পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৫ ঢাকা হইতে তিনি শ্রীহট্টে আসিয়া ওকালতি ব্যবসায় আরম্ভ করেন। তিনি শ্রীহট্টের একজন খ্যাতনামা উকিল ছিলেন, কর্তৃপক্ষ তাহার কৰ্ম্মঠতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাইয়া তাহাকে সদরে প্রধান মুন্সেফ নিযুক্ত করেন। শ্রীহট্ট হইতে পরে তিনি বরিশালের কোটেরহাট বদলী হইয়াছিলেন। সচরাচর দেখা যায় যে, নিজের বা পরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রট অনেকেই ততটা লক্ষ্য করে না, রামচন্দ্র এ প্রকৃতির ছিলেন না, তিনি সামান্য দোষকেও বৃহৎবৎ মনে করিতেন। বরিশালে থাকাকালে এক বৃদ্ধা পাটুনী প্রতিবেশিনী একদা তাহার বাসায় আসিয়া কিছু কলমী শাক দেয়। তিনি খাইতে বসিয়া প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞাসা করেন যে, সেই শাক কোথায় পাওয়া গিয়াছে। তাহার স্ত্রী পাটুনী বুড়ির কথা বলিলে, দাম দেওয়া হইয়াছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। যখন তিনি জানিলেন যে বুড়িকে শাকের দাম দেওয়া হয় নাই তখন আমনি পাত হইতে উঠিলেন ও বাহিরে গিয়া তখনই সেই বুড়িকে ডাকাইয়া আনাইয়া দামটি দিয়া তবে কাছারিতে গেলেন। বস্তুতঃ এইরূপ ক্ষুদ্র কাৰ্য্যেই লোকের অন্তঃকরণের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। বরিশাল হইতে একদা পূজার সময় বাড়ী আসিয়া তিনি জানিতে পারেন যে, গ্রামের লোকেরা একটি অসহায় ব্রাহ্মণ পরিবারকে অন্যায়রূপে সমাজচ্যুত করিয়াছেন। শুনিয়াই তাহার হৃদয় দ্রব হইয়া গেল, তিনি সেই ব্রাহ্মণকে ডাকিয়া আনিয়া তাহাকে নিজ পৌরহিত্যে বরণ করিয়া লইলেন। ইহাতে কাজেই তাহাকেও সমাজচ্যুত হইয়া একা থাকিতে হইল। ষোল বৎসর পৰ্য্যন্ত তিনি সেই ব্রাহ্মণকে লইয়া একা থাকেন, একদিনের জন্যেও তজ্জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাই, রামচন্দ্র এরূপই সদাশয় ছিলেন। সুবিখ্যাত বাগী শ্ৰীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয় ইহারই একমাত্র পুত্র। বিপিন বাবু তাহার “প্রণিভুল্য" ছিলেন; কিন্তু এই “প্রাণত্যুল্য" পুত্র যখন হিন্দু ধৰ্ম্মে অনাস্থা প্রদর্শনপূৰ্ব্বক ব্রাহ্মমতের অনুসরণ করেন, তখন তেজস্ব পিতা আপন হস্তে আপনার হৃদয় উৎপাটনাপেক্ষা গুরুতর কাণ্ড করিয়া বসিলেন; তিনি আপনার "প্রাণত্যুল” পুত্রকে কৰ্ত্তব্যের অনুরোধে বৰ্জ্জন করিলেন। তিনি মনে করিয়া থাকিতে পারেন যে, ইহাতে পুত্রের মত পরিবৰ্ত্তিতও হইতে পারে কিন্তু যখন তাহার কেন চিহ্নই দেখা গেল না, তখন নিষ্ঠাবান রামচন্দ্র পিণ্ডলোপের ভয়ে বৃদ্ধবয়সে দারপরিগ্রহ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। যাহা হইক, পুত্রের প্রতি তাহার আন্তরিক মেহ বিলুপ্ত হয় নাই, তিনি অন্তিমকালে যে উইল করিয়া যান, তাহাতে সমস্ত সম্পত্তিই পুত্রকে ۹ هلال ایج تجITنی রুদ্রদেব মুনিগোসাঞি ছাতি আইনের ভট্টাচাৰ্য বংশে আন্দাজ ১৭৩৩ খৃষ্টাব্দে রুদ্রদেব জন্মগ্রহণ করেন, তাহার পিতার নাম শঙ্করদেব ভট্টাচাৰ্য্য। জেলা ত্রিপুরার নুরনগরের দেবগ্রামবাসী শুভগিরের নিকট তিনি দীক্ষিত হইয়া কসবাতে গিয়া কালী সাধনায় বৃত হন। তাহার মনোরথ সিদ্ধ হইয়াছিল। ত্রিপুরার মহারাজ তাহার গুণগ্রামে মোহিত হইয়া তাহাকে অনেক ভূমি দান করিতে চাহেন, কিন্তু তাহা গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি হইলে, দৈনিক দুগ্ধের বরাদ্ধ জন্য মহারাজ মাসিক দুই টাকা হিসাবে বার্ষিক ২৪ টাকার বৃত্তি অবধারিত করেন এবং কালীবাড়ী প্রস্তুত করিয়া দেন। রুদ্রদেব বিবাহ না করায় তাহার কনিষ্ঠ সহোদর শুভঙ্কর শুরু শুভগির সদনে গিয়া ভ্রাতাকে বিবাহ করার আদেশ দানের জন্য বারবার প্রার্থনা করেন। শুভগির তখন শিষ্যকে বিবাহ করিতে আদেশ করেন। এদিকে ভ্রাতাও বিবাহের আয়োজন করিতে প্রবৃত্ত হন; ফলে অতি শীঘ্রই ১৪২. বিজয়া পত্রিকা ১৩১৯ বাং মাঘ সংখ্যায় লিখিত “পিতা পুত্রে” প্রবন্ধ অবলম্বনে লিখিত ।