পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩১ বাহ্য অন্তর নাহি মন সকলি সপিল৷ হীন রামদাসে বলে সমুদ্রে ভাসিয়া। পাকে না ঠেকাইও গুরু, মোরে নিবে উদ্ধারিয়া।" রামকৃষ্ণের মনে যখন যে ভাবের উদয় হইত, সঙ্গীতবন্দে প্রায়শঃ তাহা গাইতেন, কৃপালু শুনিতে শুনিতে তাহা লিখিয়া রাখতেন। রামকৃষ্ণ অল্পদিন মধ্যেই ঢাকায় উপস্থিত হন এবং তথায় কিছুদিন অবস্থিতি করেন। ঢাকা হইতে তিনি ভবানীপুরে কালীঘাটে গিয়া সাতদিন থাকেন, পরে তথা হইতে গঙ্গাসাগরে উপনীত হন। তথা হইতে শ্ৰীক্ষেত্র গমনপথে “ক্ষীর চোরা গোপীনাথ” ও “সাক্ষিগোপাল" দর্শনপূৰ্ব্বক পূরী পৌছেন। দূর হইতে মন্দিরের চূড়াদর্শনে তাহার মনে অপার আনন্দ উপজাত হয়, আনন্দভরে একটি বংশীবাদন পূৰ্ব্বক নৃত্য করিতে করিতে তিনি পথ চলিতে আরম্ভ করেন, পৌঁছিয়াই জগন্নাথ দর্শনে গমন করেন ও সজলনয়নে “নমঃ প্রসন্ন নেত্রায় নীলাচল বিহারিণে । নমস্তে পুণ্ডরীকাক্ষ দরব্রহ্ম রূপায়তে৷” নিজকৃত এই স্তুতিগীতি পুনঃ পুনঃ পাঠ করিতেছিলেন। জগন্নাথকে ছাড়িয়া আর কোথাও যাইতে তাহার প্রবৃত্তি হইলনা, তিনি দশ বৎসরকাল তথায় অবস্থিতি করিলেন। তিনি রাত্রি জাগরণপূৰ্ব্বক সৰ্ব্বদা গুরুদেবের ধ্যানে নিশি কৰ্ত্তন করিতেন। গুরুদেবের আজ্ঞা তীর্থ ভ্রমণে,—তীর্থবাসে নহে, তাই দশ বৎসর পরে তাহার নীলাচল ছাড়িয়া যাইতে হইল। তিনি একদিন নীলাচল হইতে যাত্রা করিয়া আলাল নাথ গমন করিলেন ও তৎপরদিনে তথা হইতে শীরুলীতে উপস্থিত হইলেন ১৩৬ শীরুলী হইতে মান্দ্রাজ গমন করেন, তৎপর দক্ষিণাভিমুখে গমন করিয়া সেতুবন্ধে উপস্থিত হন। সেতুবন্ধ হইতে নীলগিরিতে উপস্থিত হইয়া কয়েকদিন বিশ্রাম করতঃ নিৰ্জ্জন উপাসনা করেন। তৎপর পশ্চিমাভিমুখ হইয়া সেতারা, বুম্বাই, পুনা প্রভৃতি স্থানের তীর্থাদি দর্শন করিয়া একবৎসর কাল সেই স্থানে বাস করেন। তথা হইতে দ্বারকাধামে উপস্থিত হন ও তথায় একবৎসর অবস্থিতি করেন। দ্বারকা হইতে জয়পুর, পুষ্কর প্রভৃতি হইয়া মথুরায় যান ও তথা হইতে বৃন্দাবনে পৌছেন, বৃন্দাবনের পবিত্র ধুলায় তিনি গড়াগড়ি দিয়া “হা কৃষ্ণচন্দ্ৰ" বলিয়া রোদন করিতে আরম্ভ করেন; অবরুদ্ধ জলস্রোত যেন ফুলিয়া ফুলিয়া দেশ ভাসাইয়া চলিল, বিলোকনে কৃপালু বিক্ষিত হইয়া গেলেন। বৃন্দাবনের সারধন গোবিন্দ গোপীনাথ মদনমোহন দর্শন ও যুগল কুণ্ডজলে নিমজ্জনাদিপূৰ্ব্বক ১৩৬. রামকৃষ্ণচয়িত গ্রন্থে রামকৃষ্ণেব তীর্থভ্রমণোপলক্ষে দক্ষিণদেশের যে নাম গুলি লিখিত হইয়াছে, তাহা ক্রমানুযায়ী বলিয়া বোধ হয় না এবং অনেকটিই বোধ হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম মাত্র। কোন কোন স্থানের দেবতার নাম হইতে অভিন্ন কি না বলিতে পারি না। এস্থলে আমরা কৃপালু গোসাঞির লিখিত নামাবলী যথানুক্রমে লিপিবদ্ধ করিলাম, যথা—শীরুলী, বাবুমন্দর, গোদাবরী, পানানরসিংহ, গণ্ডুর বেঙ্কটগিরি, দক্ষিণ কৈলাস, বালাজী, লক্ষ্মীনারায়ণ, কাৰ্ত্তিকস্বামী, পঞ্চতীর্থ, শিবকাঞ্চী, বিষ্ণুকাঞ্চী, মনদ্রাজ শহব, শিলিম্বর মহাদের, কুন্তকরণ, রঙ্গনাথ, গরবোলাখাড়ি, সেতুবন্ধ, ধনুস্তীর্থ দরপ্ৰসেন, তোতাদারি, সুন্দর মহাদেব, কুমারী কন্যা, লম্বনারায়ণ, ছোটনারায়ন, আদিকেশব, ঠচকরা-মচকরা, পদ্মনাভ, জনাৰ্দ্দন, জংজিতগোপাল, বম্বক্লেশর—মহাদেব, বুচিবন্দর, নীলগিরি, মহীসুর, কুমারস্বামী, কিঙ্কিন্ধ্যা, মেলকুটা, ভগলকুটা, পাণ্ডারপুর, পুনা, সেতারা, মুম্বাই, নাসিক, সোমনাথ, মাধবদ্বার, মাধবপ্রাচীর, ভীমনাথ, প্রভাস, ডাকরাজি (গুজরাট) গৃহ্নার, দ্বারকা, ভোটদ্বারকা, গোপীতলা, শরতীর্থ, পুক্ষরতীর্থ, জয়পুর, ভারতপুর, মথুরা, বৃন্দাবন, হস্তিনাপুর, কুরুক্ষেত্র, জ্বালামুখী, হরিদ্বার, হৃষীকেশ, গোমুখী, গঙ্গৌত্রী, কেদারনাথ, বদরিকাশ্ৰম, নেপাল, মথুরা, গয়া, কাশী, বৈদ্যনাথ, ঢাকা, প্রভৃতি ভ্রমণ করেন। শ্ৰীক্ষেত্র হইতে দক্ষিণাভিমুখে গিয়া কন্যাকুমারী, তথা হইতে পশ্চিমাভিমুখে ও তদনন্তর উত্তরমুখে গমন করিয়া গুজবাট প্রভৃতি হইয়া হরিদ্বার, তৎপরে নেপাল আসিযা পূৰ্ব্বমুখে দেশে আসিয়াছিলেন, ইহাই অনুমিত হয়।