পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ গেল না, তিনি অদৃশ্য হইয়া পড়িলেন। তদবধি সেই বৃক্ষ সকলের নিকট পূজিত হইতে লাগিল। অনেক পরে একদা এক ব্যক্তি সেই বৃক্ষে একটা অশ্ব বাধিয়া খাইতে দিয়াছিলেন। দড়ির টানে গাছের ছাল উঠিয়া গিয়াছিল এবং কথিত আছে যে তাহা হইতে রক্তের ন্যায় নিৰ্যাস বাহির হইয়াছিল। কালক্রমে বৃক্ষটি ভাঙ্গিয়া যায় এবং তাহার মূলের মৃত্তিকা হইতে একটি কদম্ববৃক্ষ জাত হয়, এই বৃক্ষটিও বটবৃক্ষের ন্যায় লোকের মান্য হইয়াছে ও হরিঠাকুরের গাছ বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। হরিশরণ সেন মজুমদার 理 তুঙ্গেশ্বরের মজুমদার বংশে ১৬৭৯ শকাব্দের ১৭ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে মহাত্মা হরিশরণ সেন জন্মগ্রহণ করেন। ভূমিষ্ঠের পরে তাহাকে মূচ্ছিত দেখা গেল—জীবনের যেন কোন চিহ্নই নেই; তখন পিতা রামেশ্বর সুতিকা গৃহে গিয়া উপস্থিত হইলেন, কিছুকাল মধ্যে র্তাহার ক্রোড়ে শিশু চেতনালাভে ক্ৰন্দন করিয়া উঠিল। এই শিশু কালক্রমে এক অতি বিখ্যাত ব্যক্তি হইয়া উঠেন। হরিশরণ সেন দেশবাসী সকলের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন; তাহার গুণগ্রামে দেশের তাবৎ লোকই তাহার অনুগত ছিল। তিনি যোগশাস্ত্রের আলোচনায় পারদর্শিতা লাভ করেন ও যোগসিদ্ধ পুরুষরূপে পরিগণিত হন। তাহার ধৈর্য্য ও গাম্ভীৰ্য্য, ত্যাগ ও বিরাগ, সদাচার ও স্বধৰ্ম্মনিষ্ঠা, সকলই আদর্শ স্থানীয় ছিল । সুখ বা দুঃখ, সম্মিলন বা বিয়োগ, কিছুতেই তাহাকে অভিভূত করিতে পারিত না। মৃত্যুকে দেহ পরিবর্তন বই তিনি কিছুই মনে করিতেন না। অনেকেই গ্রন্থপাঠে তাহা জানিলেও উপলব্ধি করিতে পারে না, তাহার তদ্রুপ ছিল না। তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র শম্ভুচন্দ্র মৃত্যুর করালগ্রাসে পড়িয়া যখন এ জগতের সহ শেষ বিদায় লইতেছিলেন, ইষ্টধ্যান মায়িক লোকে শুনিলে আশ্চর্য হই। এই সময় এক উদাসীন অতিথি তাহার গৃহে উপস্থিত হইলে, বরং তিনি অতিথি সৎকারেই রত হইয়াছিলেন। কিন্তু শোকের কোলে ঢলিয়া পড়েন নাই। দেবদ্বিজে তিনি পরম ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। নম্রতাই মহদ্বংশের ভূষণ ও লক্ষণ; কোন ব্রাহ্মণ অবজ্ঞা সহকারে "দাস" সম্বোধন করিলে, কেহ সে কথা কিঞ্চিৎ দুঃখের সহিত তাহাকে জানান; তৎশ্রবণে তিনি বলিয়াছিলেন, “হরিশরণ দাস, ব্রাহ্মণের দাস; বাজারে ঢোল পিটিয়া একথা সকলে ঘোষণা কর।” একদা পুটিজুরীবাসী জনৈক ব্রাহ্মণ চম্পক বৃক্ষারোহণে পুস্পচয়ন করিতে ছিলেন, সুন্দর সুপুষ্ট ফুল। ব্রাহ্মণের মনে হইল, এই ফুলগুলি পরম সাধক “মহাশয়কে"-হরিশরণ মহাশয় উপনামে খ্যাত ছিলেন,—দিলেই উপযুক্ত হয়। কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ-চিত ফুল ব্রাহ্মণেতরকে কিরূপে দিবেন? এইভাব মনে হইলে তিনি, মহাশয়কে ফুল দিবেন না বলিয়াই মনে করিলেন। দৈবাৎ সেই সময় তিনি ভূপতিত হইলেন। ব্রাহ্মণের জ্ঞানচক্ষু তখন ফুটিল, বুঝিলেন যে তাহার এই ভূপতন মহতের অবজ্ঞার প্রত্যক্ষ ফল। ইহা মনে করিয়াই ব্রাহ্মণ ফুল লইয়া মহাশয়কে দিতে চলিলেন। ব্রাহ্মণ ফুল সহ সেন মহাশয়ের সকাশে বিরস বদনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তিনি বলিলেন “ঠাকুর নীচ জাতির ব্যবহারের জন্য,—আপনি ব্রাহ্মণ, কেন ফুল দিতেছেন?” ভৃত্যকে বলিলেন “এই ব্রাহ্মণকে সত্বর নববস্ত্র প্রদান কর, বৃক্ষ হইতে পড়িয়া ব্রাহ্মণের কাপড় ছিড়িয়া গিয়াছে।" ব্রাহ্মণ যে বৃক্ষ হইতে পতিত হইয়াছিলেন, তাহ কেহ দেখে নাই এবং তাহার পরিহিত বস্ত্রও যে ছিন্ন হইয়াছে, ইহাও অজ্ঞাত ছিল; কিন্তু পরে দেখা গেল যে মহাশয়ের কথাই সত্য। পরম