পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড সহিত পিতৃমাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, তাহার পিতার—“সৰ্ব্বস্তুল কলেবর, শ্যামঙ্গ সুমনোহর। শমধর সুনিন্দিত হাস্য” ছিল। রামরুদ্রের গুণ-গৌরব তিনি লিখিয়াছেন যে একদা স্বগ্রামস্থ শিব প্রসাদ রায় নামক ব্যক্তির পিতৃশ্ৰাদ্ধোপলক্ষে পূৰ্ব্ববঙ্গের বহু পণ্ডিত-সমাগম ঘটে। সভাস্থলে শাস্ত্রালোচনা হইতেছে, এমন সময় রামরুদ্র তথায় উপস্থিত হইলেন ও কথা প্রসঙ্গে একটু হাস্য করিলেন। সভায় তাহার সম্মান দর্শনে কাশীশ্বর তর্কবাগীশ নামক জনৈক পণ্ডিত ঈর্ষান্বিত হইয়াছিলেন; এক্ষণে এই ছল পাইয়া তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বটে! আমি তোমার পিতৃতুল্য, আমার সম্মুখে তোমার হাস্যকরা কি সুশিষ্ট ব্যবহার?” তর্কালঙ্কার যুক্ত করে দোষ স্বীকার করতঃ ক্ষমা চাহিলেন, কিন্তু সেই মুহূৰ্ত্তে সে ক্রুদ্ধ পণ্ডিতবর রক্ত বমন করিয়া মুচ্ছগ্রস্থ হইলেন। ইহা দৈব, না রামরুদ্রের প্রভাবসঞ্জাত ঘটনা, অথবা কাকতালীয় ন্যায়, তাহা নিৰ্দ্ধারণ কঠিন। বাজু সোনাইতা বাসী রামগোবিন্দ ভৌমিক ইহাদের কৌলিক শিষ্য। তত্ৰত্য কাশীনাথ ব্রহ্মচারীর ইচ্ছা যে রামগোবিন্দকে শিষ্য করেন। রামগোবিন্দ কিন্তু কৌলিক গুরুত্যাগে সম্মত ছিলেন না। ব্রহ্মচারী ইহাতে ক্রুদ্ধ হইয়া মন্ত্রেীষধি বলে তাহাকে পাগল করিয়া দেন। তর্কালঙ্কার এই সংবাদ পাইয়া শিষ্যালয়ে যাত্রা করেন। পথে দৈববশতঃ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে তাহার দেখা হইলে শ্লেষভাবে তিনি বলিলেন—“ভাল ব্রহ্মচারিন! ভাল ব্রহ্মবিদ্যাই প্রকাশ করিয়াচ্চ।” এতৎ শ্ৰবণে ব্রহ্মচারী কোপে জ্বলিয়া উঠিলেন ও ভূমে পড়িয়া তৃণগুচ্ছ মুখে দিয়া তাহাকে অভিশাপ দিতে লাগিলেন। তর্কালঙ্কার সে দিকে দৃকপাত না করিয়া শিষ্যগৃহে উপনীত হইলেন ও বিবিধ প্রক্রিয়া এবং ঔষধ বলে শিষ্যকে আরোগ্য করিলেন । এদিকে সেই ব্রহ্মচারী প্রকৃতই পাগলবৎ তৃণ ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। কাশীনাথের আত্মীয় স্বজন এতদৃষ্টে ভীত হইয়া তর্কালঙ্কারের শরণাপন্ন হইলে, ইহাকেও তিনি বিবিধ প্রক্রিয়াতে সুস্থ করিলেন। জীব হিংসন মহাপাপ, ইহাতে অৰ্জ্জিত জ্ঞান আচ্ছাদিত হইয়া পড়ে এবং শিক্ষিত বিদ্যার হানি হয় ও নিজেরই মন্দ হইয়া থাকে; ব্রহ্মচারী এই উপদেশ দিয়া তিনি বিদায় দিলেন । এখন বিবেচ্য-ব্রহ্মচারীর উন্মত্ততা তাহার, চিত্তবিকৃতি, না শিরোমণির মন্ত্ৰ-শক্তি-সঞ্জাত? ইহা যে মন্ত্রশক্তির প্রভাব নহে, তাহা তাহার উপদেশ বাক্য দ্বারাই প্রতিপন্ন হয়। যিনি পরহিংসা নিন্দনীয় বলিয়া উপদেশ দেন, তাহার তাহাতে লিপ্ত হওয়া সম্ভব নহে। শ্ৰীমন্মধুকর মিশ্রের প্রপৌত্র শ্রীকরের সন্তানই বুরুঙ্গার ভট্টাচাৰ্য বংশ ১৬ তাহার ২য় ও ৩য় প্রপৌত্র ইন্দ্রকর ও দুর্গাবরের বংশীয়গণ বুরুঙ্গাতেই চক্রবত্তী আখ্যাধারণে বাস করিতেছেন ॥১৭ ফলতঃ হিংসকের দণ্ডবিধান ভগবানই করিয়া থাকেন । ১৬. ক পরিশিষ্টে বংশাবলী দ্রষ্টব্য । ১৭. এই দুই ভ্রাতার বংশাবলী অতি বিস্তৃত বিধায় পরিশিষ্টে কেবল এক একটি ধারা মাত্র প্রদর্শিত হইয়াছে।