পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ হইল ও জীবনে বীতশ্রদ্ধ হইয়া হিংস্র জন্তু কর্তৃক নিহত হইবে মানসে জঙ্গলে প্রবিষ্ট হইল। যুবক যাইতে যাইতে হঠাৎ থমকিয়া দাড়াইল । কোন হিংস্র জন্তুর সহিত দেখা হইল না, তৎপরিবৰ্ত্তে এক কন্থাধারী শীর্ণকায় সাধুকে দেখিতে পাইল; যুবক চিনিল যে, এই সাধু সেই ব্যক্তি, যাহাকে মধ্যে মধ্যে বাজারে দেখা যাইত। সাধু এক বৃক্ষমূলে একটি মৃতভাণ্ডে ডালচাল একত্রে মিশ্ৰিত করিয়া রন্ধন করিতেছেন, আর ইষ্টনাম জপ করিতেছেন। যুবক মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় দাড়াইয়া রহিল, এদিকে সাধু মুষ্টেক অন্ন দুই পাতে পরিবেশন করিয়া যুবককে ইঙ্গিত করিলেন। আজ্ঞাপালনে প্রবৃত্ত হইয়া যুবক দেখিল যে নিকটে একটি প্রকাণ্ড ব্যাঘ্ৰ পোষিত বিড়ালের ন্যায় বসিয়া লাঙ্গুল নাড়িতেছে! যুবক ভাবিল এইবার আশা পুরিবে। সাধুর তাহার মনোভাব বুঝিতে বাকি নাই, তিনি বলিলেন “ভাই মরিবে কেন, বাড়ীতে গিয়া খোদার নাম লও, মঙ্গল হইবে।” যুবক শুনিতে শুনিতে সেই অন্নমুষ্টি খাইতে লাগিল । যুবক অনেক খাইল, আর খাইতে পারে না, কিন্তু সেই অন্নমুষ্টি তখনও শেষ হয় নাই। যুবক সাধুদত্ত অন্নের মহিমায় আশ্চৰ্য্যান্বিত হইল এবং তদীয় আদেশে বাড়ীতে চলিল । যাওয়ার কালে সাধু বলিয়া দিলেন “সাবধান যুবক, এথাকার কোন কথা লোকালয়ে ব্যক্ত করিও না, তাহা হইলে অনিষ্ট ঘটিবে ।” যুবক জঙ্গলে প্রবিষ্ট হইলে সেই রনচণ্ডী তাহার জন্য চিন্তিত হইয়াছিল এবং আপনার আচরণের কথা স্মরণে অনুতপ্ত হইয়াছিল। এক্ষণে সে স্বামীকে পুনঃপ্রাপ্ত হইয়া প্রেমগদগদবাক্যে ক্ষমা চাহিয়া, সে কোথায় গিয়াছিল জিজ্ঞাসিল ! পত্নীর মিষ্টবাক্য শ্রবণে যুবক মুহুর্তে সকল ভুলিয়া গেল, সাধুর নিষেধ বাণী আর তাহার স্মরণ রহিল না, সে সাধুর কথা সর্বাগ্রেই প্রকাশ করিয়া ফেলিল! সাধুবাক্যের ব্যত্যয় নাই; তৎক্ষণাৎ সে এক ভীষণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হইল ও দেখিতে দেখিতে গতাসু হইল । এই আশ্চৰ্য্য কথা পরমুহুর্তে গ্রামে গ্রামে প্রচারিত হইল, সাধুকে বাহির করিতে বহুলোক দা, কুড়ালি দ্বারা জঙ্গল আবাদ করিতে লাগিল। জঙ্গল বহুদূর পর্যন্ত পরিষ্কৃত হইল; কিন্তু কস্থধারী সাধুকে পাওয়া গেল না। সেই স্থানের নিকটে বহুশাখাসম্বলিত একটি প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ ছিল, একদিন হঠাৎ লোকে তাহার মূলে কন্থাধারীকে দেখিতে পাইল । সে দিন তত্রতা জমিদার গৃহে এক উৎসব ছিল, জমিদার সাধুকে নেওয়ার জন্য লোক পাঠাইলেন। সাধু বলিলেন “আমার কাপড় নাই, আমি যাইতে পারি না” জমিদার লোকমুখে ইহা শুনিয়া ভাল কাপড় দিয়া আবার সেই ব্যক্তিকে পাঠাইলেন। সাধু কাপড় গ্রহণ করিলেন কিন্তু নিজে ব্যবহার না করিয়া "বড়শীত” এই কথাটি বলিয়া অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলেন। ভূস্বামী তখন ক্রুদ্ধ হইয়া সেই বস্ত্র চাহিয়া পাঠাইলেন, সাধু হাসিতে হাসিতে অগ্নি হইতে সেই বস্ত্রই তুলিয়া দিলেন। দগ্ধবস্ত্র পুনঃ প্রাপ্ত হইয়া ভূস্বামী বিক্ষিত হইলেন। ভূস্বামী অনতিবিলম্বে সেই স্থানে স্বয়ং আগমন করিলেন, হায়! তখন কস্থাধারী দেহত্যাগ করিয়া চলিযা গিয়াছেন!! অশ্রু-বিসর্জন পূৰ্ব্বক ভূ-স্বামী স্বহস্তে তাহাকে সমাধিস্থ করিলেন। এই সাধুর নাম পাতা শাহ। ইহার কবর এখন তথায় আছে । শাহ পেড়া পেড়া শাহ মোসলমান জাতীয় ছিলেন। পেড়া শাহের প্রকৃত নাম কি ছিল বলা যায় না। পেড়া শাহের স্ত্রী অসচ্চরিত্রা রমণী ছিল, এবং পতিকে পরিত্যাগপূৰ্ব্বক জনৈক প্রতিবেশীর সঙ্গে