পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫৯ জগন্নাথ মিশ্র এই সময় বিশ্বরূপকে বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেন। বিশ্বরূপ তাহা জানতে পারিয়া নিজ মামাত ভাই লোকনাথকে সঙ্গে লইয়া একদা রাত্রিযোগে পলায়ন করিয়া যান,৩ ও শীঘ্রই উভয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। নিমাই ভ্রাতৃবিরহে বড় ম্ৰিয়মাণ হইয়া পড়েন। তথাপি মাতার ক্ৰন্দন দেখিয়া বালক যখন বলিয়াছিল “মা, আমি ত তোমার রহিলাম, দাদার জন্য তুমি কাদিওনা ।” তখন যথার্থই মাতাপিতার দুঃখ দূর হইয়াছিল। জগন্নাথ মিশ্র স্থির হইয়া, পুত্র বিশ্বরূপ যে পথে গিয়াছেন, সে পথ হইতে যেন প্রত্যাবৃত্ত না হন, যেন ধৰ্ম্ম নষ্ট করিয়া গৃহে না ফিরেন, এইজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিলেন ধৰ্ম্মপ্রাণ এমন পিতামাতা নহিলে নিমাইর ন্যায় পুত্র জন্মেন না। - নিমাইর যথাকালে উপনয়ন হয়, তাহার পর জুররোগে জগন্নাথ মিশ্রের পরলোক গমন ঘটে। নিমাই যথারীতি বাপের শ্ৰাদ্ধ করেন। এই সময় হইতে নিমাই কিছু গম্ভীর হন, চঞ্চল বালকদল সহ আর খেলিয়া বেড়াইতেন না। অধ্যয়নাদি জ্ঞানোলোচনার ফলে বিশ্বরূপ সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়াছেন, এই মনে করিয়া জগন্নাথ মিশ্র ভয়ে নিমাইর পাঠ বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। পতির মৃত্যুর পর শচীদেবী পুত্রকে পুনরায় টোলে পাঠাইয়া দেন । গঙ্গাদাস আচার্য্য নামক পণ্ডিতের কাছে নিমাই সাহিত্য ও ব্যাকরণ শিক্ষা করেন। তৎপরে আপনাদের পুরোহিত বিষ্ণু মিশ্রের নিকট স্মৃতি ও জ্যোতির শাস্ত্র পাঠ করেন। তাহার পর সুদর্শন পাণ্ডিতের নিকট দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন; দুই বৎসরে তাহার ইহা সমাপ্তি হয়। তাহার পর অল্প কিছু কাল ন্যায় শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। নবদ্বীপের বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌম মিথিলায় ন্যায় অধ্যয়ন করিয়া নবদ্বীপে আসিয়া ন্যায়ের এক টোল স্থাপন করেন; সাৰ্ব্বভৌমের টোলে শ্রীহট্টবাসী রঘুনাথ, রঘুনন্দন প্রভৃতি পড়িতেন, নিমাইও অল্পদিনমাত্র পড়িয়াছিলেন। নিমাই ন্যায় অধ্যয়ন কালে ন্যায়ের এক টীকা লখিয়াছিলেন, রঘুনাথও ঐ সময় তাহার প্রসিদ্ধ ন্যায়-গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। রঘুনাথ নিমাইর প্রতিভার পরিচয় পাইয়াছিলেন। তিনি নিমাইর গ্রন্থ রচনার সংবাদে চিন্তিত হন ও একদিন গঙ্গাপার হইবার কালে নিমাইর উক্ত গ্রন্থের দুই একটি সিদ্ধান্ত শুনিয়া যেমন বিক্ষিত হন, নিজ গ্রন্থের আর প্রসিদ্ধির আশা নাই ভাবিয়া তেমনি বিষাদিত হন। রঘুনাথের এইভাব দর্শনে নিমাই দয়াৰ্দচিত্তে নিজ গ্রন্থ গঙ্গায় বিসৰ্জ্জন করেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ ২য় বাঃ ২য় খঃ ৭ম অধ্যায়ে তাহা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। রঘুনাথের কীৰ্ত্তিকথাও পূৰ্ব্বাংশে যথাস্থানে বর্ণন করিয়াছি। অদ্বৈতাচার্য্যের কথা বলিয়াছি, অদ্বৈতের কাছে নিমাই কিছুদিন বেদ পাঠ করেন। পূৰ্ব্ব হইতেই অদ্বৈত নিমাইকে জানিতেন, এক্ষণে তাহার তীক্ষ্মবুদ্ধি ও ধীশক্তির পরিচয় পাইয়া তিনি বিস্থিত হইলেন, নিমাই দৃষ্টিমাত্র পাঠ আয়ত্ত করিয়া লন; বোধ হইত যে বিদ্যাশিক্ষা নিমাইর একটা অভিনয় মাত্র, সমস্তই যেন তাহার পূৰ্ব্বের অধীত। ফলে অত্যয় কাল মধ্যেই নিমাই বেদে ব্যুৎপত্তি লাভক্রমে “বিদ্যাসাগর" উপাধি প্রাপ্ত গৃহে আগমন করেন। এই সনন্দে তাহার বয়স ষোল বৎসরের অধিক ছিল না। ৩. "ইচ্ছামাত্র লোকনাথ আসিয়া মিলিল । ফলে নিয়া বিশ্বরূপ দক্ষিণ দেশ গেল॥—প্রেম বিলাস ।