনীয় হইয়া উঠিয়াছিলেন। তিনি তীর্থযাত্রা করিলে তাহার অনুগত অনেকেই তদনুষঙ্গে চলিল, তিনি সস্নেহে উপদেশ প্রদানে তাহাদিগকে নিবৃত্ত করিলেন। কিন্তু এক ব্যক্তিকে কিছুতেই ফিরাইতে পারিলেন না, কৃপাপূৰ্ব্বক ইহাকে সঙ্গে যাইতে অনুমতি দিলেন; এই ব্যক্তির নাম কৃপালু। মাছুলিয়া হইতে রামকৃষ্ণ বৰ্ত্তমান হবিগঞ্জ হইয়া বিথঙ্গল আসিলেন। প্রশস্তরক্ষা নদীর তীরবত্তী এই স্থানটি তাহার বড়ই সুন্দর বোধ হইল, তৎকালে ইহা তপস্যার উপযোগী জঙ্গল ছিল । তপস্যাযোগ্য এই স্থানটিতে উপনীত হইলে গুরুর জন্য তাহার প্রাণ কাদিয়া উঠিল, গুরু স্মরণে একটি সঙ্গীত রচনা করিয়া সেই স্থানে বসিয়া তিনি গান করিলেন, সঙ্গীতটা এই ? “গুরু ভজ পরম আনন্দে | দুঃখে সুখে রওরে মন তুমি প্রভুর যে ধ্যানে৷ সুখ সম্পদ পাইয়া মন তুমি ভুলিয়া না রহিও । নিকেট যমের ঘাট রে সাবধান হইও॥ যে ছিল মনের দুঃখ গুরুবিনে কাহাতে কহিব।