পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ আর যন্ত্রণাভোগ করিতে হইল না, বিরহই যেন সৰ্পরূপ ধরিয়া তাহাদের দংশন করিল, লক্ষ্মীদেবী দেহত্যাগ করিলেন। একে পুত্রের অদর্শন জনিত জ্বালা, তাহাতে প্রাণ সমা বধুর বিয়োগ, বৃদ্ধা শচী একান্ত ব্যাকুলচিত্তে বিলাপ করিতে লাগিলেন। জননীর রোদনে দূরে—অতি দূরে থাকিলেও নিমাইর অন্তর কাপিয়া উঠিল, তিনি সত্বর পূৰ্ব্ববঙ্গ পরিত্যাগ করিয়া নবদ্বীপে চলিলেন।১২ এই সময়ে তপন মিশ্র নামক এক বিপ্র তাহার কাছে গিয়া সাধ্য সাধন জিজ্ঞাসা করিলে, নিমাই তাহাকে হরিনাম গ্রহণ করিতে উপদেশ দিয়া কাশী যাইতে বলেন। বৃদ্ধ তপন মিশ্র দ্বিরুক্তি না করিয়া ভাৰ্য্যার সহিত কাশীগমন করিয়াছিলেন । এই তপন মিশ্রকে শ্রীহট্টবাসী বলিয়া অনেকেই অনুমান করেন; লাউড়ে ইহার নিবাস ছিল, এবং তথায় ঐ বংশ থাকার কথা শুনা গিয়া থাকে।১৩ এই সময়ে আরো এক ব্যক্তি এইরূপেই শ্ৰীমহাপ্রভুর একান্ত ভক্ত হইয়া উঠেন ইহার নাম জগন্নাথ আচাৰ্য্য ছিল।১৪ পুনঃ নবদ্বীপ শ্ৰীমহাপ্রভু নবদ্বীপে পৌছিয়া একটু বিশ্রামান্তরই মাকে প্রবোধ দেন। মা পুত্রমুখ দর্শনে ও তাহার মুখে তত্ত্বকথা শুনিয়া বিগত ক্লেশ হইলেন, তাহার পরে শ্ৰীমহাপ্রভু সশিষ্য গঙ্গামানে গমন করেন, স্নানান্তে আহারাদি করিয়া প্রতিবেশীবর্গ সহ সম্মিতি হন। অনেক কথাবাৰ্ত্তার হাসিয়া হাসিয়া বঙ্গদেশী লোকদিগকে তাহাদের দেশীয় কথার অনুকরণে কথা বলিয়া হাস্যামোদ করিয়াছিলেন; যথা—চৈতন্য ভাগবতেঃ– “বঙ্গদেশী বাক্য অনুকরণ করিয়া । বাঙ্গালেরে কদর্থেন হাসিয়া হাসিয়া৷” কিন্তু ব্যঙ্গের মাত্রাটা শ্রীহট্টবাসিগণের প্রতি অধিক ছিল, যথা তত্ৰৈব— “বিশেষ চালেন প্ৰভু দেখি শ্রীহট্টীয়া । কদর্থেন সেই মত বচন বলিয়া৷ ক্রোধে শ্রীহট্টীয়গণ বলে হয় হয় । তুমি কোন দেশীলোক কহত নিশ্চয়?” ইত্যাদি শ্ৰীগৌরাঙ্গ পূৰ্ব্ববঙ্গ হইতে আসিয়া এই রঙ্গ আরম্ভ করেন। শ্রীহট্টাদি অঞ্চলের কথা শিখিয়া গিয়া, তদনুকরণে তাহাদিগকে বিদ্রুপ করিলে, তাহারা যে বড় উত্যক্ত হইত, তাহা নহে কেননা তিনি স্বয়ংই শ্রীহট্টীয়ার সন্তান, এই কথাটি তাহারা তাহাকে স্মরণ করাইয়া দিতেও ভুলিত না; তাহারা নিমাইকে এ সম্বন্ধে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করিয়া ঠেকাইত ॥১৫ স্বদেশীয় ভক্তগণসহ শ্ৰীমহাপ্ৰভু যে এসব রঙ্গ করিতেন, তাহা এক্ষণে শুনতে বড়ই সুখ বোধ হয়, তাই একটু বিস্তৃত ভাবে বলিলাম। ১২. এইবারে শ্ৰীমহাপ্ৰভু ঢাকাদক্ষিণে পিতামহগৃহে গমন করেন নাই, প্রপিতামহালয় বুরুঙ্গাতে পিতামহ ও পিতামহীকে প্রাপ্ত হওয়াতে ঢাকাদক্ষিণে যাওয়ার আবশ্যক হয় নাই, এ স্থান হইতেই প্রত্যাবৰ্ত্তন কবেন। বধুবিয়োগ-বিধুরা জননী শচীদেবীর উদ্বেগসূত্রে এস্থানে তাহার হৃদয়ে চঞ্চলতা জনে এবং তাহাতেই তাড়াতাড়ি তথা হইতে চলিয়া যান। ১৩. শ্ৰীযুক্ত চৈতন্যচরণ দাস প্রকাশিত শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যেদয়াবলী গ্রন্থের ভূমিকা দ্রষ্টব্য। ১৪. “জগন্নাথ আচাৰ্য্য দুৰ্ব্বাসা মহামতি । চৈতন্যের শাখা যার শ্রীহট্টে বসতি॥”—বৈষ্ণবাচার দর্শন । ১৫. “পিতা মাতা আদি করি যতেক তোমার । বল দেখি শ্রীহট্টে না হয় জন্ম কার?" —চৈতন্য ভাগবত ।