পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বতীয় অধ্যায় : রঙ্গদ বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৫ ভ্রাতৃবর্গ এবং আত্মীয় স্বজন কর্তৃক তিনি পরম আদরে গৃহীত হইলেন।১৪ গঙ্গারাম গৃহে আসিয়া বহিৰ্ব্বাটিকায় এক টোল সংস্থাপন করেন, এই টোলে নানা স্থানের ছাত্রবর্গ আসিয়া অধ্যয়ন করিত। শ্রীহট্টের নবাব নজীবআলী খা বাহাদুর শিরোমণিকে তদীয় গুণের পুরস্কার স্বরূপ বুরুঙ্গা, রেঙ্গা, ইন্দেশ্বর, ইটা ও আগনা হইতে ৩ জলুসে ১৫ ২০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। শ্রীহট্টের কালেক্টরীতে এই ভূমি দানের সনন্দ (নং ৮৩) আছে। ঐ ভূমি ১১৯৬ সালে তৎপুত্র গঙ্গাগোবিন্দের “তছরূপে" ছিল বলিয়া মন্তব্যে লিখিত আছে।১৫ কি হিন্দু, কি মোসলমান, যাহারা স্বগুণে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাহারাই নবাব সরকার হইতে পুরস্কৃত হইতেন; গুণী না হইলে কেহই ভূদান প্রাপ্ত হইতে না। শিরোমণির তিন পুত্র, জ্যেষ্ঠ গঙ্গাগোবিন্দ পরম পণ্ডিত ছিলেন, কনিষ্ঠ গৃহত্যাগী হন, মধ্যম ১৪. ধীবরের গল্প শ্রীচৈতন্য রত্নাবলীতে গঙ্গা রামেব প্রসঙ্গে কয়েকটি অদ্ভুত উপাখ্যান উল্লেখ আছে, তাহা বংশ ᎩQ বৃত্তান্তে সংযোজন যোগ্য না হইলেও উপাখ্যানাংশে মন্দ নহে। যখন তিনি নৌকাযোগে আসিতেছিলেন, হবিগঞ্জের সন্নিকটে উপস্থিত হইলে দেখিলেন যে এক ধীবব মাথায় মৎস্যের ঝাকা লইয়া যাইতেছে। পণ্ডিতের অভিপ্রায় মত নাবিক মৎস্যেব প্রকার জিজ্ঞাসিলে ধীবর অবজ্ঞা সহকারে উত্তর করিল যে ইহা চিতল কাতল, ব্রাহ্মণেব ক্রয়যোগ্য “ইচা বৈচা" নহে। এই সময় উছট খাইযা ধীবর ভূপতিত হইল, মৎস্যও মাথা হইতে পড়িয়া গেল; বিস্মিত ধীবব ও তৎপত্নী চাহিয়া দেখে যে মাছ-গুলি “ইচা লৈচা" অর্থাৎ ক্ষুদ্র মৎস্য পৰিণত হইয়া গিয়াছে! এ অলৌকিক ব্যাপার দৃষ্টে তথায় বহুলোক একত্রিত হইয়া ইহা নৌকারোহীর যোগবলের ফল বলিয়াই নিৰ্দ্ধারণ করিল। তাহাবা তখন নৌকার অনুসরণে চলিল, কিন্তু নৌকা তখন বহুদূরে চলিয়া গিয়াছে! প্রত্যক্ষ প্রদর্শন ইন্দেশ্বর পবগণাস্থ আনন্দকিশোর ভদ্র, শিরোমণির পিতৃশিষ্য ছিলেন। একবাব তিনি মহাষ্টমীতে আদ্যাশক্তিব অচ্চনার অভিপ্রায়ে শিরোমণির নিকট পত্র দেন, কিন্তু শিরোমণি এ পত্রেব কথা ভুলিয়া যান। তখন ও বর্ষাজলে, খাল বিল জলপূর্ণ-নৌকা ব্যতীত চলিবার ক্ষমতা নাই । সেই মেঘাচ্ছন্ন অষ্টমীদিনে সন্ধ্যার সময় হঠাৎ তাহার নিমন্ত্রণের কথা স্মরণ হইল; এখন উপায়? তবে কি পূজা পণ্ড হইবে? শিরোমণির তখন কৰ্ত্তব্যাকৰ্ত্তব্য জ্ঞান থাকিল না, উন্মত্তবৎ তিনি ইন্দেশ্বর যাত্রা করিলেন ও মধ্যরাত্রে পিতৃশিষ্যের গৃহে পৌছিলেন। সকলেই বিস্ময় সহকারে মনে করিল যে সন্ধ্যার সময় যাত্রা করিয়া বিনা নৌকায় বুরুঙ্গা হইতে তিনি কোন অলৌকিক শক্তিব বলেই সে জল প্লাবিত পথ অতিক্রম করিয়া আসিতে সমর্থ হইয়াছেন। যাহা হউক, তিনি অনতি বিলম্বে দেশসমূহে প্রবিষ্ট হইয়া অল্পকাল মধ্যেই পূজা সমাধা করিলেন । কৰ্ম্মকৰ্ত্তা ইহাতে কিঞ্চিৎ ক্ষুন্ন হইলেন, বীতিমত পূজা হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস হইল না। শিবোমণি ইহা বুঝিতে পারিলেন ও আনন্দ ভক্ত-মহিমা প্রকাশেৰ জন্য ভক্তবৎসলাব অঘটন ঘটান কিছু আশ্চর্য নহে; দেবলীলা তো আর মানবীয় কাৰ্য্য নহে, অলৌকিকত্বই ইহার আদি অন্তও মধ্য । কিন্তু সৰ্ব্বত্রই যে এমন ঘটনা ঘটিবে, কিশোরকে জিজ্ঞাসা কবিলেন যে তাহার মন “কষা” (বিরক্ত) কেন? আনন্দ কিশোর তখন স্পষ্টাক্ষরে বলিলেন-“প্রভো! পুষ্পদুৰ্ব্বাদি যথা স্থানে সজ্জিত রহিয়াছে, আপনি গৃহে প্রবেশ করিয়া অমনি আসিলেন, পূজা হইল কৈ?" তখন আরক্তনেত্রে "প্রত্যক্ষদেখ” বলিয়া শিরোমণি কুশাঘাতে দেবীর চরণ বিদীর্ণ করিলেন, আর প্রতিমাদেহ হইতে রক্ত স্রোতঃ বহিল!! আনন্দ কিশোর হায় হায করিতে লাগিলেন, কিন্তু শিরোমণি তাহার গৃহে আর তিষ্টিলেন না, “অবিশ্বাসিন! অদ্যাবধি আমাদের ত্যজ্য হইলি" বলিয়া চলিয়া আসিলেন । সেই রাত্রেই আনন্দকিশোরের গৃহ দগ্ধ হইযা গেল-অচির কাল মধ্যেই তাহাব স্ত্রীপুত্রদিব মৃত্যু হইল, গৃহ শ্মশান হইল! তাহা কখনই বিশ্বাস করা যায না। কারণ অলৌকিক দেবলীলা কোনরূপ নিয়মে শৃঙ্খলিত নহে। অমাবস্যায় চন্দ্র প্রদর্শনের ন্যায় এই ঘটনাও শ্রীহট্টের বহুপবিবাবে কীৰ্ত্তিপ্রকাশ কল্পে ঘোষিত হইয়া থাকে। এক একটি প্রধান ঘটনাকে যে অনেকেই স্বায়ত্ত করিতে যত্ন কবিয়া থাকেন, এসকল ঘটনা তাহার প্রমাণ । এই ঘটনাটিও একাধিক স্থলে উল্লেখ করিব বলিয়া এস্থলে বর্ণন করিলাম । “তছরূপ" অর্থে আত্মসাৎ বা দখল । সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্ৰে পূৰ্ব্ববৰ্ত্তীয় ভূমি যিনি পাইতেন, “তছরূপকার" স্থলে তাহার নাম সনদের মন্তব্যে লিখিত হইত।