পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৭ সোণারচাদের কোন অনিষ্ট না ঘটে।" এই ভাবিয়া পুত্র-স্নেহ-কাতরা জননী গোপনে আপন পুত্রের কাছে সেই বৃত্তান্তটি বলিলেন– যেরূপ তাহাকে ঢাকাদক্ষিণে পাঠাইতে পূৰ্ব্বে শাশুড়ী—সদনে প্রতিশ্রুত হন,১৯ এবং তা তৎকালে পর্যন্ত বলেন নাই, ইহা জানাইলেন, ও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য পুত্রকে অনুরোধ করিলেন। তখন নিমাই মাতৃ ইচ্ছায়, তথা হইতে পুনৰ্ব্বার শ্রীহট্টে গমন করেন ২০ ঢাকাদক্ষিণ গমন তিনি প্রথমতঃ বুরুঙ্গায় গিয়া, পরদিন ঢাকাদক্ষিণে সন্ধ্যার সময় উপস্থিত হইয়া, পিতামহীর মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছিলেন, পিতামহীর সহিত সম্মিলিত হইয়া ছিলেন। আমরা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের এই অংশে ৩য় ভাগ ১ম খণ্ড ২য় অধ্যায়ে বুরুঙ্গার কথা এবং ৩য় অধ্যায়ে ঢাকাদক্ষিণের কথা বিস্তারিতভাবে বলিয়াছি।২১ কৃপাপরায়ণ পাঠক এই উপলক্ষে তাহা পুনৰ্ব্বার দেখিয়া লইলে ভাল হয় । শ্ৰীমহাপ্রভু ঢাকাদক্ষিণে আগমন করিলে, তৎসহ এদেশের রামদাস, মাধব ও জ্ঞানবর, কল্যানবর প্রভৃতি অনেক ভক্ত আসিয়া সম্মিলিত হন, ইহাদিগকে তিনি স্থানে স্থানে প্রচারকার্য্যে ১৯. "তব পিতামহী আছে একপ প্রতিজ্ঞা আছে, তোমাকে পাঠাতে তার ঠাই । তথা যেয়ে একবাব, বাঞ্ছাপূর্ণ কর তাব তব কাছে এই ভিক্ষা চাই৷” –শ্রীচৈতন্য বিলাস । ২০. ঢাকাদক্ষিণে আগমন সময়ে সন্ন্যাসী শ্রীচৈতন্যের সহিত তদীয মাতুল বিষ্ণুদাস আসিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। শ্রীচৈতন্যের সন্ন্যাস দৃষ্টে ইহার মনে নিৰ্ব্বেদ উপস্থিত হয এবং তিনিও সন্ন্যাস গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন। সন্ন্যাসের পর শ্রীচৈতন্য আহারান্তে হরীতকী চৰ্ব্বণ করিতেন, বিষ্ণুদাস তাহা যুগাইতেন। পূৰ্ব্ববঙ্গে--মুখডোবায় উপস্থিত হইলে শ্রীচৈতন্যদেব হরীতকী প্রাপ্ত হইবাব কাৰণ জিজ্ঞাসিলে বিষ্ণুদাস বলেন যে পূৰ্ব্বদিনে উহা পাইয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু তখন বলেন যে “আপনি এইখানেই থাকিযা সংসার ধৰ্ম্ম করুণ, আপনার সঞ্চয়তৃষ্ণা তিৰোহিত হয় নাই।" শ্রীচৈতন্যের আদেশে বিষ্ণুদাস ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন ও সেই স্থানে থাকিয়া বিবাহ করিলেন। সেই হইতে বিষ্ণুদাসের বংশতরু পূৰ্ব্ববঙ্গে মুখডোবায় রোপিত হয় ও এ পর্যন্ত উহা তথায়ই পল্লবিত হইতেছে । এই আখ্যায়িকা তাহারাই প্রচার করেন। ২১. শ্ৰীমহাপ্রভু স্বীয় পিতামহী শোভাদেবীর সহিত ঢাকাদক্ষিণে সম্মিলিত হয় । শ্ৰীমহাপ্রভুর পিতামহীর নাম কোথায়ও শোভাদেবী, কোন গ্রন্থে কলাবতী, কোন গ্রন্থে বা কমলাবতী বলিযা লিখিত । আমরা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাগ ১ম খণ্ড ১ম অধ্যায়ের একটি টীকায দেখাইয়াছি যে উপেন্দ্র মিশ্র ও তৎপিতা মধুকর মিশ্র বিভিন্নগ্রন্থে বিভিন্ন নামে উল্লেখিত হইযাছেন, তদবস্থায় উপেন্দ্ৰ-পত্নীব নাম সম্বন্ধে তদ্রুপ না থাকিলেই আশ্চর্য্যের কথা হইত, বস্তুতঃ উপেন্দ্রপত্নীর একাধিক নাম থাকাই সম্ভব। শ্ৰীমহাপ্রভুর পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণোপলক্ষে পিতামহ ও পিতামহীর সহিত মিলন প্রসঙ্গ ও উভয়ের নিত্যধামে গমনের সংবাদ প্রেমবিলাসে লিখিত হইয়াছে; পতি-পত্নী এক সময়েই নিত্যধামে গমন করেন নাই; করিলে ঢাকাদক্ষিণে শ্ৰীমহাপ্রভুর পিতামহী সম্মিলন ঘটিবে কিরূপে প্রাচীন গ্রন্থ পত্রের রচনা অনেক স্থানে জটিল, প্রেম বিলাসে সেই জটিলতা অত্যধিক । [অনুরাগবল্লী নামক প্রাচীন গ্রন্থ শ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকায় আমাদের “প্রেমবিলাস গ্রন্থ" প্রবন্ধ এবং বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থ দেখ ] প্রেমবিলাসে সংক্ষিপ্ত ভাবে এক স্থানে (শ্ৰীগৌরাঙ্গ সম্মিলন ও তদনন্তর পতিপত্নীর পরলোক গমন) দুই বিভিন্ন কালেব ঘটনা একত্রে বর্ণিত হওয়ায় জটিলতা বৰ্দ্ধিত হইয়াছে। ফলতঃ পৌত্রের সম্মুখে এক সঙ্গে পিতামহ ও পিতামহী পরলোক গমন করেন নাই। তখন কেবল উপেন্দ্র মিশ্ৰই পরলোক গত হন । তিনি সন্ন্যাসেব পূৰ্ব্বে এবং তৎপত্নী সন্ন্যাসের পরে ঢাকাদক্ষিণে পরলোক গমন করেন । প্রেমবিলাসে একস্থানে উভয় Tটনা বর্ণিত হইয়াছে মাত্র । শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যেদয়াবলী গ্রন্থে সন্ন্যাসের পরবর্তী আগমন বর্ণনই উদ্দেশ্য বলিয়া তদীয় প্রথমবারের শ্রীহট্টাগমন কীৰ্ত্তিত হয় নাই ।