পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড কিছুদিন পরে তিনি শচীর বিবাহের জন্য চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। এই সময় শ্রীহট্টবাসী জগন্নাথমিশ্র নামক এক যুবকের গুণের কথা তাহার শ্রুতিগত হয়। জগন্নাথ পুরন্দরের কথা বলিয়াছি যে জগন্নাথমিশ্র স্বীয় পিতা কর্তৃক অধ্যয়নার্থ নবদ্বীপে প্রেরিত হন। জগন্নাথ প্রতিভাশালী সুন্দর যুবক, তাহার চরিত্র-গৌরবে নবদ্বীপের তাবৎ লোক মোহিত হইয়াছিল, অল্পকাল মধ্যেই জগন্নাথ বিবিধ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তৎকালে নবদ্বীপ বিদ্যাগৌরবে ও নানাদেশীয় পণ্ডিত সমাগমে বঙ্গ-বিখ্যাত ছিল, সেই নবদ্বীপে জগন্নাথ খ্যাতি লাভ করিলে, অধ্যাপক তুষ্ট হইয়া তাহাকে “পুরন্দন" পদবি প্রদান করেন। উপাধি প্রাপ্তির পর জগন্নাথের যশ বিশেষ বিস্তৃত হয়, ইহকেই যোগ্যপাত্র বোধ করিয়া, নীলাম্বর চক্ৰবৰ্ত্ত বৈদিক-কুলভূষণ ঐ পুরন্দরের করে শচীকে সমর্পণ করিলেন। জগন্নাথমিশ্র নবদ্বীপের মায়াপুর নামক পল্লীতে অন্যান্য শ্রীহট্টবাসী বন্ধুবর্গের সহিত বাস করিতে লাগিলেন। ঐ পল্লীতে শ্ৰীবাস ও শ্রীরাম পণ্ডিত ও মুরারি গুপ্ত এবং চন্দ্রশেখর আচাৰ্য্যরত্ন প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী ব্যক্তিগণ ছিলেন;১১ নীলাম্বর চক্রবর্তী স্বীয় কনিষ্ঠা কন্যা সৰ্ব্বজয়াকে এই আচাৰ্য্যরত্বের করে পরে সমর্পণ করেন। জগন্নাথ মিশ্রের কথা প্রসঙ্গতঃ পূৰ্ব্বাংশেও১২ কথিত হইয়াছে। জগন্নাথ মায়াপুরে গৃহ নিৰ্ম্মাণ পূৰ্ব্বক সন্ত্রীক অবস্থিতি করিতে লাগিলেন, দেশে যাইবার ইচ্ছা নাই। কালক্রমে শচীদেবীর গর্ভে তথায় তাহার আটটি কন্যা জাত হয়, কিন্তু তাহাদের মধ্যে একটিও জীবিত রহে নাই; ইহাতে পতিপত্নী নিতান্তই দুঃখিত ছিলেন। তাহার পর তাহাদের বিশ্বরূপ নামে এক অপরূপ পুত্রের জন্ম হয়। বিশ্বরূপের তুলনা ছিল না, বিশ্বরূপ যখন দিন দিন চন্দ্রকলার ন্যায় বৃদ্ধি পাইতে লাগিলেন, সন্তান-কাঙ্গাল পিতামাতার মনের ক্ষোভ তখন অনেক পরিমাণে হ্রাস প্রাপ্ত হইল, উভয়েই উৎফুল্ল হইলেন। এদিকে বহুদিন যাবৎ জগন্নাথ মিশ্র নবদ্বীপে আছেন, বহুকাল তিনি দেশে যান নাই, তাই স্নেহময় পিতা উপেন্দ্রমিশ্র তাঁহাকে আহবান করিলেন। পথের দুর্গমতা প্রভৃতি বিবিধ কারণে জগন্নাথ মিশ্র দীর্ঘকাল দেশে না গেলেও, এখন পিতার আহবানে শচীপুরন্দরের নবদ্বীপের বাস ভাঙ্গিবার উপক্রম হইল; তাহারা উভয়েই শ্রীহট্ট যাওয়া সাব্যস্থ করিলেন। তাহাদের মনে হইল যে পিতৃসেবা বিরহিত হওয়ার অপরাধেই হয়তঃ তাহাদের পূৰ্ব্বজাত কন্যাগুলি অকালে কাল কবলিত হইয়াছে। তিনি পিতৃ-সন্নিধানে না থাকিয়া পিতামাতার অন্তরে যে যাতনা দিয়াছেন, সন্তান-বিরহে তাহাদিগকেও তদনুরূপ ক্লিষ্ট হইতে হইয়াছে; আর যেন তদ্রুপ না ঘটে, পিতামাতার আশীৰ্ব্বাদে তাহদের বিশ্বরূপ যেন বাচিয়া থাকে। ফলতঃ জগন্নাথ দেশে যাওয়ার প্রস্তাব শ্বশুর শাশুড়ীকে জ্ঞাপন করিলেন। নীলাম্বর চক্রবর্তী এই প্রস্তাবে অমত করিতে পারিলেন না, কিন্তু তৎপত্নী বিলাসিনী দেবী বিশ্বরূপকে ছাড়িয়া দিতে চাহিলেন না। বিশ্বরূপ তখন প্রায় আট বৎসরের বালক; মাতুল-তনয় লোকনাথের সহিত তিনি মাতামহ গৃহে একত্র থাকিয়া অধ্যয়ন করিতেন, তিনি নবদ্বীপে রহিলেন। বিশ্বরূপ শ্রীহট্টে আসেন নাই বলিয়া বোধ হয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলীতে তাহার উল্লেখ নাই । ১১. শ্রীচৈতন্য ভাগবত দেখ। পরবর্তী ৪র্থ ভাগে ইহাদের বৃত্তান্ত বর্ণিত হইবে। ১২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বংশ-২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৭ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য।