পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ করিয়া সকলকে বিব্রত করেন। শেষটা অতিথি নিমাইকে বালগোপাল মনে করিয়া, তাহার উচ্ছিষ্টান্নই আহার করেন।১ শুচিবাই ছিল, তিনি পুত্রকে অশুচিস্থানে দেখিয়া হায় হায় করিয়া উঠিলেন। এই সময় বালক তাহাকে বলিয়া উঠিল—“মা! সৰ্ব্বত্রই হরি আছেন, কোন স্থান অপবিত্র?” শচী আশ্চর্যান্বিত হইলেন, হয়তঃ ভাবিলেন যে নিমাইকে কেহ এই ব্ৰহ্মজ্ঞানের কথা শিখাইয়া দিয়াছে; তারপর মাতা উত্যক্ত হইতেছেন দেখিয়া নিমাই তথা হইতে চলিয়া আসিলেন । বাল্যলীলা নিমাইদের বাড়ীব কাছে জগদীশ পণ্ডিতের বাড়ী ছিল, জগদীশের পূৰ্ব্ব নিবাস “বঙ্গদেশে’ (সম্ভবতঃ শ্রীহট্টে) ছিল ২ নিমাই এক একাদশী দিনে হঠ ধরিলেন যে, জগদীশ পণ্ডিত বিষ্ণুর জন্য যে নৈবেদ্য প্রস্তুত করিয়াছেন, তিনি তাহাই খাইবেন । নিমাইকে কত প্রকারে বুঝান গেল, নিমাই মানিলেন না, কোন প্রকারেই তাহার ক্ৰন্দন থামিল না, সেদিন ক্ৰন্দন বারণের মহাস্ত্র হরিনামও ব্যর্থ হইল। এমন সময় তাহার মনে হইল যে এই বালকের দেহে গোপাল বিরাজ করিতেছেন, আর অমনি তিনি দেবতার জন্য প্রস্তুত নৈবেদ্য আনিয়া নিমাইকে দিলেন। একদিন একটা চোর নিমাইর অঙ্গে অলঙ্কার দেখিতে পাইয়া “সন্দেশ দিব” বলিয়া তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া যায়। কিছুদূর যাইতে যাইতে চোরের মনের মন্দভাব চলিয়া গেল, এবং সে মোহবশে ঘুরিয়া ফিরিয়া নিমাইর বাড়ীতে আসিল ও তাহাকে রাখিয়া চলিয়া গেল । শ্রীহট্টবাসী মুরারির গৃহ নিমাইদের বাড়ীর পাশ্বেই ছিল, মুরারি গুপ্ত নবদ্বীপে পড়িতেন। তিনি অধ্যাত্মচৰ্চা বড় ভালবাসিতেন। একদিন নিমাই তাহাকে বড়ই বিরক্ত করিয়াছিলেন; মুরারি গুপ্তের জীবন-কথা-প্রসঙ্গে ইতিপূৰ্ব্বে তাহা বলা হইয়াছে। অদ্বৈতার্যের কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি। অদ্বৈতাচাৰ্য যখন নবদ্বীপে রহিতেন, নিমাইর অগ্রজ বিশ্বরূপ প্রায়শঃ তাহার কাছে গিয়া ভক্তিশাস্ত্রের আলোচনা করিতেন। শচীদেবী খাওয়ার জন্য তাহাকে ডাকিয়া আনিতে কখন কখন নিমাইকে পাঠাইতেন। নিমাই যখনই অদ্বৈতের “বৈষ্ণব সভায়” যাইতেন, অদ্বৈতের হৃদয় তখন যেন পূর্ণ হইয়া উঠিত। তিনি ভাবিতেন এ বালককে দেখিলে মন এমন করে কেন? সংসারে কথা ভুলিয়া মন কেন এক অজানা দেশে চলিয়া যায়? অদ্বৈতের কত কথাই মনে হইত, আতুড় ঘরে যখন সন্ত্রীক আচাৰ্য্য শিশু-নিমাইকে দর্শন করেন, তখন হইতেই তাহার মনে এই ভাবের উদয় হয়; অদ্বৈত ভাবিতেন “ইনিই কি তিনি?” ফলে নিমাইকে তিনি প্রাণাধিক ভালবাসিতেন । নিমাই পাড়ার বালকদল লইয়া বাড়ীর ধারে পথে গিয়া কখন কখন নাচিতেন ও গান গাইতেন। কখন কখন ইহাতে বড়ই রঙ্গ হইত, দেখিতে পথের লোক কখন কখন দাড়াইত ও কি জানি কি মোহবশে অজ্ঞাতভাবে তাহারাও বালকের সহিত নৃত্য যুড়িয়া দিত। পরে অন্য নূতন পথিক লোক দেখিলে তাহাদের চমক ভাঙ্গিত—জ্ঞান হইত ও তখন তাহারা লজ্জিত হইয়া তাড়াতাড়ি তথা হইতে পলাইয়া যাইত। এই সময়ে নিমাইর বয়স ছয় বৎসরের বেশী ছিল না, ১. ৪র্থ ভাগে সভ্যভানুর বিবরণ দেখুন। ২. ১৩২০ বাং আষাঢ় সংখ্যা আসাম বান্ধব পত্রিকায় এই জগদীশ ভট্টের জন্মস্থান “পূৰ্ব্বদেশ” কামরূপ ছিল বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে।