পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ “শিবচন্দ্রের প্রখর স্মৃতিশক্তিতে লোকে তাহাকে শ্রুতিধর সংজ্ঞা প্রদান করিয়াছিলেন।" “শুনা গিয়াছে, তিনি একদা কোন মোকদ্দমার রায়ের নকল আনিতে যান। রায় বড় ছিল, তাই কৰ্ম্মচারিবর্গ উহার নকল লইতে অনেক টাকা ফিস লাগিবে বলেন, উহাতে দরিদ্র ব্রাহ্মণ এত টাকা দিতে অসমর্থ হইয়া কোন কৰ্ম্মচারীকে, একবার তাহাকে রায় খানা পড়িয়া শুনাইতে অনুরোধ করিলেন। পঠিত রায় শ্রবণানন্তর তিনি বাড়ী আসিয়া অবিকল তাহা লিখিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।" “সাধারণতঃ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে ক্রোধন ও অহঙ্কারী হইতে দেখা যায়, ন্যায় পঞ্চাননে তাহার লেশ মাত্রও ছিল না। বরং ইহা তাহার একপ্রকার দোষ ছিল যে, তিনি না ঘাটাইলে বিদ্যাগৌরব প্রদর্শন করিতে নিতান্ত কুষ্ঠিত হইতেন। সংক্ষেপতঃ বিচার-মল্ল বলিতে যাহা বুঝায়, তিনি তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের আদর্শ স্বরূপ তিনি ধৰ্ম্মকৰ্ম্মাদিতে দৃঢ়মতি ছিলেন। শুনা যায় একবার তাহার শরীরে কোনও এক ভীষণ ব্যাধির সূত্রপাত দেখা দিয়াছিল; তিনি কেবল শাস্ত্রানুমোদিত সদানুষ্ঠান দ্বারাই তাহা হইতে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাইয়াছিলেন।” “তিনি এতাদৃশ বিনীত ও নিরহঙ্কার ছিলেন যে নিতান্ত অন্তরঙ্গ ব্যক্তি ব্যতীত তাহার সমস্ত গুণাবলী কেহই জানিতে পারিত না । ফলতঃ তাহার প্রগাঢ় বিদ্যার এবং বিনয়গম্ভীর স্বভাবের ইয়ত্তা করা সুদূর পরাহত "১৪৬ বিগত ১৩০১ বাংলার ২৬শে আষাঢ় রজনীতে সন্ন্যাসরোগে শ্রুতিধর শিবচন্দ্র মৃত্যুমুখে পতিত হন। শ্রীহট্টগৌরব স্মৃতিফলকাবলীতে সৰ্ব্বপ্রথমেই তাহার ফলক নিবিষ্ট হইয়াছে। শিবরাম জলডুবের রাঢ়জাতীয় শম্বুরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্র সোণা ও গণেশ্বরের নামে তত্ৰত “সোণাগণাই” তালুক বন্দোবস্ত হইয়াছিল। ইহাতে সোণারাম ও গণেশ্বরের দশসনা বন্দোবস্তের সমকালে জীবিত থাকা প্রমাণিত হয়। ইহাদের বংশে কোন কোন বিষয়ে কেহ কেহ বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। সোণারামের অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্র শিবরামের কথাই এস্থলে আলোচ্য। বাল্যবধিই শিবরামের যথেষ্ঠ ধৰ্ম্মপ্রাণতা ছিল, অন্যান্য বালকদের হইতে তাহার স্বভাবের বিশিষ্টতা বিশেষভাবে লক্ষিত হইত; যৌবনকালেও একটি লোকের সহিত তাহার ঝগড়া কলহ হয় নাই; বয়োবৃদ্ধি সহকারে মিতবাক হইয়া পড়িলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে প্রায়ই তাহাকে দেখা যাইত। তদ্ব্যতীত সাংসারিক কার্য্যে তাহার উদাসীনতা বিলক্ষণ ছিল, তদৃষ্টে তদীয় পিতা নারায়ণ ও সহোদর মাগনরাম তাহার বিবাহ দিতে ইচ্ছা করিয়া একটি সুশ্রী পাত্রী স্থির করিলে, উপায়ন্তর না দেখিয়া উদাসচিত্ত শিবরাম অলক্ষ্যে গৃহের বাহির হইয়া পিঞ্জরবিমুক্ত পক্ষীর ন্যায় কামাখ্যাধামে গমন করতঃ আত্ম-শক্তিমত ভক্তিকথা কথনে জীবন উৎসর্গ করিয়া যশস্বী হন। অভ্যাসবশে শিবরামের ইহাতে বেশ দক্ষতা জনিয়াছিল, তথাকার লোকে তাহাকে “কথক” উপাধি দিয়াছিল। শিবরামের সংসারে বীতরাগতা ও গৃহত্যাগ এবং ধৰ্ম্মকথা কীৰ্ত্তনাদি-সদুদাহরণ, তদ্বংশীয় অব্যবহিত পরবর্তী বালকবৃন্দের চিত্ত-ক্ষেত্রে এরূপ দৃঢ়ভাবে অঙ্কিত হইয়াছিল যে, অচিরেই তাহাদিগকে তৎপথানুগামী করিতে সমর্থ হয়। শিবরামের ভ্রাতুস্পপুত্র মাধবচরণ তাহার এক উদাহরণ। পিতৃব্যের ন্যায়, তরফে গুরুগৃহে গিয়া ভেকআশ্রয়পূৰ্ব্বক "শ্রীচৈতন্য ধৰ্ম্ম" প্রচারে ইহার জীবনও অতিবাহিত হয়। শিবরামের গোষ্ঠিসম্পর্কিত তদীয় পৌত্র স্থানীয় নন্দকিশোর ১৪৬. উদ্ধৃত অংশসমূহ ১৩০১ বাং ২রা শ্রাবনের পরিদর্শক পত্রে প্রকাশিত প্রবন্ধ হইতে গৃহীত হইয়াছে।