পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ঠাকুর ব্রজবল্লভ পং ডেওয়াদিনিবাসী জনৈক ব্রাহ্মণকে শিষ্য করেন। ইনি একজন প্রতিভাশালী বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন, বৈষ্ণব হইয়া অতি অল্পকাল মধ্যে ইনি বৈষ্ণব দর্শন, বৈষ্ণব স্মৃতি, ও ভক্তিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ হইয়া উঠেন। তাহার অগাধ পাণ্ডিত্য, সদাচার, পরমার্থ নিষ্ঠা ও ভক্তিতে আবাল বৃদ্ধ বিমোহিত হইত; ইহার ফলে শ্রীহট্টের পূৰ্ব্বাঞ্চলের অসংখ্য লোক পানিশালির আখড়ার শিষ্যশ্রেণী ভুক্ত হয় ১৪৪ এই মহাত্মার নাম শান্তরাম, সচরাচর তিনি ঠাকুর শান্তরাম নামেই কথিত হইয়া থাকেন। শান্তারাম যে শুধু সাধারণ লোকের চিত্ত আকর্ষণ করিয়াছিলেন এমন নহে, দেশের রাজশক্তি, শ্রীহট্টের আমিল বা ফৌজদারগণ, তাহার গুণে মোহিত হইয়া তাহাকে বহু সংখ্যক সনন্দদ্বারা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দেবত্র দান করিয়াছিলেন।১৪৫ ১১৯৩ সালে তাহার “প্রাপ্তি" (মৃত্যু) ঘটে। পানশালির আখড়ার দেবতার নাম স্বগীয় রাধাবিনোদ বিগ্রহ। এই শ্রীবিগ্রহের দেবত্র ঠাকুর শান্তরামের প্রাপ্ত ভূসম্পত্তি অনেক ছিল, বালাগঞ্জের বাজার প্রভৃতি তাহার অন্তর্ভুক্ত ছিল, এই বাজার লালা আনন্দরামের স্ত্রী স্বীয় গুরু ধৰ্ম্মদাসকে (ধৰ্ম্মদাস শান্তরামের শিষ্যের প্রশিষ্যে ছিলেন) দান করিয়াছিলেন। কিন্তু আখড়ার ধৰ্ম্মনিরত অধিকারিগণ পরমার্থ চিন্তায় নিবিষ্টচিত্ত থাকিতেন, আর্থিক উন্নতি অবনতির প্রতি লক্ষ্যমাত্র ছিল না, তাই তাহা পরে হস্তচু্যত হয়। কোন অধিকারী (পূর্বোক্ত ধৰ্ম্মদাস) একদা ইষ্ট চিন্তায় উপবেশন করিয়াছিলেন তৎকালে সরকারি প্যাদা রাজস্বের জন্য ডাকাডাকি করায়, বিরক্ত হইয়া ধৰ্ম্মবিঘ্নজনক সেই সম্পত্তিগুলি (ধৰ্ম্মপুর ১৪৪. ধনীবাম নামে এক বিদ্রোহী আত্মা ইহাব শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। উক্ত বিদ্রোহী অলকেসা থাকিয়া আখড়াব বিবিধ কাৰ্য্য করিয়া দিত। ধনীরাত্রের উদ্দেশ্যে অদ্যাপি আখড়ায ভোগের একখানা প্রসাদ অপিত হইয়া থাকে। ১৪৫. ঠাকুর শাস্তবামের প্রাপ্ত কয়েকটি সনন্দের মৰ্ম্ম এস্থলে প্রদান করা অসঙ্গত হইবে না। (১) নবাব হরিকিষুণ দাস মনসুর উল মুলক এক সনদে (নং ১১০৫) ৩ জলুসের তারিখে পং ঢাকা উত্তর মৌজে করগাও হইতে ৬ ॥১। ভূমি দেবত্র দান করেন। ইহার মন্তব্যে লিখিত আছে যে "শান্তরাম অধিকাবিব প্রাপ্তি" হইলে তাহাব শিষ্য জয়গোবিন্দ অধিকারী ও দয়ালদাস অধিকারী “বিত্ত তছরূপ" করেন । ইহাও জানা যায় যে, ১২০৭ সালে দয়ালদাসের প্রাপ্তি ঘটিলে তাহার শিষ্য ধৰ্ম্মদাস বৈষ্ণব উহা “তছরূপ" করেন । (২) নবাব হাজি হুসেন খা বাহাদুর বয়ালজোর হইতে এক সনদে (নং ১০৬৪) তাহাকে ১ ০৩। ভূমি দেবত্র দেন। ঐ সনদের মন্তব্যে লিখিত আছে যে ১১৯৩ সালে তাহার প্রাপ্তি ঘটিলে তাহার শিষ্য জয়গোবিন্দ ও দয়ালদাস উহা “তছরূপ" করেন । এইরূপ অনেক সনন্দ আছে, দুইখানা মাত্র উদাহৰণস্বরূপ উদ্ধৃত হইল। সাকিন ফুরকাবাদ বাসী রত্নবল্লভ দেব ও রামবল্লভ দেব ১১৭০ সালে তাহার নামে ফুরকাবাদ হইতে ৪ (০l... ভূমি দেবত্র দান; এই দলিল কালেক্টারিতে ১০৮৮ নং ভুক্ত হইয়া বৰ্ত্তমান আছে। দেশের ভূমাধিকারিগণের প্রদত্ত এই রূপ বহু দেবত্রই ছিল; এস্থলে মাত্র একটি কথা উল্লেখিত হইল। ঠাকুর শান্তরাম ব্যতীত তাহার পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত ও পরবত্তী অন্যব্যক্তিদের নামেও দেবত্রের দানপত্র কালেক্টরীতে দৃষ্ট হয়; ঠাকুর শান্তরামের শিষ্য পূর্বোক্ত জয়গোবিন্দ অধিকারী কুশিয়ারকুল হইতে তাহাকে ১০০/হাল ভূমি দেবত্র দান করেন। ইন্দেশ্বরবাসী শ্যামরাম সোম ও আনন্দরাম ১১৮২ সালের ২৫ সাবান তারিখে ইন্দেশ্বর হইতে “দেবতার সেবার জন্যে” ॥১॥০ পরিমিত ভূমি এক দানপত্রে (নং ৩৩৮) পানিশালির "চম্পকপ্রিয়া বৈবাগিনি ঠাকুরাইন" নামে অর্পণ করেন । শ্রীহট্টের ফজলআলী মজুমদার উক্ত আখড়ার গউরদাস বৈষ্ণবকে ইন্দ্রেশ্বর হইতে /১ জমি "ব্রহ্মত্র” দান করেন । অধিকারী উপাধি না থাকায় বোধ হয় যে, ইনি সাধারণ বৈষ্ণব ছিলেন । এই আখড়ার অধিকারী ও বৈষ্ণববর্গ যে গুণী ও জ্ঞানী ছিলেন এবং সকলেরই শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন; কালেক্টরীতে রক্ষিত এই সব সনন্দ তাহার প্রমাণ দিতেছে । ব্রাহ্মণ অধিকারিগণের দাসাত্মক নাম শুদ্ৰত্বব্যঞ্জক নহে, দীনতাজ্ঞাপক মাত্র।