পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫৫ সাধক সেন মহাশয় ব্রাহ্মণের মনের কথা জানিতে পারিয়াছেন দেখিয়া ব্রাহ্মণ যেমন লজ্জিত হইলেন, তেমনি চমকিত হইয়া গেলেন। একদা এক ধনী তাহাকে অবজ্ঞাপূৰ্ব্বক তাহার ধানক্ষেত্র মৰ্দ্দন করিয়া স্বগীয় পূজার ভাসান লইয়া যাইতেছিল, সেন মহাশয় তৎশ্রবণে কিছুই প্রতীকার করিলেন না। এদিকে হঠাৎ অগ্নিসংযোগে সেই ধনীর গৃহাদি সমুদয় সম্পত্তি সহ ভস্মসাৎ হইল। মহৎ ব্যক্তির লঙ্ঘনে এতাদৃশ প্রতিফল দৈব কর্তৃকই প্রদত্ত হইয়া থাকে। প্রসিদ্ধ রাজা রাজবল্লভের উত্তরাধিকারী অংশীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়া বিবাদ উপস্থিত হইলে, যখন অনেকেই ইহা মীমাংসায় অসমর্থ হন, তখন তাহাকে উভয় পক্ষই হরিশরণ সেনের মধ্যস্থতায় আপোষ হইয়াছিল এবং পারিতোষিকস্বরূপ এক খানা ঢাল পূর্ণ টাকা প্রদান করা হয়; কিন্তু তিনি শিষ্টাচারের সহিত তাহা গ্রহণ করেন নাই। হরিশরণ সেন মজুমদার ধৰ্ম্মাত্মা ও মহাত্মা ছিলেন, এই জন্যই সাধারণ্যে তাহার “মহাশয়" উপনাম হয়। “মহাশয়" বলিলে আজও লোকে হরিশরণ সেনকে বুঝিয়া থাকে। “মহাশয়ের বাড়ী" বলিলে তরফের তুঙ্গেশ্বরের মজুমদার মহাশয়ের প্রভাবের কম নিদর্শন নহে। হরিচরণ সেন মজুমদার মহাশয়ের প্রভাবের কম নিদর্শন নহে। হরিচরণ সেন মজুমদার ৮৬ বৎসর বয়ঃক্রমে ১৭৬৫ শকে সজ্ঞানে মৃত্যুমুখে পতিত হন। হারু দরবেশ খুরসেদপুর নামক গ্রামে হারুর জন্ম; ইহার সম্বন্ধে শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী আমাদিগকে যাহা লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, তাহাই এস্থলে পাঠকবর্গকে উপহার দিয়া বিদায় লইব । “বেগমপুরের পশ্চিমে নাড়িকা নদীর পশ্চিম পারে, বাণাই হাওরের ঠিক পূৰ্ব্বতটে হিজল গাছের একটি বাগান বা সুন্দর কুঞ্জ আছে, ইহাই প্রসিদ্ধ পাচ পীরের মোকাম। একসময়ে পাঁচজন ফকির লোকহিতার্থে এই মোকাম স্থাপন করেন। বৃক্ষগুলি তাঁহাদেরই হস্তরোপিত। তাহারা দরবেশ ছিলেন, কে হিন্দু, কে মোসলমান জানিবার উপায় নাই। নদীয়া জেলার পাগলা কানাই ও পাগল শাহা প্রসিদ্ধ দরবেশ ছিলেন, পানাউল্লা, হারু প্রভৃতি তাহাদের অসংখ্য শিষ্য ছিল। ইহাদিগকে যাহারা দেখিয়াছেন, তাহারা দরবেশ কি পদার্থ তাহা বুঝিবেন।” “হারু স্বগীয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাকরান ভোগী বেহারা ছিল, শেষ বয়সে দরবেশ হইয়াছিল। পাচ হাত লম্বা পুরুষ মাথায় দীর্ঘ জটা। হরিনাম শুনিবার অবসর পাইলে হারুর আহার নিদ্রা থাকিত না। দক্ষিণ হস্তের তজ্জনী উদ্ধে তুলিয়া হারু যখন মালসী গান ধরিত, তখন ঝর ঝর করিয়া তাহার অশ্রুপাত হইত, শ্রোতাদেরও হৃদয় গলিত।" “পাচপীরের মোকামের পীরেরাও সেই জাতীয় ছিলেন। পাচজনে মিলিয়া কেহ ভিক্ষা করিতেছেন, কেহ বিপন্নকে উদ্ধার করিতেছেন, কেহ অতিথি সৎকার করিতেছেন, এই তাহাদের কৰ্ম্ম, এই তাঁহাদের ধৰ্ম্ম, এই তাহাদের সাধন ছিল। বিপন্ন কিরূপ, তাহা বলিতেছি।” "মিল্লিক দাওরাই প্রভৃতি গ্রাম তখন বসে নাই। পশ্চিমে আতুয়াজান, দক্ষিণে আগনা, সুনাইতা প্রভৃতি, পূৰ্ব্বে অরঙ্গপুর বেগমপুর, করণশী ও দুলালী, উত্তরে বনভাগ প্রভৃতি, এই বিস্তীর্ণ সীমার মধ্যে একটি মাত্র হাওর এবং তাহাতে বড়দই প্রভৃতি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বিল ছিল। এই হাওরে ডাকাতির কথা কখনও শুনা যায় নাই, কিন্তু বর্ষাকালে নৌকাযাত্রীরা পথ হারাইয়া বিষম বিপন্ন হইত; অনেক নৌকা মারাও যাইত। ইহাদিগকে রক্ষা করিবার জন্যই উক্ত পাচ